গলা খুসখুস দূর করার ১৫টি ঘরোয়া উপায় জেনে নিন
গলা খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো আসলেই অনেকটা ফলপ্রসূ৷ এটি সাধারণ একটি সমস্যা যা সর্দি ধুলাবালি এলার্জি বা ঠান্ডা জনিত কারণে হয়ে থাকে তবে এর ভোগান্তি অনেক বেশি।
গলায় খুসখুস ভাব হলে অস্বস্তি লাগে কথা বলতে কষ্ট হয় এবং ক্রমাগত কাশি হয়। যদিও এটি গুরুতর অসুস্থতা নয়, তবে সময় মত যত্ন না নিলে সমস্যা বাড়তে পারে। ঘরোয়া কিছু সহজ উপায় আছে যেগুলো ব্যবহার করে গলা খুসখুস অনেকটা কমানো যায় চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পেজ সূচিপত্র: গলা খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায়
- গলা খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায়
- কি কি কারনে গলা খুসখুস হয়
- গলা খুসখুস করলে কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
- গলার খুসখুস দূর করার সিরাপ
- গলা খুসখুস দূর করার ট্যাবলেট
- গলা খুসখুস দূর করার দোয়া
- গলা খুসখুসের সময় কোন খাবার গুলো ক্ষতিকর
- গলা খুসখুস থেকে কি বড় রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে
- প্রশ্নোত্তর পর্ব গলা খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায়
- লেখকের শেষ কথা গলা খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায়
গলা খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায়
গলা খুসখুস দূর করার ঘরোয়া উপায় হিসাবে আমরা বিভিন্ন পথ অবলম্বন করে থাকি। ঘরে থাকা সাধারন কিছু জিনিস দিয়ে এই অস্বস্তিকর সমস্যা হতে পরিত্রান পাওয়া যায় খুব সহজেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক কয়েকটি ঘরোয়া টিপস :
- গরম পানি ব্যবহার: গরম পানি পান করলে তা গলাকে আর্দ্র রাখতে এবং খসখুসে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও গরম পানির ভাপ নিলে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
- আদা: আদায় রয়েছে প্রদাহবিরোধী উপাদান যা গলার প্রদাহকে প্রশমন করতে অনেক সাহায্য করে। এক গ্লাস গরম পানিতে কিছু আদা কুচি ও লবণ যোগ করে ফুটিয়ে সেই পানি পান করুন এবং গার্গল করুন। খালি আদাও চিবিয়ে খাওয়া যায়। অথবা আদা চা খেতে পারেন। যেভাবেই খান না কেন আদা আপনার গলার খুসখুস দূর করতে কাজে দেবে।
- লবন : এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে সামান্য লবন মিশিয়ে গার্গল করুন। চেষ্টা করবেন একটু বেশি সময় গলার কাছে পানিটা ধরে রাখার। এটি গলার প্রদাহ কমিয়ে ভালো আরাম দেয়। দিনে বেশ কয়েকবার এটি করতে হবে।
- মধু : ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এটি গলার খুসখুসানি দূর করতে সাহায্য করবে। মধুতে আছে এন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা গলায় সংক্রমনকারী জীবানুকে ধ্বংস করে খুসখুসে কাশি দূর করে। তবে ১ বছরের কম বয়সের শিশুকে মধু দেওয়া উচিত নয়।
- পুদিনা পাতা : পেপারমিন্ট জাতীয় ঔষধি উদ্ভিদের একটি প্রজাতি হলো পুদিনা। পুদিনা পাতায় থাকা মেনথল নামের উপাদান গলার অসাড় স্নায়ুকে শান্ত করে এবং গলার খুসখুসে অনুভূতি দূর করে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পুদিনা চা খেতে পারেন। এতে খুসখুসে কাশি দূর হবে এবং গলার অস্বস্তি ভালো হবে।
- তুলসি: কাশির জন্য তুলসি পাতার ব্যবহার অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। গলার খুসখুস দূর করতে তুলসি পাতার রস গরম করে খেতে পারেন দিনে ২/৩ বার। তুলসি চা বা পানিতে তুলসি পাতা ফুটিয়েও খেতে পারেন। এটা বাচ্চাদের জন্যেও উপকারি।
- হলুদ: হলুদে রয়েছে কারকিউমান নামক উপাদান যা একই সাথে এন্টি-ইনফ্লামেটরি, এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল আর এন্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যা গলার খুসখুস কাশি, শ্বাসতন্ত্রের যেকোন প্রদাহ, জ্বালাভাব, গলা ফোলা ও গলা ব্যথা ইত্যাদি দূর করে। গরম পানিতে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খাওয়া যায়। অথবা এক চিমটি কালো গোলমরিচের গুড়া, ১ চামচ হলুদ গুড়া, কমলার রস/ লেবুর রস দিয়ে চা বানিয়েও খাওয়া যায়। এটি উৎকৃষ্ট পানীয় হিসেবে খুব দ্রুত কাজ করবে এবং হলুদের তিক্ত স্বাদ লাগবে না ফলে সহজেই খাওয়া যাবে।
- লবঙ্গ: গলার খুসখুস ভাব, কাশি ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে লবঙ্গের জুড়ি নেই। তিন চারটা লবঙ্গ চিবিয়ে কিছুক্ষণ মুখে রেখে খেয়ে ফেলুন। এতে তাৎক্ষণিক ফলাফল পাবেন।
- মশলা চা: আদা, গোলমরিচ, দাড়চিনি, লেবু, লবঙ্গ ইত্যাদি মিশিয়ে একত্রে মশলা চা বানিয়ে খেতে পারেন।
- লিকোরিস মূল: আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু যুগ ধরে ব্যবহৃত লিকোরিস মূল (মুলেঠি নামে বহুল পরিচিত) গলা ব্যথা, কফ পরিষ্কার করতে ও কাশি কমাতে অতুলনীয়। যেকোন মুদি দোকানে এটি পাওয়া যায়, যা লিকোরিস নামের গাছের শেকর থেকে তৈরি। এই পাউডার দিয়ে চা বানিয়ে খেলে খুসখুস কাশি দূর হবে।
- মার্শম্যালো রুট : এটিও লিকোরিস রুটের মতোই। চা বানিয়ে খেতে পারেন।
- ইউক্যালিপটাস ওয়েল: ইউক্যালিপটাস উদ্ভিদের নির্যাস থেকে তৈরিকৃত ইউক্যালিপটাস অয়েল গরম পানিতে কয়েক ফোটা দিয়ে ভাপ নিতে পারেন। এটা গলার প্রদাহ কমাতে অনেক কাজে দেবে। ভাপ নেওয়ার সময় মাথায় কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে ঢেকে দিবেন যাতে সম্পূর্ণ ভাপটা ভিতরে যায়। এর পরিবর্তে চা গাছের নির্যাস বা পুদিনা তেলও ব্যাবহার করতে পারেন তবে গবেষণায় দেখা গেছে ইউক্যালিপটাস ইশেনসিয়াল অয়েল কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে দূর্দান্ত কাজ করে।
- কালোজিরা রসুন তেল: কাশি, গলা ব্যথা এবং যাবতীয় শ্বাসতন্ত্রের সমস্যার প্রাচীন এবং গ্রামীণ পদ্ধতি হচ্ছে রসুন কালোজিরা তেল। রসুন কুচিকুচি করে কেটে, কালোজিরা সহ সরিষার তেলে ভালো করে ভেজে নিন। এই তেল গলায় মেখে ঘুমান। দিনের বেলায়ও এটা ব্যবহার করতে পারেন।
- বাসক পাতা: পানিতে ভালো করে বাসক পাতা সিদ্ধ করে নিন। তারপর পানি ছেঁকে নিয়ে উষ্ণ গরম অবস্থায় পান করে নিন। প্রতিদিন সকালে খেলে ২/৩ দিনের মধ্যে ভালো রেজাল্ট পাবেন। ঘুমানোর আগেও খেতে পারেন।
- ভিনেগার : অম্লজাতীয় আপেল সিডার বা ভিনেগার গলার সংক্রমণ দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত এই ভিনেগার পান করলেই খুসখুস কাশি খুব সহজেই দূর হবে।
- রসুন: রসুনে আছে এন্টিসেপটিক গুন যা গলার প্রদাহকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। সকালবেলা এক কোয়া রসুন লবন দিয়ে চিবিয়ে খান খুসখুস কাশি ভালো হবে।
কি কি কারণে গলা খুসখুস হয়
- গলা খুসখুস এর জন্য মূল কারন - ভাইরাস জনিত সংক্রমণ( রাইনোভাইরাস, এডিনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, করোনা ভাইরাস, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ইত্যাদি)।
- যক্ষা, ল্যারিঞ্জাইটিসের মতো শ্বাসতন্ত্রের রোগের কারনেও গলা খুসখুস ও দীর্ঘমেয়াদি কাশি হতে পারে।
- ACE inhibitor এর মতো ঔষধ গ্রহনের কারনেও শুকনো কাশি হয়।
- শহর অঞ্চলে গাড়ির ধোঁয়া কারখানার ধোঁয়া এবং নির্মাণ কাজের গলার স্বাভাবিক শ্লেষ্মাকে শুকিয়ে ফেলে এতে গলায় চুলকানি বা খুসখুস ভাব হয়। যাদের বাড়ির সামনে রাস্তা বা বাজার তারা প্রায় সময় এয় সমস্যায় ভোগেন।
- সাধারণ ঠান্ডা, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা করোনাভাইরাস এর প্রভাবে গলার ভিতরে টিস্যুতে সংক্রমণ হয় এতে গলা ব্যাথার পাশাপাশি খুসখুস ভাবে দেখা যায় অনেক সময় শুকনো কাশিঁ হয়ে, আরো খারাপ করে পরিস্থিতি।
- অনেকেরই পোলেন (ফুলের রেণু), পশুর লোম, ধুলা, ফুলের গন্ধ, কিংবা নির্দিষ্ট খাবারে এলার্জি থাকে এতে শ্বাসনালী সংবেদনশীল হয়ে পড়ে ও গলায় খুসখুস তৈরি হয়। অনেক সময় চোখ চুলকানো নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি হয়।
- অনেকেই জানে না পেটে অতিরিক্ত এসিড জমে গেলে তা উপরের দিকে উঠে গিয়ে গলার কাছে পৌঁছায় একে বলে এসিড রিফ্লাক্স। এই এসিড জ্বালাপোড়া শুরু করে দেয়, ফলে গলা শুকিয়ে যায় ও খুসখুস হতে থাকে।
- যারা অনেকক্ষণ কথা বলেন যেমন শিক্ষক, মাইক ব্যবহারকারী বা গায়ক তাদের গলার উপর চাপ পরে এতে গলার ভিতরে কোষ রক্ত চলাচল কমে গিয়ে কলা শুকিয়ে যায় এবং খুসখুস করে।
- ধূমপান বা আগুনের ধোয়ার মধ্যে কিছু সময় থাকা গলার শ্লেষ্মা শুকিয়ে ফেলে। এতে গলা চুলকায় ও শুকনা কাশি আসে। নিয়মিত ধূমপান করায় ক্যান্সারের আশঙ্কা ও বাড়ায়।
- অনেকেই দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করেন না ফলে শরীর শুকিয়ে যায় গলার ভেতরে শ্লেষ্মার স্তর শুকিশে যায় এতে গলায় খুসখুস ভাব ও অস্বস্তি হয়। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ গ্লাস পানি খাওয়া সকলেরই উচিত।
- কখনো কখনো শরীরের কোথাও ইনফেকশন হয়,যেটা গলার মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখায়।এই সাইলেন্ট ইনফেকশন ধরা পরেনা কিন্তু গলা খুসখুস করে।
- গরম থেকে হঠাৎ ঠান্ডা বা বর্ষা আসলে অনেকে ঠান্ডায় সংবেদনশীল হয়ে পড়েন এতে গলা শুকিয়ে গিয়ে খুসখুস হয়, অনেক সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
গলা খুসখুস করলে কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
গলার খুসখুস দূর করার সিরাপ
গলা খুসখুস দূর করার ট্যাবলেট
গলা খুসখুস একটি অস্বস্তিকর ও বিরক্তিকর সমস্যা যা আমাদের কথা বলা খাওয়া বা বিশ্রামের সময় অনেক সময় সমস্যা সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত ঠান্ডা কাশি, এলার্জি, ধুলাবালি বা ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হয়। অনেকে ঘরোয়া উপাযে শান্ত করার চেষ্টা করলেও, দ্রুত আরাম পেতে অনেকেই ট্যাবলেট খেতে পছন্দ করেন। গলা খুসখুস দূর করার জন্য বর্তমানে বাজারে সহজলভ্য ও কার্যকরি ট্যাবলেট হলো:
- স্ট্রেপসিলস (strepsils): ভেষজ ও অ্যন্টিসেপ্টিক উপাদানযুক্ত,এই ট্যাবলেট গলা ব্যথা ও খুসখুসে কার্যকর।
- হলস(Halls): এটি গলা ঠান্ডা করে এবং স্বস্তি দেয়, বিশেষ করে গরম বা খালি গলায়।
- কফড্রপ (Cough Drop): বিভিন্ন ব্র্যান্ডে পাওয়া যায় এবং এতে মেনথল, আদা বা মৌরি জাতীয় উপাদান থাকে।
- জিঙ্ক লজেঞ্জ: ভাইরাল সংক্রমণ কমাতে সহায়ক, গলার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- Codeine
- Salbutamol
- Fexofenadine
- Terbutaline
- Pholcodeine
ফ্রিলার্নিং আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url