গলা খুসখুস দূর করার ১৫টি ঘরোয়া উপায় জেনে নিন

গলা খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো আসলেই অনেকটা ফলপ্রসূ৷ এটি সাধারণ একটি সমস্যা যা সর্দি ধুলাবালি এলার্জি বা ঠান্ডা জনিত কারণে হয়ে থাকে তবে এর ভোগান্তি অনেক বেশি।

গলা-খুসখুস-দূর-করার -ঘরোয়া-উপায়

গলায় খুসখুস ভাব হলে অস্বস্তি লাগে কথা বলতে কষ্ট হয় এবং ক্রমাগত কাশি হয়। যদিও এটি গুরুতর অসুস্থতা নয়, তবে সময় মত যত্ন না নিলে সমস্যা বাড়তে পারে। ঘরোয়া কিছু সহজ উপায় আছে যেগুলো ব্যবহার করে গলা খুসখুস অনেকটা কমানো যায় চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

পেজ সূচিপত্র: গলা খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায়

গলা খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায়

গলা খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায় হিসাবে আমরা বিভিন্ন পথ অবলম্বন করে থাকি। ঘরে থাকা সাধারন কিছু জিনিস দিয়ে এই অস্বস্তিকর সমস্যা হতে পরিত্রান পাওয়া যায় খুব সহজেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক কয়েকটি ঘরোয়া টিপস : 

  • গরম পানি ব্যবহার: গরম পানি পান করলে তা গলাকে আর্দ্র রাখতে এবং খসখুসে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও গরম পানির ভাপ নিলে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়। 
  • আদা: আদায় রয়েছে প্রদাহবিরোধী উপাদান যা গলার প্রদাহকে প্রশমন করতে অনেক সাহায্য করে। এক গ্লাস গরম পানিতে কিছু আদা কুচি ও লবণ যোগ করে ফুটিয়ে সেই পানি পান করুন এবং গার্গল করুন। খালি আদাও চিবিয়ে খাওয়া যায়। অথবা আদা চা খেতে পারেন। যেভাবেই খান না কেন আদা আপনার গলার খুসখুস দূর করতে কাজে দেবে।
  • লবন : এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবন মিশিয়ে গার্গল করুন। চেষ্টা করবেন একটু বেশি সময় গলার কাছে পানিটা ধরে রাখার। এটি গলার প্রদাহ কমিয়ে ভালো আরাম দেয়। দিনে বেশ কয়েকবার এটি করতে হবে। 
  • মধু : ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এটি গলার খুসখুসানি দূর করতে সাহায্য করবে। মধুতে আছে এন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা গলায় সংক্রমনকারী জীবানুকে ধ্বংস করে খুসখুসে কাশি দূর করে। তবে ১ বছরের কম বয়সের শিশুকে মধু দেওয়া উচিত নয়।
  • পুদিনা পাতা : পেপারমিন্ট জাতীয় ঔষধি উদ্ভিদের একটি প্রজাতি হলো পুদিনা। পুদিনা পাতায় থাকা মেনথল নামের উপাদান গলার অসাড় স্নায়ুকে শান্ত করে এবং গলার খুসখুসে অনুভূতি দূর করে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পুদিনা চা খেতে পারেন। এতে খুসখুসে কাশি দূর হবে এবং গলার অস্বস্তি ভালো হবে।
  • তুলসি: কাশির জন্য তুলসি পাতার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। গলার খুসখুস দূর করতে তুলসি পাতার রস গরম করে খেতে পারেন দিনে ২/৩ বার। তুলসি চা বা পানিতে তুলসি পাতা ফুটিয়েও খেতে পারেন। এটা বাচ্চাদের জন্যেও উপকারি। 
  • হলুদ: হলুদে রয়েছে কারকিউমান নামক উপাদান যা একই সাথে এন্টি-ইনফ্লামেটরি, এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল আর এন্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যা গলার খুসখুস কাশি, শ্বাসতন্ত্রের যেকোন প্রদাহ, জ্বালাভাব, গলা ফোলা ও গলা ব্যথা ইত্যাদি দূর করে। গরম পানিতে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খাওয়া যায়। অথবা এক চিমটি কালো গোলমরিচের গুড়া, ১ চামচ হলুদ গুড়া, কমলার রস/ লেবুর রস দিয়ে চা বানিয়েও খাওয়া যায়। এটি উৎকৃষ্ট পানীয় হিসেবে খুব দ্রুত কাজ করবে এবং হলুদের তিক্ত স্বাদ লাগবে না ফলে সহজেই খাওয়া যাবে।
  • লবঙ্গ: গলার খুসখুস ভাব, কাশি ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে লবঙ্গের জুড়ি নেই। তিন চারটা লবঙ্গ চিবিয়ে কিছুক্ষণ মুখে রেখে খেয়ে ফেলুন। এতে তাৎক্ষণিক ফলাফল পাবেন।
  • মশলা চা: আদা, গোলমরিচ, দাড়চিনি, লেবু, লবঙ্গ ইত্যাদি মিশিয়ে একত্রে মশলা চা বানিয়ে খেতে পারেন। 
  • লিকোরিস মূল: আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু যুগ ধরে ব্যবহৃত লিকোরিস মূল (মুলেঠি নামে বহুল পরিচিত) গলা ব্যথা, কফ পরিষ্কার করতে ও কাশি কমাতে অতুলনীয়। যেকোন মুদি দোকানে এটি পাওয়া যায়, যা লিকোরিস নামের গাছের শেকর থেকে তৈরি। এই পাউডার দিয়ে চা বানিয়ে খেলে খুসখুস কাশি দূর হবে। 
  • মার্শম্যালো রুট : এটিও লিকোরিস রুটের মতোই। চা বানিয়ে খেতে পারেন।
  • ইউক্যালিপটাস ওয়েল: ইউক্যালিপটাস উদ্ভিদের নির্যাস থেকে তৈরিকৃত ইউক্যালিপটাস অয়েল গরম পানিতে কয়েক ফোটা দিয়ে ভাপ নিতে পারেন। এটা গলার প্রদাহ কমাতে অনেক কাজে দেবে। ভাপ নেওয়ার সময় মাথায় কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে দিবেন যাতে সম্পূর্ণ ভাপটা ভিতরে যায়। এর পরিবর্তে চা গাছের নির্যাস বা পুদিনা তেলও ব্যাবহার করতে পারেন তবে গবেষণায় দেখা গেছে ইউক্যালিপটাস ইশেনসিয়াল অয়েল কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে দূর্দান্ত কাজ করে।
  • কালোজিরা রসুন তেল: কাশি, গলা ব্যথা এবং যাবতীয় শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার প্রাচীন এবং গ্রামীণ পদ্ধতি হচ্ছে রসুন কালোজিরা তেল। রসুন কুচিকুচি করে কেটে, কালোজিরা সহ সরিষার তেলে ভালো করে ভেজে নিন। এই তেল গলায় মেখে ঘুমান। দিনের বেলায়ও এটা ব্যবহার করতে পারেন। 
  • বাসক পাতা: পানিতে ভালো করে বাসক পাতা সিদ্ধ করে নিন। তারপর পানি ছেঁকে নিয়ে উষ্ণ গরম অবস্থায় পান করে নিন। প্রতিদিন সকালে খেলে ২/৩ দিনের মধ্যে ভালো রেজাল্ট পাবেন। ঘুমানোর আগেও খেতে পারেন। 
  • ভিনেগার : অম্লজাতীয় আপেল সিডার বা ভিনেগার গলার সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই ভিনেগার পান করলেই  খুসখুস কাশি খুব সহজেই দূর হবে।
  • রসুন: রসুনে আছে এন্টিসেপটিক গুন যা গলার প্রদাহকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। সকালবেলা এক কোয়া রসুন লবন দিয়ে চিবিয়ে খান খুসখুস কাশি ভালো হবে।

কি কি কারণে গলা খুসখুস হয়

কি কি কারণে গলা খুসখুস হয় এটা কম বেশি সবাই জানতে চায় কারণ, গলা খুসখুস হওয়া একটি সাধারন শারীরিক সমস্যা, তবে কারণগুলো নানা ধরনের  হতে পারে অনেক সময় এটি সামান্য ঠান্ডা লাগা বা ধুলাবালির  কারণে হলেও  কখনো কখনো এটি বড় কোন অসুস্থতার প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। তাই সচেতন হওয়া জরুরি। নিম্নে গলা খুসখুস হওয়ার কারণগুলো আলোচনা করা হলো: 
  • গলা খুসখুস এর জন্য মূল কারন - ভাইরাস জনিত সংক্রমণ( রাইনোভাইরাস, এডিনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, করোনা ভাইরাস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ইত্যাদি)। 
  • যক্ষা, ল্যারিঞ্জাইটিসের মতো শ্বাসতন্ত্রের রোগের কারনেও গলা খুসখুস ও দীর্ঘমেয়াদি কাশি হতে পারে।
  • ACE inhibitor এর মতো ঔষধ গ্রহনের কারনেও শুকনো কাশি হয়। 
  • শহর অঞ্চলে গাড়ির ধোঁয়া কারখানার ধোঁয়া  এবং নির্মাণ কাজের গলার  স্বাভাবিক শ্লেষ্মাকে শুকিয়ে ফেলে এতে গলায় চুলকানি বা খুসখুস ভাব হয়। যাদের বাড়ির সামনে রাস্তা বা বাজার তারা প্রায় সময় এয় সমস্যায় ভোগেন।
  • সাধারণ ঠান্ডা, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা করোনাভাইরাস এর প্রভাবে গলার ভিতরে টিস্যুতে সংক্রমণ হয় এতে গলা ব্যাথার পাশাপাশি খুসখুস ভাবে দেখা যায় অনেক সময় শুকনো কাশিঁ হয়ে, আরো খারাপ করে পরিস্থিতি।
  • অনেকেরই পোলেন (ফুলের রেণু), পশুর লোম, ধুলা, ফুলের গন্ধ, কিংবা নির্দিষ্ট খাবারে এলার্জি থাকে এতে শ্বাসনালী সংবেদনশীল হয়ে পড়ে ও গলায় খুসখুস তৈরি হয়। অনেক সময় চোখ চুলকানো নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি হয়।
  • অনেকেই জানে না পেটে অতিরিক্ত এসিড জমে গেলে তা উপরের দিকে উঠে গিয়ে গলার কাছে পৌঁছায় একে বলে এসিড রিফ্লাক্স। এই এসিড জ্বালাপোড়া শুরু  করে দেয়, ফলে গলা শুকিয়ে যায় ও খুসখুস হতে থাকে। 
  • যারা অনেকক্ষণ কথা বলেন যেমন শিক্ষক, মাইক ব্যবহারকারী বা গায়ক তাদের গলার উপর চাপ পরে এতে গলার ভিতরে কোষ রক্ত চলাচল কমে গিয়ে কলা শুকিয়ে যায় এবং খুসখুস করে।
  • ধূমপান বা আগুনের ধোয়ার মধ্যে কিছু সময় থাকা গলার শ্লেষ্মা শুকিয়ে ফেলে। এতে গলা চুলকায় ও শুকনা কাশি আসে। নিয়মিত ধূমপান করায় ক্যান্সারের আশঙ্কা ও বাড়ায়।
  • অনেকেই দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করেন না ফলে শরীর শুকিয়ে যায় গলার ভেতরে শ্লেষ্মার স্তর শুকিশে যায় এতে গলায় খুসখুস ভাব ও অস্বস্তি হয়। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ গ্লাস পানি খাওয়া সকলেরই উচিত।
  • কখনো কখনো শরীরের কোথাও ইনফেকশন হয়,যেটা গলার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখায়।এই সাইলেন্ট ইনফেকশন ধরা পরেনা কিন্তু গলা খুসখুস করে।
  • গরম থেকে হঠাৎ ঠান্ডা বা বর্ষা আসলে অনেকে ঠান্ডায় সংবেদনশীল হয়ে পড়েন এতে গলা শুকিয়ে গিয়ে খুসখুস হয়, অনেক সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
গলা খুসখুস হওয়া একেবারে হালকা সমস্যা মনে হলেও এর পিছনে বড় কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই যদি দীর্ঘদিন ধরে গলায় খুসখুসে ভাব থাকে বা কাশি ভালো না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। তবে পর্যাপ্ত পানি পান করা,ধুলাবালি এড়ানো এবং গলা বিশ্রামে থাকলে,অনেক সময় এই সমস্যা সহজেয় দূর হয়।

গলা খুসখুস করলে কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে

গলা খুসখুস করলে কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এই বিষয়ে সবার জানতে হবে। কারন দীর্ঘমেয়াদি এবং নাছোড়বান্দা, একগুঁয়ে কাশি যা ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে দূর করা যায় না তা ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কাশি দীর্ঘমেয়াদি হলে এবং নীচের দুই বা দুইয়ের অধিক লক্ষন থাকলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। 

দীর্ঘমেয়াদি কাশি : দুই সপ্তাহের বেশি কাশি হলে এবং কোনোভাবেই কোনো ওষুধে কাজ না হলে। 

উচ্চমাত্রার জ্বর: অনেকদিন ধরে উচ্চমাত্রায় জ্বর (১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর বেশি)  হলে এবং সাধারণ জ্বরের ঔষধ খেয়ে জ্বর ভালো না হলে।

গুরুতর লক্ষন: কাশির সাথে বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড়, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, কফের সাথে রক্ত আসা  ইত্যাদি লক্ষন থাকলে।

ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন: রোগীর শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে নখ, আঙ্গুলের ডগা, ঠোঁট এবং চামড়া নীলচে রঙের হলে। ফুসফুস যখন শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে না তখন এই অবস্থা তৈরি হয়। এরকম ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

অন্যান্য: কাশতে কাশতে শরীর দূর্বল, মাথা ঘোরা, অবসাদ, অসাড়তা এধরনের অনুভূতি হলে। 

শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষন: শিশুদের ক্ষেত্রে খেতে না চাওয়া, কান্না না করা এবং শরীর নিস্তেজ হয়ে যাওয়া। 

শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগীদের জন্য এসব রোগের পাদুর্ভাব দেখা দেওয়া। সাধারণ কাশি বা গলা খুসখুসের সাথে যদি এসব লক্ষন দেখা যায় এবং ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে ফল না পাওয়া যায় তখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

গলার খুসখুস দূর করার সিরাপ

গলা খুসখুস দূর করার সিরাপ একটি প্রাথমিক চিকিৎসা কীট হিসেবে সকলেরই ঘরে থাকা উচিত বিশেষ করে যাদের ঘরে ছোট শিশু আছে। গলা খুসখুস ও শুকনো কাশির মতো বিরক্তিকর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ঘরোয়া উপায় ছাড়াও বাজারে নানা ধরনের সিরাপ পাওয়া যায় যা গলা খুসখুস কমাতে সহায়ক।
গলার-খুসখুস-দূর-করার-সিরাপ
এ্যাডেভাস সিরাপ (Adovas syrup) : এটি একটি হারবাল সিরাপ। বাসক, যষ্টিমধু, গোলমরিচ, হরিতকী, কিসমিস, লবঙ্গ, দাড়চিনি, এলাচ, তুলসী নির্যাস ও বিভিন্ন ভেষজ উপাদান দিয়ে প্রস্তুত করা হয়।

অলকফ সিরাপ( Alkof syrup) : এটিও একটি হারবাল সিরাপ। শুকনো কাশি, কফ, এলার্জি ইত্যাদি নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।

কট্রিম সিরাপ (Cotrim syrup): এটি কফ, কাশির জন্য ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় সিরাপ। শ্বাসতন্ত্রের যেকোন সংক্রমণজনিত সমস্যায় এটি সেবন করা যাবে।

গলা খুসখুসেের সিরাপ সাধারণত গলার শুষ্কতা দূর করে অ্যান্টিসেপটিক উপাদানের মাধ্যমে জীবাণু নাশ করে এবং নরমাল লুব্রিকেশন ফিরিয়ে আনে। এতে এমন কিছু উপাদান থাকে যা গলার প্রদাহ কমায় এবং কাশির প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক সিরাপ এর ভেষজ উপাদান যেমন তুলসী, মধু, আদা, মৌরি ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়, যা প্রাকৃতিকভাবেই গলায় আরাম দেয়।
এই সিরাপ গুলো ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে এই সিরাপ গুলো দিনে ২-৩ বার খাওয়া যায় তবে সঠিক ডোজ ও ব্যবহারের সময় অবশ্যই প্যাকেটের নির্দেশনা মেনে চলা উচিত, অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত, শিশুদের জন্য আলাদা ডোজ নির্ধারণ থাকে যা বিশেষভাবে খেয়াল রাখা জরুরী।

গলা খুসখুস দূর করার ট্যাবলেট

গলা খুসখুস একটি অস্বস্তিকর ও বিরক্তিকর সমস্যা যা আমাদের কথা বলা খাওয়া বা বিশ্রামের সময় অনেক সময় সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত ঠান্ডা কাশি, এলার্জি, ধুলাবালি বা ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হয়। অনেকে ঘরোয়া উপাযে শান্ত করার চেষ্টা করলেও, দ্রুত আরাম পেতে অনেকেই ট্যাবলেট খেতে পছন্দ করেন। গলা খুসখুস দূর করার জন্য বর্তমানে বাজারে সহজলভ্য ও কার্যকরি ট্যাবলেট হলো: 

  • স্ট্রেপসিলস (strepsils): ভেষজ ও অ্যন্টিসেপ্টিক উপাদানযুক্ত,এই ট্যাবলেট গলা ব্যথা ও খুসখুসে কার্যকর। 
  • হলস(Halls): এটি গলা ঠান্ডা করে এবং স্বস্তি দেয়, বিশেষ করে গরম বা খালি গলায়। 
  • কফড্রপ (Cough Drop): বিভিন্ন ব্র্যান্ডে পাওয়া যায় এবং এতে মেনথল, আদা বা মৌরি জাতীয় উপাদান থাকে।
  • জিঙ্ক লজেঞ্জ: ভাইরাল সংক্রমণ কমাতে সহায়ক, গলার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
এই ধরনের ট্যাবলেট দুই তিন ঘণ্টা পরপর চুষে খেতে হয়। দিনে নির্দিষ্ট সংখ্যায় খেতে হয় বেশি খাওয়া ঠিক নয়। অতিরিক্ত গ্রহণে মুখে শুষ্কতা, পাকস্থলীতে অস্বস্তি বা ঘুমঘুম ভাব হতে পারে। 
যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের উচিত হল চিনিযুক্ত ট্যাবলেট এড়িয়ে চলা।
লজেন্স ছাড়াও সাধারন ট্যাবলেট রয়েছে কাশির জন্য। যেমন:
  • Codeine 
  • Salbutamol
  • Fexofenadine 
  • Terbutaline 
  • Pholcodeine

এসব ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত সেবন করা একদম উচিত নয়। সমস্যা বেশি হলে salbutamol ইনহেলার নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে। এছাড়াও গর্ভবতী নারীদের ঔষধ গ্রহণের পূর্বে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ  ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 

গলার খুসখুস দূর করার দোয়া

গলা খুসখুস দূর করার দোয়া মুসলমানদের জানা উচিত। চিকিৎসা ছাড়াও ইসলাম ধর্মে রয়েছে এমন কিছু দোয়া ও আমল যা শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়, রোগে আক্রান্ত হলে শুধু ঔষধ নয় দোয়া আল্লাহর উপর ভরসা রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিচে একটি দোয়া উল্লেখ করা হলো:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন রোগের জন্য দোয়া শিখিয়েছেন নিচের দোয়া তিনি শিক্ষা দিয়েছেন,

আরবি: আসআলুলল্লাহাল আযিম,রাব্বাল আরশিল আযিম,আয়্যাশফিয়াক,
অর্থ :আমি মহান আল্লাহ আরশের মালিকের কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি তোমাকে আরো প্রদান করেন।
এই দোয়াটি সাতবার পড়ে নিজের উপর বা অসুস্থ ব্যক্তির উপর ফু দিলে ইনশাআল্লাহ আরোগ্য লাভ হবে।

গলা খুসখুসের সময় কোন খাবার গুলো ক্ষতিকর

গলা খুসখুস হলে আমরা অনেক সময় ঘরোয়া উপায় বা ঔষধ খেয়ে আরাম পাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে গলার সমস্যা আরো বাড়তে পারে। অনেকেই না জেনে এসব খাবার খেয়ে ফেলেন ফলে গলার খুসখুস ভালো না হয়ে বরং আরো খারাপ হয়। তাই গলা খুসখুসের সময় কিছু খাবার থেকে সতর্ক থাকে খুবই জরুরী।

বরফ, ঠান্ডা পানি, আইসক্রিম, ঠান্ডা জুস বা ফ্রিজ থেকে সদ্য বের করা খাবার খুব ক্ষতিকর। ঠান্ডা খাবার শিরা গুলোকে সংকুচিত করে যার ফলে গলার প্রদাহ বেড়ে যায় এবং খুশখুস আরো বাড়ে।

ঝাল মরিচ, ভাজাপোড়া বা অতিরিক্ত মশলা দিয়ে রান্না করা খাবার গলার জন্য খুবই খারাপ। এগুলো গলার ভিতরের ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে এবং গলা আরও শুষ্ক ও অস্বস্তিকর করে তোলে।

সিঙ্গারা, সামোসা, চিপস, পুরি ইত্যাদি ভাজা খাবার গলার খুসখুস বাড়িয়ে দিতে পারে। এসব খাবার গলা শুকিয়ে দেয় এবং কাশি ও অস্বস্তি বাড়িয়ে তোলে।

অনেকের শরীরে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খেলে গলা ও নাকের মিউকাস বা কফ বেড়ে যায়। এতে গলা আরও খুসখুস করতে পারে। তবে এটি সবার ক্ষেত্রে হয় না—যাদের এমন সমস্যা আছে, তাদের দুধ খাওয়া এড়িয়ে চলা ভালো।

চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার গলার ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে তোলে। এতে গলা আরও চুলকাতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

রাতের বেলা ঠান্ডা কলা, তরমুজ বা পেঁপে খেলে অনেকের গলা খুসখুস করে। এই ফলগুলো ঠান্ডা প্রকৃতির হওয়ায় গলার সমস্যা বাড়াতে পারে।

গলা খুসখুস হলে শুধু ওষুধ বা সিরাপ নয়, খাদ্যতালিকার দিকেও নজর দিতে হবে। ভুল খাবার খেলে গলার সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাই সতর্ক থাকুন, হালকা গরম ও সহজপাচ্য খাবার খান এবং শরীর ও গলা সুস্থ রাখুন।

গলা খুসখুস থেকে কি কোনো বড় রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে

গলা খুসখুস থেকে কি কোনো বড় রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে এই বিষয় নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন বিশেষ করে যাদের দীর্ঘমেয়াদি কাশি আছে এবং কোনো ঘরোয়া উপায়ে গলা খুসখুস নিরাময় করা সম্ভব হচ্ছে না। 
গলা-খুসখুস-থেকে-কি-কোনো-বড়-রোগ-হওয়ার-সম্ভাবনা-আছে
গলা খুসখুস থেকে সাধারনত কোনো বড় রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই এটি ঠান্ডা বা সাধারণ ইনফ্লামেশন থেকে হতে পারে৷ তবে যদি কাশি দীর্ঘমেয়াদি হয় সাথে গুরুতর লক্ষন থাকে তাহলে ভয়ের আশংকা থাকে৷ সাধারন ভাইরাসজনিত সংক্রমণ থেকে জটিল রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক কম থাকে, বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বদৌলতে। তবে গলা খুসখুস যদি কোনো জটিল রোগ যেমন করোনা, যক্ষা, নিউমোনিয়া ইত্যাদি কারনে হয়ে থাকে তাহলে আশংকা রয়েছে। তবে ভয় না পেয়ে প্রথমেই ঘরোয়া উপায়ে গলা খুসখুস দূর করার চেষ্টা করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এতেই গলা খুসখুস দূর হয়। তবে কাজ না হলেও ভয় না পেয়ে চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হতে হবে।

প্রশ্নোত্তর পর্ব : গলা খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায় 

গলা খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায় ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে থাকছে কিছু সাধারন প্রশ্ন যা অনেকেই করে থাক এবং তার উত্তর। 

প্রশ্ন ১: গলায় কফ জমলে কি করব?
উত্তর : গরম পানি লবন দিয়ে গার্গল করতে পারেন, অথবা আদা, লেবু লবঙ্গ দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। বেশি বেশি পানি পান করুন। তুলসি পাতার নির্যাসও বেশ উপকারি এই সমস্যা থেকে পরিত্রানের জন্য। 
প্রশ্ন ২: ঘুমের মধ্যে গলা শুকিয়ে যায় কেন? 
উত্তর : অনেকেই আছেন ঘুমের মধ্যে মুখ দিয়ে শ্বাস নেন। যারা ঘুমের মধ্যে মুখ দিয়ে শ্বাস নেয় তাদের গলা শুকিয়ে যায়। আবার প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি পান করলেও গলা শুকিয়ে যায়।
প্রশ্ন ৩: কাশির সাথে গলা চুলকায় কেন?
উত্তর: এলার্জিজনিত কারনে কাশির সাথে গলা চুলকায়।
প্রশ্ন ৪: গলায় ইনফেকশন কেন হয়?
উত্তর: ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া কিংবা এলার্জি জনিত কারনে গলায় ইনফেকশন হয়। অনেক সময় ইনফেকশন টনসিলে হয়, তখন এই অবস্থাকে টনসিলাইটিস বলে।
প্রশ্ন ৫: রসুন খেলে কি কাশি ভালো হয়?
উত্তর: হ্যা, রসুন খেলে কাশি ভালো হয়। সরিষার তেলে রসুন কালোজিরা দিয়ে ভেজে গলায় মালিশ করলেও কাশি ভালো হয়।

লেখকের শেষ কথা : গলায় খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায় 

গলায় খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায় কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা, ঔষধের নাম ইত্যাদি বিষয়ে আমরা আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করেছি। গলা ব্যথা বা অন্য যেকোন স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যার সমাধান পেতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আর্টিকেলটি কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

অথবা আপনি কোন বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন সেটা যদি আপনি আমাদের ওয়েবসাইটে না পেয়ে থাকেন তাহলে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে যোগাযোগ করবেন আমরা সে সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্রিলার্নিং আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url