খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম সম্পর্কে অবাক করা তথ্য জানুন

খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম সম্পর্কে জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস হলো শরীরের এমন একটি বিপাকীয় গুরুতর অবস্থা যেখানে শরীর ইনসুলিন প্রস্তুত করতে পারে না বা প্রস্তুত করলেও সেই ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না।

খালি-পেটে-ডায়াবেটিস-মাপার-নিয়ম

দিন দিন ডায়াবেটিস রোগের পাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম জেনে খুব সহজেই আমরা ডায়াবেটিস মাপতে পারব। আসুন জেনে নেওয়া যাক খালিপেটে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম সম্পর্কে। 

পেজ সূচিপত্র: খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম

খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম

খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম অনেকেরই জানা থাকে না। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার যখন ডায়াবেটিস টেস্টের জন্য সাজেশন দেবে তখন আপনার অবশ্যই প্রস্তুতি নিয়েই টেস্ট করতে যেতে হবে। খালিপেটে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম হলো:

ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে Oral Glucose Tolerence Test করতে হয়। এটি মূলত ২ধাপে দুটি টেস্টের মাধ্যমে করা হয়। 
  1. Fasting Blood Glucose Test
  2. Random Blood Glucose Test
এর মধ্যে প্রথম পরীক্ষা অর্থাৎ Fasting Blood Glucose Test খালি পেটে করা হয়। খালি পেটে এই পরীক্ষা করার ২ ঘন্টা পর  ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ গ্রহন করে পরের ধাপের পরীক্ষা অর্থাৎ Random Blood Glucose Test করা হয়। এই পরীক্ষা করার জন্য কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে যেমন : 
  • পরীক্ষা করার তিন দিন আগে থেকে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। ডায়াবেটিসের লক্ষণ প্রকাশ পেলেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহনে নিষেধাজ্ঞা দেন যাতে সমস্যা না হয়৷ কিন্তু পরীক্ষার জন্য রক্তে শর্করার পরিমান মাপতে হয় তাই তিন দিন আগে থেকে রোগী স্বাভাবিকভাবে শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহন করবে।
  • ডায়াবেটিস মাপার আগে কমপক্ষে ৮-১০ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হবে। 
  • টেস্টের ৩০ মিনিট আগে পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। কোনোরকম মানসিক চাপ নেওয়া যাবে না।
  • ধুমপান একেবারেই করা যাবে না।
প্রস্তুতি শেষ হলে পরীক্ষা করা যাবে। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারনত রাতে ৮-১০ ঘন্টা না খেয়ে সকালে এই পরীক্ষা করলে ভালো হয়। এই সময়ে রোগী শুধু পানি খেতে পারবেন। এরপর খালি পেটে পরীক্ষা করা হয়ে গেলে দুই ঘন্টা পর ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ পানির সাথে মিশিয়ে রোগীকে খাওয়ানো হয় এবং কিছুক্ষণ পরে আবারও ব্লাড গ্লুকোজ টেস্ট করা হয়। তারপর এই দুইটি মান স্বাভাবিক গ্লুকোজ লেভেলের সাথে তুলনা করে ডায়াবেটিস হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা হয়। 

অনেকেই বাসায় বসে গ্লুকোমিটার দিয়ে ডায়াবেটিস মাপার কথা বলে থাকেন। গ্লুকোমিটার হলো ডায়াবেটিসের মাত্রা পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র। সাধারনত যাদের ডায়াবেটিস ইতোমধ্যে হয়েছে তাদের ব্লাড গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না তা দেখার পর্যবেক্ষণ করার জন্য এই যন্ত্র ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে অবশ্যই ওজিটিটি টেস্ট করতে হয়। 

খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় 

খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন নিতে হয় এই বিষয়ে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ওজিটিটি টেস্ট করার পর ডাক্তার রিপোর্ট দেখে ইনসুলিন নিতে বললে ইনসুলিন নিতে হবে অন্যথায় নেওয়া যাবে না। ওজিটিটি টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী কখন ডাক্তাররা ইনসুলিন গ্রহনের পরামর্শ দেন সে সম্পর্কে এখন আলোচনা করব।

খালি পেটে ডায়াবেটিস টেস্ট অর্থাৎ Fasting Blood Glucose টেস্টের নরমাল মাত্রা হচ্ছে ৬.১ - ৭.০০ মিলিমোল/লিটার (১১০-১২৬মি.গ্রা/ডেসি.লিটার) আর গ্লুকোজ খেয়ে টেস্ট অর্থাৎ Random Blood Glucose টেস্টের স্বাভাবিক মাত্রা ৭.৮- ১১.০০ মিলিমোল / লিটার (১৪০-১৯৯ মি.গ্রাম / ডেসি.লিটার)। এই স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে যখন রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেরে যায় তখনই ইনসুলিন নিতে হয়। তাহলে খালি পেটে গ্লুকোজের মাত্রা যাদি ৭.০০ ইউনিটের বেশি হয় এবং ৭৫ গ্রাম গ্লুকোজ খাওয়ার পর যদি ১১.০০ ইউনিটের বেশি হয় তাহলে ইনসুলিন নিতে হবে।

ডায়াবেটিস পজেটিভ আসলে যে শুধু ইনসুলিন নিতে হয় তা নয় বরং ইনসুলিনের পাশাপাশি ওরাল হাইপোগ্লাইসেমিক ঔষধও খেতে হয়। ইনসুলিন এবং এসব ঔষধের মধ্যে বিভিন্ন ভাগ রয়েছে। কোন রোগীকে ডাক্তার কোন ধরনের ঔষধ ও ইনসুলিন দেবেন তা নির্ভর করে রোগীর শারীরের অবস্থা ও কিছু বিষয় যেমন শরীরে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, কিডনি বা লিভারে রোগ ইত্যাদির উপস্তিতির উপর। তাই এর সাথে ডাক্তার আরও কিছু পরীক্ষার সাজেশন দিয়ে থাকেন এবং অবশেষে সব রিপোর্ট বিশ্লেষন করে ঔষধ লিখে দেন। 

তবে ডায়াবেটিস হলেই যে ইনসুলিন নিতে হবে বিষয়টা এরকম না। ডায়াবেটিস টাইপ ১ এর বেলায় ইনসুলিন নেওয়া বাধ্যতামূলক, কিন্তু টাইপ ২ এর বেলায় না। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করা হয় সাধারনত হাইপোগ্লাইসেমিক ঔষধ, খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়ামের দ্বারা ব্লাড গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। তবে একান্তই যদি কাজ না হয় তাহলে ইনসুলিন দেওয়া হয়।

কোন কোন লক্ষণ দেখলে ডায়াবেটিস টেস্ট করব

কোন কোন লক্ষণ দেখলে ডায়াবেটিস টেস্ট করব এই প্রশ্ন প্রায় সবাই করে থাকে। বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগের প্রসারের কারনে প্রায় সবাই কম বেশি এই রোগ সম্পর্কে জানে। তাই শারিরীক কোনো সমস্যার দেখা দিলেই ভয় পেয়ে যায় ডায়াবেটিস হওয়ার আশংকায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ডায়াবেটিসের কিছু লক্ষণ সম্পর্কে:

  • ঘনঘন মুত্র ত্যাগ (Polyuria) : ডায়াবেটিসের লক্ষণ বলতে সকলের মাথায় সবচেয়ে প্রথম যে ধারনা আসে তা হলো ঘনঘন মূত্রত্যাগ। স্বাভাবিক অবস্থায় একজন সুস্থ মানুষ দৈনিক ৪-৮ বার মূত্রত্যাগ করে অর্থাৎ ৩-৬ ঘন্টা পর পর মূত্রত্যাগের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রতি ১-২ ঘন্টা পরপর মূত্রত্যাগ করেন। এমনকি রাতে ঘুম ভেঙে মুত্রত্যাগের তাড়না জাগে (একে Nocturia বলে)। অতিরিক্ত পানি পান করার কারনে অনেকের ঘনঘন মুত্রত্যাগের প্রয়োজন হতে পারে তবে দৈনিক ৮ বারের বেশি এবং রাতে ঘুম ভেঙে মূত্রত্যাগ করলে অবশ্যই এটি খারাপ লক্ষণ প্রকাশ করে। সাথে মুত্র অস্বাভাবিক কালার, ঝাঝালো গন্ধযুক্ত হবে।
  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা (Polydipsia): ঘনঘন মুত্রত্যাগের ফলে শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। ফলে অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগবে এবং রোগী বারবার পানি পান করতে থাকবেন। একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক ৬-৮ গ্লাস পানি পান করতে হয়। আবহাওয়া বা অন্যকোনো কারনে এর পরিমান বেশি হতে পারে কিন্তু যখন আপনার অস্বাভাবিক পানির তৃষ্ণা লাগবে এবং ঘনঘন মূত্রত্যাগের ইচ্ছা জাগবে তখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • অতিরিক্ত ক্ষুধা (Polyphagia): দিনে তিনবেলা ভরপেট খাওয়ার পরও ক্ষুধা উদ্রেক হবে। মূলত এই তিনটি মূল লক্ষণ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়। 
  • ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিন রেজিট্যান্স থাকায় শরীর শর্করা শোষন ও কাজে লাগাতে পারে না ফলে অস্বাভাবিকভানে ওজন কমতে থাকে।
  • ডায়াবেটিসের রোগীদের শরীরে কোনো ক্ষত হলে তা শুকাতে অনেক সময় লাগে এবং পচন ধরার প্রবনতা থাকে অনেক বেশি।
  • শরীর দূর্বল, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, মুখ ও গলা শুকিয়ে যাওয়ার মতো অনুভূতি হবে।
  • ডায়াবেটিস রেটিনোপ্যাথির কারনে দৃষ্টি ঝাপসা হবে, চোখে কম দেখতে পাবে রোগী।
  • পা ফুলে যেতে পারে।  
  • রক্তচাপ বেড়ে যায়। 
বেশিরভাগ সময় এই রোগের লক্ষণ অপ্রকাশিত থেকে ক্ষতি করে যায়। তাই যখনই এসব লক্ষণের ২/৩ টি প্রকাশ পাবে অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 

ভরা পেটে ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট

ভরা পেটে ডায়াবেটিস নরমাল কত পয়েন্ট এটা সব ডায়বেটিস রোগীর প্রশ্ন। ডায়বেটিস একটি সাধারণ ও দীর্ঘমেয়াদী রোগ, যা নিয়ন্ত্রণে না রাখলে শরীরে অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই রোগে শরীরে ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাবে রক্তে গ্লুকোজ বা চিনি মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। এই লেখায় আমরা জানবো খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজের (ভরা পেটে) স্বাভাবিক মাত্রা কত হওয়া উচিত, এবং কখন চিন্তা করার মতো অবস্থা হয়।ভরা পেটে ডায়াবেটিস বলতে বোঝানো হয়  Random Blood Glucose Test এ খাবার গ্রহণের  দুই ঘণ্টা পর রক্তে গ্লুকোজের যে মাত্রা পাওয়া যায় সেটি। এই গ্লুকোজের পরিমান  যদি স্বাভাবিকের থেকে অতিরিক্ত  হয় তাহলে ডায়াবেটিস রয়েছে ধরে নেওয়া হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন (ADA)-এর তথ্য অনুযায়ী, খাওয়ার ২ ঘণ্টা পর রক্তে চিনি হওয়ার স্বাভাবিক মাত্রা হলো ৭.৮ -১১.০০ মিলিমোল/লি. । কোনো ব্যক্তির যদি এই মান ৭.৮ মিলিমোল/লিটার এর নিচে নেমে আসে তাহলে ধরা হয় তার ডায়াবেটিস নেই। যদি কারো ক্ষেত্রে এই মান ৭.৮-১১.০০মিলিমোল/লি. এর মধ্যে থাকে তাহলে ধরা হয় সে প্রি ডায়াবেটিস স্টেজে আছে। অর্থাৎ তার ডায়াবেটিস হয়নি কিন্তু হওয়ার সম্ভাবনা অনেক। কোনো ব্যক্তির ভরা পেটে ব্লাড গ্লুকোজের মান ১১.০০ মিলিমোল/লি. এর থেকে বেশি হয় তাহলে এটি সুস্পষ্টভাবে ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধরা হয়। 

তাহলে ভরা পেটে ডায়াবেটিস সাধারনত ৭.৮ পয়েন্টের নিচে থাকা নরমাল। এর উপরে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। খালি পেটে রক্তে চিনি অনেক সময় স্বাভাবিক দেখা যায়, কিন্তু খাবারের পর সেটা হঠাৎ বেড়ে যায়। তাই দুই সময়ের রিডিং মিলিয়ে চিকিৎসক বুঝতে পারেন, রোগীর শরীর ইনসুলিন কতটুকু কাজ করছে। অনেক সময় খালি পেটে চিনি ভালো থাকলেও খাবারের পর চিনি বেশি উঠে যায়  একে Postprandial Hyperglycemia বলে, এবং এটা ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে নিজের স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখা খুব জরুরি। যেকোনো সমস্যা  হলে  অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায়

ডায়াবেটিস কত হলে মানুষ মারা যায় এই বিষয়টি জানা সবারই দরকার।ডায়াবেটিস এক ধরনের বিপজ্জনক রোগ, যা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অনেক জটিল সমস্যা তৈরি করতে পারে এমনকি মানুষ মারাও যেতে পারে। অনেকেই মনে করেন, রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলেই মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। কিন্তু বাস্তব বিষয়টা একটু ভিন্ন এবং বিস্তারিতভাবে বোঝা দরকার।

রক্তে শর্করা কতটা থাকলে স্বাভাবিক ধরা যায় এবং কত পরিমাণ থাকলে ক্ষতিকর তা নিয়ে আমরা উপরের অংশে আলোচনা করেছি। যদি রক্তে শর্করার পরিমান স্বাভাবিক থাকে তাহলে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে তাকে ধরা যায়। শরীরে ইনসুলিনের অভাব হলে শর্করা ভেঙ্গে শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ফলে বিকল্প পদ্ধতিতে ফ্যাট ভেঙে শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হয় এতে অনেক বেশি পরিমানে ফ্যাটি এসিড তৈরি হয়ে রক্তের পিএইচ মান কমিয়ে দেয় আর মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। এভাবেই রক্তে শর্করার পরিমান ৩০ মিলিমোল/ লিটার মাত্রার উপরে চলে গেলে প্রথমদিকে গলা শুকিয়ে যাওয়া, পানিশূন্যতা, ঘনঘন প্রসাব হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়।
ডায়াবেটিস-কত-হলে-মানুষ-মারা-যায়
পিএইচ পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগী অস্বাভাবিক আচরন করতে শুরু করে এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এরপর চূড়ান্ত পর্যায়ে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং রেসপাইরেটরি ফেইলিউরের মতো দূর্ঘটনা ঘটে।  এছাড়াও কিডনি বিকল,হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক ও বিকলাঙ্গের মতো ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। তখন রোগীকে আইসিইউতে  ভর্তি করানো জরুরি হয়ে পড়ে এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হয়। পুরো ঘটনাটি ঘটতে মাত্র কয়েক ঘন্টা থেকে এক দিন সময় লাগে। এর মধ্যে রোগীর সঠিক চিকিৎসা না করতে পারলে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি আশংকাজনকভাবে বেড়ে যায় এমনকি মারাও যেতে পারে। 

অন্যদিকে রক্তে শর্করার মাত্রা ৭.৮ মিলিমোল/লিটার মাত্রা থেকে অস্বাভাবিকভাবে কমে যায় তাহলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia) হতে পারে যেটিও মারাত্মক। এতে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে এবং সময়মতো চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।ডায়াবেটিস একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। তাই নিজের সুগার লেভেল জানুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন, নিয়ম মেনে চলুন তাহলেই ডায়াবেটিস থেকেও দীর্ঘ, সুস্থ জীবন কাটানো সম্ভব।

ঘরে বসে সুগার মাপার উপায়

ঘরে বসে সুগার  মাপার উপায় সবাই জানতে চায় কারন বর্তমানে ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব সবত্র দেখা যায়। ডায়াবেটিস চিরজীবনের জন্য নির্মূল করা সম্ভব নয় তবে নিয়ন্ত্রণে রেখে ভালো থাকা যায়। তাই প্রত্যেকদিন ডায়াবেটিস মাপা জরুরী কারণ সব সময় দেখতে হয় যে রক্তে গ্লুকুজের পরিমাণ বেশি হচ্ছে কিনা। আগে শুধু ক্লিনিকে বা হসপিটালে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা করা হতো কিন্তু এখন আপনি ঘরে বসেই এটা করতে পারবেন। তবে কিভাবে করবেন কোন পদ্ধতিতে মাপবেন, কখন মাপবেন, আর কী ভুল করা যাবে না এসব জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ঘরে বসে ডায়াবেটিস মাপার জন্য প্রয়োজন গ্লুকোমিটারের। এটি একটি ছোট ডিজিটাল যন্ত্র যার মাধ্যমে মাত্র ৫–১০ সেকেন্ডে আপনি জানতে পারবেন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ। এটি অনেকটা মোবাইলের মতো হাতে ধরে ব্যবহার করা যায়। ডায়াবেটিস মাপার জন্য যেসব জিনিস লাগে:
  1. গ্লুকোমিটার 
  2. টেস্ট স্ট্রিপ
  3. ল্যান্সেট (আঙুল ফুটানোর সূচ)
  4. অ্যালকোহলযুক্ত কটন প্যাড 
আসুন এখন আমরা ধাপে ধাপে মাপার নিয়ম জেনে নেই: 
  • প্রথমেই হ্যান্ডওয়াশ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কা, জীবানুমুক্ত করুন:
  • গ্লুকোমিটারে টেস্ট স্ট্রিপ সেট করে গ্লুকোমিটার অন করুন 
  • ল্যান্সেট দিয়ে অনামিকা অথবা মধ্যমা আঙুলের মাথায় ছোট ফুটো করুন।
  • সামান্য রক্ত (এক ফোঁটা) বের করে নিন
  • টেস্ট স্ট্রিপে রক্ত ছোঁয়ান
  • মাত্র কয়েক সেকেন্ডে স্ক্রিনে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখাবে। এটি নোট করে রাখুন। 
সকালে খালি পেটে ঘুম থেকে উঠে কিছু না খেয়ে পরীক্ষা করা সবচেয়ে ভালো। এরপর খাবারের ২ ঘণ্টা পরে আবারও করা ভালো যাতে খাবার পর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রার তারতম্য বোঝা যায়। আবার রাতে সুগার ওঠানামা হয় কিনা সেটা জানার জন্য খাবার আগে অথবা পরে করতে হবে। প্রতিবার গ্লুকোজের পরিমান নোট করে রাখুন এটি চিকিৎসার কাজে লাগবে এবং বুঝতে পারবেন আপনার স্বাস্থ্য ঠিক আছে কি না। অনেকেই বুঝতে পারেন না কখন সুগার বেড়ে যাচ্ছে বা কমে যাচ্ছে আর সময়মতো ধরা না পড়লে তা মারাত্মক হতে পারে। তাই একটি ভালো গ্লুকোমিটার কিনে নিয়ম করে রক্ত পরীক্ষা করুন, নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্য ঠিক রাখুন।

ডায়াবেটিসের সর্বোচ্চ মাত্রা কত

ডায়াবেটিস সর্বোচ্চ মাত্রা কত এটা ডায়াবেটিস রোগীদের পরিচিত প্রশ্ন। ডায়াবেটিস এক ধরনের রোগ, যার কারণে  শরীর ঠিকমতো ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না অথবা ইনসুলিন তৈরি করতেই পারে না। ইনসুলিন হলো এক ধরনের হরমোন, যা রক্তে মধ্যে  গ্লুকোজ (চিনি) নিয়ন্ত্রণে রাখে। যখন শরীরের ভিতরে ইনসুলিন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখন রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কম বা বেশি হয় যা ডায়াবেটিস ঘটায়।

ডায়াবেটিসের স্বাভাবিক মাত্রা নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। কিন্তু ডায়াবেটিসের সর্বোচ্চ মাত্রা কত তা নিয়ে বলা মুশকিল।  ডায়াবেটিসের সর্বোচ্চ মাত্রা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয় কারণ রোগীর বয়স, শরীরের অবস্থা ও চিকিৎসার ধরন ভেদে এটি আলাদা হতে পারে। তবে যদি রক্তে চিনি ৪০০-৫০০ mg/dL ছাড়িয়ে যায়, তাহলে তা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। এই অবস্থায় দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। সাধারনত রক্তে গ্লুকোজের পরিমান ৫০০ mg/dL বা তার বেশি হলে সেটা ডায়াবেটিক অ্যাকিউট অবস্থা হিসেবে ধরা হয়।

একে বলা হয় ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস (DKA) বা হাইপারগ্লাইসেমিক হাইপারঅস্মোলার স্টেট (HHS)। এই অবস্থায় রোগী বেহুশ  হয়ে যেতে পারেন, বমি, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত প্রস্রাব ও পানির কমতি  দেখা দেয়। এটি জরুরি চিকিৎসা ছাড়া মৃত্যুঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই ডায়াবেটিসের সর্বোচ্চ মাত্রা হিসবে এই অবস্থাকে রা যায়। যারা ইনসুলিন নেয় কিন্তু ঠিকমতো ব্যবহার করে না, নিয়মিত ওষুধ খায় না, যারা অনেক দুশ্চিন্তা করে বা স্ট্রেসে থাকে, খাদ্যাভ্যাস অনিয়মিত, শরীরচর্চা করে না এই সমস্ত ব্যক্তি বেশি ঝুঁকিতে থাকে।

ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নেওয়ার নিয়ম 

ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নেওয়ার নিয়ম ইনসুলিন সাধারনত ডায়াবেটিস রোগে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে নেওয়া হয়। ইনসুলিন হলো একধরনের হরমোন। পাকস্থলীতে অবস্থিত অগ্ন্যাশয়ের আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস্ কোষ থেকে প্রাকৃতিক ভাবে এটি নিসৃত হয় এবং শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। যাদের শরীরে এটি উৎপাদন হয় না তাদের ডায়াবেটিস হয় এবং ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিতে হয়। কিভাবে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিতে হয় তা নিয়েই এখন আলোচনা করব।
ইনসুলিন-ইঞ্জেকশন-নেওয়ার-নিয়ম
ইনসুলিন নেওয়ার নিয়ম :
  • ইনসুলিন ও সিরিঞ্জ নির্বাচন:  ইনসুলিনের অনেক প্রকারভেদ আছে।  প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কোন ধরনের ইনসুলিন দিতে হবে তা নির্বাচন করুন এবং প্রেসক্রিপশন অন সিরিঞ্জ নিন। ইনসুলিনের মেয়াদ ঠিক আছে কি না ভালো করে চেক করে নিন।
  • সময় নির্বাচন: ইনসুলিন সাধারনত খাওয়াটর ১৫-২০ মিনিট পূর্বে দিতে হয়।
  • স্থান নির্বাচন: ইনসুলিন চামড়ার নীচে (সাবকিউটেনাস) স্তরে দিতে হয়। শরীরের কয়েকটি জায়গা যেমন পেট, উরু, বাহুর পিছনে ও নিতম্ব (চর্বিযুক্ত স্থানে) ইনসুলিন দিতে হয়। একই জায়গায় বার বার নিলে সমস্যা হতে পারে তাই প্রতিবার ইনসুলিন নেওয়ার সময় জায়গা পরিবর্তন করে নিতে হবে।
  • ইনসুলিন দেওয়ার আগে হাত ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
  • সিরিঞ্জ মোড়ক থেকে বের করে ক্যাপটি খুলে নিন। এরপর ইনসুলিনের ভায়াল থেকে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সঠিক পরিমান ইনসুলিন সিরিঞ্জে ভরে নিন। খেয়াল রাখুন সিরিঞ্জের ভিতর যাতে কোনো বাতাস না থাকে।
  • যে জায়গায় ইনজেকশন দিবেন সেটা পরিষ্কার আছে কি না চেক করে নিন। অ্যালকোহল সোয়াব দিয়ে পরিষ্কার করলে বেশি ভালো হয়। ইনজেকশন দেওয়ার আগে ত্বক হালকা করে দিমটি দিয়ে তুলো নিন। তারপর একদম খাড়া ভাবে (৯০° কোণে) সুইটি পুরোপুরি চামড়ার নিচে প্রবেশ করান। তারপর ধীরে ধীরে প্লাঞ্জার চেপে ইনসুলিন ভিতরে প্রবেশ করান যতক্ষণ পর্যন্ত না সিরিঞ্জ খালি হচ্ছে। 
  • ইনসুলিন দেওয়া শেষ হলে নিশ্চিত হন যে তা শরীরের ভিতরেই আছে। চামড়ায় যদি কোনো ফোলাভাব না থাকে তাহলে বুঝবেন ইনসুলিন দেওয়া সঠিক হয়েছে এবং সুইটি ধীরে ধীরে টেনে বের করুন। 
  • সুই সহ সিরিঞ্জ নিরাপদ স্থানে ফেলে দিন। 

প্রশ্নোত্তর পর্ব: খালিপেটে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম 

প্রশ্ন ১: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে শিশুর কি ক্ষতি হয়?
উত্তর: গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হলে গর্ভাবস্থায় শিশুর শরীরে কিু জটিলতা দেখা দিতে পারে যেমন ওজন বেড়ে যাওয়া, রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া, জন্মগত ত্রুটি, জন্মের পর শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। গর্ভবতী মায়ের যদি আগে থেকেই ডায়াবেটিস থাকে তাহলে বাচ্চারও ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

প্রশ্ন ২: রসুন খেলে কি ডায়াবেটিস বাড়ে?
উত্তর : রসুন খেলে ডায়াবেটিস বাড়ে না বরং নিয়ন্ত্রণে থাকে কারন এতে থাকা অ্যালিসিন যৌগ রক্তে শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা রাখে। 

প্রশ্ন ৩: ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্র কি?
উত্তর : ডায়াবেটিস মাপার যন্ত্রের নাম হলো গ্লুকোমিটার। একে গ্লুকোজ মিটারও বলা হয়।

প্রশ্ন ৪: ডায়াবেটিস কত প্রকার? 
উত্তর: ডায়াবেটিস সাধারনত ৩ প্রকার। টাইপ -১ ডায়াবেটিস, টাইপ -২ ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। 

প্রশ্ন ৫: ডায়াবেটিস পরীক্ষার নাম কি?
উত্তর: ডায়াবেটিস পরীক্ষা কয়েক ধরনের হয়ে থাকে এর মধ্যে প্রধান হলো Fasting Blood Glucose Test, Random Blood Glucose Test এবং HbA1c.

লেখকের শেষ কথা: খালিপেটে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম 

খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আজকের আর্টিকেলে আমরা খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আর্টিকেলটি যদি আপনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে থাকেন তাহলে ডাইবেটিস মাপার নিয়ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।

আর্টিকেল সম্পর্কে যেকোন অভিযোগ, পরামর্শ কিংবা মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এর জন্য ফ্রিলার্নিং আইটির যোগাযোগ পেজে গিয়ে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্রিলার্নিং আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url