গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার ১০টি সঠিক নিয়ম জানুন
গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। চিয়া সীডে থাকে প্রচুর পরিমানে ফাইবার যেটা গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক উপকারি। কিন্তু পরিমানে বেশি খেলে আবার হতে পারে সমস্যা।
তাই সঠিক নিয়ম মেনে চিয়া সীড খেতে হবে। আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় চিয়াসীড খাওয়ার নিয়ম, উপকারিতা, অপকারিতা ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
পেজ সূচিপত্র : গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার অপকারিতা
- চিয়া সীড কত সময় ভিজিয়ে রাখতে হয়
- চিয়া সীড খেলে কি বুকের দুধ বাড়ে
- গর্ভাবস্থার আগে কি চিয়া সীড খাওয়া উচিত
- চিয়া সীডের পুষ্টিগুণ
- চিয়া সীড গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের জন্য কি ভালো
- ওজন কমাতে চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম
- বাচ্চাদের চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম
- প্রশ্নোত্তর পর্ব গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম
- লেখকের শেষ কথা গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম সাধারণভাবে চিয়া সীড খাওয়ার নিয়মের মতোই। তবে গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার জন্য সময় ও পরিমান ঠিক রাখতে হবে এবং কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা গর্ভাবস্থায় মা ও শিশু স্বাস্থ্যঝুকিতে থাকে, ছোট ছোট ভুলে হতে পারে অনেক বড় ক্ষতি। চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে --
- পরিমিত পরিমাণ খাওয়া: গর্ভবতী মায়ের জন্য পরিমিত পরিমাণ চিয়া সীড খাওয়া উপকারি ও নিরাপদ। তবে বেশি খেলে হজমের সমস্যা ও অন্যান্য অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। প্রতিদিন ১-২ চা চামচ সিয়া সীড খাওয়া গর্ভবতী মায়ের শরীরের জন্য ভালো। তবে সন্দেহ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে খেতে হবে।
- সময় মতো খাওয়া : খালি পেটে চিয়া সীড খেলে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। ১ চামচ চিয়া সীড রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে ভিজানো পানি সহ খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই উপকার পাওয়া যায়।
- বিভিন্ন শরবত, পানীয়ের সাথে চিয়া সীড মিশিয়ে খেলে খেতে যেমন সুস্বাদু হবে তেমন উপকারও পাওয়া যাবে।
- সকালের নাস্তা, ডেজার্ট (পায়েস, পুডিং, জেলি ইত্যাদি) , স্মুদি, মিল্ক শেক অথবা সালাদের সাথে চিয়া সীড মিশিয়ে খেতে পারেন।
- চিয়া সীড কাঁচাও খাওয়া যায়। বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুট, বাদাম, আখরোট ইত্যাদির সাথে চিয়া সীড খেতে পারেন। অথবা ১০-১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন। মধু দিয়ে চিয়া সীড খাওয়াও বেশ কার্যকরী।
- গরম দুধে চিয়া সীড আর মধু মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন। এতে করে রাতের ঘুম অনেক ভালো হবে, মেজাজ ঠান্ডা থাকবে।
- চিয়া সীড, মধু ও লেবু দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। এটি মাথাব্যথা, ক্লান্তি, অবসাদ দূর করে নার্ভ শীতল রাখতে সাহায্য করে।
- পূর্বে কখনও চিয়া সীড না খেয়ে থাকলে অল্প পরিমান নিয়ে শুরু করা উচিত। ধীরে ধীরে পরিমান বাড়ানো যাবে তবে কোনো রকম সমস্যা হলে এটি খাওয়া বাদ দিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- প্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচ চিয়া সীড খাওয়া উচিত। এর বেশি খেলে সমস্যা হতে পারে।
- চিয়া সীড কখনও গরম করে খাওয়া উচিত না। গরম পানিতে মিশালেও এর গুনাগুন ও স্বাদ বিকৃত হতে পারে। তবে হালকা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
- যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে চিয়া সীড এড়িয়ে চলা উত্তম কারন এতে আছে প্রচুর পরিমান পটাশিয়াম আর ফসফরাস যা কিডনির ক্ষতি করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার উপকারিতা অনেক। চিয়া সীডে রয়েছে নানান রকমের পুষ্টিগুণ। এজন্য এটি সুপার ফুড নামেও পরিচিত। গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড মা ও শিশুর সুসাস্থ্য নিশ্চিত করতে হতে পারে সহায়ক। চলুন জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার উপকারিতাগুলো--
মায়ের জন্য উপকারিতা:
চিয়া সীড একটি ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্যশস্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার যা গর্ভবতী মায়ের পাচনক্রিয়ার সক্ষমতা বাড়ায়, হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এই ফাইবারের আরেকটি গুণ হলো ক্ষুধামন্দা দূর করা। অনেক সময় কিছু না খেলেও গর্ভবতী মায়েরা পেট ভরা ভরা অনুভব করেন এবং খাওয়ার রুচি না থাকায় খেতে চায় না। নিয়মিত চিয়া সীড খেলে এই ক্ষুধামন্দা দূর হয়ে যাবে। আবার অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা সমাধানেও চিয়া সীড অনেক কার্যকরী। ফলে গর্ভকালীন ওবেসিটি থেকে মুক্তি পেতে পারেন মায়েরা। এককথায় বদহজম, পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটি থেকে শুরু করে ক্ষুধামন্দা, ওবেসিটি পর্যন্ত সকল সমস্যার সমাধান এই ১ চামচ চিয়া সীডে।
অনেক গর্ভবতী মায়েদের শরীরে ব্যাথা, জয়েন্টে ব্যথা সহ শরীর ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষন দেখা যায়। গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা বাড়ে আর এই চাহিদা পূরন না হলে এসব লক্ষন প্রকাশ পায়। চিয়া সীডে আছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম যা মায়ের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরন করে এসব লক্ষন দূর করে সুস্থ্য সবল রাখতে সাহায্য করে।
চিয়া সীডে রয়েছে আয়রন। যা রক্তশূণ্যতা দূর করতে সাহায্য করে, লোহিত রক্তকনিকা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে ও রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান বাড়ায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
চিয়া সীডে থাকে শর্করা বা প্রাকৃতিক চিনি এবং শক্তি যা গর্ভবতী মায়ের শরীরে শক্তি যোগায়। ১০০গ্রাম চিয়া সীডে থাকে প্রায় ৪৮৬ কিলোক্যালোরি শক্তি। এছাড়াও শর্করা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়া থেকে মাকে বাঁচায়।
চিয়া সীড বিভিন্ন মিনারেলস (যেমন ম্যাগনেশিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ) সমৃদ্ধ যা গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুকি যেমন দূর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ বৃদ্ধি, পুষ্টিহীনতা, ভ্রুনের সংক্রমন ইত্যাদি থেকে সুরক্ষা দেয়।
চিয়া সীডে থাকে ওমেগা -৩, ওমেগা -৬ ফ্যাটি অ্যাসিড যা গর্ভাবস্থায় মায়ের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় যা হৃদপিন্ডের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
সন্তানের জন্য উপকারিতা :
চিয়া সীডে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা সন্তানের মস্তিষ্ক বিকাশ, স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও চোখের বিকাশে সাহায্য করে। চিয়া সীডে থাকা ক্যালসিয়াম শিশুর হাড় গঠনে সাহায্য করে সুষ্ঠু বিকাশে ভুমিকা পালন করে৷ এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে এবং গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন সংক্রমন থেকে ভ্রুণকে রক্ষা করে।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা আমরা অনেকেই জানিনা। গর্ভাবস্থায় মায়েরা নিজের এবং সন্তানের সুস্থতার জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে থাকে। এই তালিকায় অনেক সময় চিয়া সীড নামটি উঠে আসে। তবে সবাই গর্ভাবস্থায় উপকারী মনে করে খেয়ে থাকে যদিও অনেক সময় গর্ভাবস্থায় এটা বিপদজনক হতে পারে। আজকে আমরা জানব গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা।
চিয়া সীডে ফাইবার প্রচুর পরিমাণে থাকে যে কারণে অতিরিক্ত খেলে গর্ভবতী মায়ের পেটে গ্যাস, পেট ফাঁপা, ডায়েরিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের কারণে হজম প্রক্রিয়ার গতি কমে যায় এমতাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমান চিয়া সীড খেলে হজম হতে সমস্যা হয় এবং পেট ভার ও অস্বস্তি সৃষ্টি হয়।
চিয়া সীড সাধারণ সময়ে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে কিন্তু গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত রক্তচাপ কমে যাওয়া, মায়ের জন্য বিপদজনক হতে পারে। হঠাৎ দুর্বলতা মাথা ঘোরা বমি বমি ভাব হতে পারে। অধিক পরিমান চিয়া সীড খাওয়া এর একটি অন্যতম কারন হতে পারে।
চিয়া সীডে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে, যার মাধ্যমে রক্তের ডেনসিটি কমে। ফলে যারা এন্টিকোয়াগুলেন্ট জাতীয় ঔষধ (হেপারিন, এনোক্সাপারিন ইত্যাদি) এন্টিপ্লেটলেট জাতীয় ঔষধ (এ্যাসপিরিন, ক্লোপিড ইত্যাদি) খায় বা যাদের রক্তপাতের সমস্যা আছে, চিয়া সীড তাদের জন্য বিপদজনক হতে পারে কেননা গর্ভাবস্থায় যেকোনো রক্তপাত ঝুঁকিপূর্ণ।
কারো কারো চিয়া সীড খাওয়ার কারণে এলার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যেমন চুলকানি, ফোলা, চোখ লাল হওয়া ইত্যাদি। গর্ভাবস্থায় এমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে প্রাণঘাতী।
চিয়া সীড ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে কিন্তু গর্ভকালীন সময়ে যাদের ডায়াবেটিস থাকে চিয়া সিড খাওয়ার কারণে তাদের ব্লাড সুগার অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
চিয়া সীড একটি পুষ্টিকর খাবার হলেও গর্ভাবস্থায় সতর্ক থাকাটা জরুরি। অনিয়মিত বা বেশি পরিমাণে খাওয়ার কারণে কি কি ক্ষতি হতে পারে এ সমস্ত বিষয় আমাদেরকে জানা থাকতে হবে, কারণ গর্ভাবস্থায় শুধু নিজের ক্ষতি হবে এমনটি নয় বরং একটা নতুন প্রাণেরও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চিয়া সীড কত সময় ভিজিয়ে রাখতে হয়
চিয়া সীড কত সময় ভিজিয়ে রাখতে হয় এ বিষয়ে আমাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে কারণ আজকাল মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছে বিশেষ করে তাদের দৈনন্দিন জীবনে পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় চিয়া সিড রাখতে পছন্দ করে। এজন্য এটা খাওয়ার নিয়ম জানতেও মানুষ আগ্রহী। যেহেতু চিয়া সীড ভিজিয়ে খেতে হয় ভিজিয়ে না খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে তাই জানবো কত সময় ভিজিয়ে রাখতে হয়।
চিয়া সিড সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলেই ফুলে যায় এবং জেলির মতো আকার ধারন করে। কিন্তু সবচেয়ে ভালো ফল পেতে হলে কমপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ সময়ের মধ্যে বীজগুলো তাদের আসল আকার থেকে ১০ থেকে ১২ গুণ বৃদ্ধি পায় এবং চারপাশে জেলির মত তৈরি হয়। এই জেলির মত জিনিসটাই হজম করতে সাহায্য করে এবং এটি পাকস্থলীতে গিয়ে শক্তি যোগায়। তাই রাতে চিয়া সীড ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে চিয়া সীড সবসময় ভিজিয়ে খেতে হয়, ভিজিয়ে না খেলে হজম এবং গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিয়া সীড খেলে কি বুকের দুধ বৃদ্ধি পায়
চিয়া সীড খেলে কি বুকের দুধ বৃদ্ধি পায় বর্তমানে এই বিষয়টি নিয়ে সবাই কৌতুহলী কারণ হলো বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর প্রত্যেক মা চায় তার বাচ্চা যেন ভালোভাবে বুকের দুধ পায় কিন্তু বিভিন্ন কারণে মায়ের বুকের দুধ কম উৎপাদন হয় ফলে বাচ্চা সঠিক পরিমানে পায় না। এ কারণেই বুকের দুধ যেন বাচ্চা ঠিকভাবে পেতে পারে তাই প্রাকৃতিক কিছু খাদ্যের মাধ্যমে বুকের দুধ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে, এই খাদ্য তালিকার মধ্যে চিয়া সিড অন্যতম।
চিয়া সীড হলো সালভিয়া হিসপানিকা নামক এক ধরনের গাছের বীজ যা কালো বা ধূসর রঙের হয়। চিয়া সীডে আছে ক্যালসিয়াম, ফাইবার, আয়রন এন্টিঅক্সিডেন্ট যা বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তবে সরাসরি না করলেও পরোক্ষভাবে বৃদ্ধি করতে পারে এর পিছনে কয়েকটি কারণ আছে যেমন চিয়া সীডে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যা হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিখ রাখতে সহায়তা করে। আর হরমোন ঠিক থাকলে মায়ের বুকের দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
চিয়া সীড পানিতে ভিজিয়ে খেলে জেলির মত হয়ে যায় এবং শরীরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ব্রেস্টফিডিং মায়েদের পানির খুব প্রয়োজন কারণ তাদের শরীর থেকে তরল বের হয়ে যায়। শরীরের ভারসাম্য অনুযায়ী পানি থাকলে বুকের দুধ ভালো ভাবে তৈরি হয়।
মায়ের শরীরে যদি ক্যালসিয়াম ,আয়রন বা প্রোটিনের ঘাটতি থাকে তাহলে বুকের দুধ কমে যায়। চিয়া সীডে এই সমস্ত উপাদান গুলো থাকে যার ফলে গর্ভাবস্থায় শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং দুধ ভালো ভাবে উৎপাদন হয়।
চিয়া সীড কোন শক্তিশালী ঔষধ না তবে এটা পুষ্টিকর একটি খাবার। এটি সরাসরি বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সাহায্য না করলেও পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। একজন মা বাচ্চাকে দৈনন্দিন দুধ পান করার কারণে দুর্বল হয়ে যায় কিন্তু চিয়া সীড খাওয়ার কারণে সেই দুর্বলতা দূর হয়ে যায় এবং বাচ্চাকে দুগ্ধ পান করানোর পরও সুস্থ্য সবল থাকে।
গর্ভাবস্থার আগে কি চিয়া সীড খাওয়া উচিত
গর্ভাবস্থার আগে কি চিয়া সীড খাওয়া উচিত প্রশ্নটি মূলত চিয়া সীডের গর্ভধারণ প্রক্রিয়ায় ভূমিকাকে ইঙ্গিত করে। অর্থাৎ চিয়া সীডের মধ্যে এমন কোনো গুণ আছে কি যেটা গর্ভধারণে সহায়তা করে? চলুন জেনে নেওয়া যাক এই ব্যাপারে কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য।
চিয়া সীডে বিভিন্ন রকমের উপাদান যেমন ক্যালরি, আয়রন, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি থাকে যা সম্বিলিতভাবে ডিম্বানুর গুনগতমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখে যা গর্ভধারনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চিয়া সীড শরীরের হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক রাখে ফলে মেয়েদের মাসিক চক্র ও ডিম্বোস্ফোটন স্বতঃস্ফূর্ত হয় যা গর্ভধারন নিশ্চিত করতে মূল চালিকাশক্তি হিসবে কাজ করে। এছাড়াও এটি শরীরে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার মতো গুরুত্বপূর্ন কাজ করে। চিয়া সীড শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি জুগিয়ে মানসিক চাপ এবং বিভিন্ন ক্লান্তি দূর করতে সহায়তা করে যা গর্ভাবস্থার পূর্বে জরুরি। তাই বাচ্চা নেওয়ার পূর্বে গর্ভাবস্থার আগে শারীরিক সক্ষমতা অর্জনের জন্য চিয়া সীড খাওয়া উচিত।
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অনেকেরই ধারনা নেই। ছোট এই খাদ্যশস্যটিতে রয়েছে ভরপুর পুষ্টি। চলুন জেনে নেওয়া যাক চিয়া সীডের পুষ্টি উপাদানগুলো।
প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সীডে প্রধান যে পুষ্টি উপাদানগুলো থাকে তার তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
পুষ্টি উপাদান | পরিমান |
---|---|
ক্যালরি | ৪৮৬ কিলোক্যালরি |
ফাইবার | ৩৪.৪ গ্রাম |
প্রোটিন | ১৬ গ্রাম |
ফ্যাট (ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড) | ৩০.৭ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৬৩১ মিলিগ্রাম |
শর্করা | ৪২.১ গ্রাম |
আয়রন | ৭.৭ মিলিগ্রাম |
জিঙ্ক | ৪.৬ গ্রাম |
পটাশিয়াম | ৪০৭ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি | ৮.৮৩ মিলিগ্রাম |
চিয়া সীড গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের জন্য কি ভালো
চিয়া সিড গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের জন্য ভালো কিনা এ বিষয়ে সবাই জানতে চায় কারণ গর্ভাবস্থার আগে মায়ের ডায়াবেটিস না থাকলেও গর্ভধারণের পর ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর তাই ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টিকারী কোনো খাবার এই সময়ে খাওয়া যাবে না।
লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর কারনে চিয়া সীড রক্তে শর্করার পরিমান হঠাৎ বৃদ্ধি বা হ্রাস করে না। খুব সুক্ষ্মভাবে এটি রক্তে শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণ করে। আর শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্যঝুকি হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। চিয়া সীডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে। চিয়া সীডের অন্যান্য যে গুনাগুন যেমন ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ক্ষুধা কমানো, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ডায়াবেটিস রোগীদের ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করতে অনেকাংশে সাহায্য করে। আবার চিয়া সীডে এমন কোনো উপাদান পাওয়া যায় না যেটা গর্ভকালীন মায়েদের ডায়াবেটিস সমস্যার জন্য দায়ী। তাই চিয়া সীড গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো তবে অবশ্যই সঠিক পরিমানে খেতে হবে।
ওজন কমাতে চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম জানলে খুব সহজেই ঘরোয়া উপায়ে আপনি অতিরিক্ত ওজন, মেদ কমিয়ে স্লিম ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক তাহলে সেই পদ্ধতি।
যারা অতিরিক্ত ওজন, স্থুলতায় ভুগছেন তাদের মূল সমস্যা হলো খাওয়ার পরিমান না কমাতে পারা। অনেকেই জেনেটিক্যালি স্থুল স্বাস্থ্যের হয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাদ্যাভ্যাসের জন্য ওজন বৃদ্ধি পায়। চিয়া সীডে আছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার যা ক্ষুধা কম লাগা বা ক্ষুধা ক্ষুধা অনুভূতি দূর করতে সাহায্য করে। আর ক্ষুধা কম লাগলে ওজন কমানো অনেক সহজ হয়ে যায়। ওজন কমানোর জন্য চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম:
- ১-২ টেবিল চামচ চিয়া সীড ১ গ্রাস পানিতে ১৫-২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন এরপর পান করুন। আগেরদিন রাতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে খালি পেটে খেলে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- ওটসের সাথে খেতে পারেন চিয়া সীড। ওজন কমানোর জন্য ওটস একটি জাদুকরী খাবার। এতে থাকে অধিক পরিমানে ফাইবার কিন্তু ক্যালরি থাকে কম। ফলে বেশি খেয়ে পেট ভরলেও ক্যালরি বেশি না থাকায় ওজন বাড়ে না। সাথে চিয়া সীড যোগ করলে তা হবে আরও কার্যকরী। সকালের নাস্তায় ওটস, চিয়া সীড, দাড়চিনি এবং কিছু ফ্রুটস একসাথে ব্রেকফাস্ট হিসেবে খেতে পারেন।
- লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে খেলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস আর চিয়া সীড মিশিয়ে নিয়মিত খেতে হবে। এর কমপক্ষে ৩০ মিনিট পর ভারি খাবার খাবেন। তাহলে ওজন তো কমবেই সাথে পেটের মেদ কমবে। ঘুমাতে যাওয়ার আগেও এই পানিয়টি খেতে পারেন।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক টুকরা দাড়চিনি ও আদা এক কাপ পানিতে মিশিয়ে ভালো করে গরম করুন। এরপর এই পানি নামিয়ে তাতে যোগ করুন চিয়া সীড। এই পানীয়টি নিয়মিত খেলে ওজন কমানোর সাথে সাথে পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
- যারা ডায়েট করেন তাদের মধ্যে আফসোস থাকে যে, তারা রীচ ফুড যেমন বিরিয়ানি, ফাস্টফুড, অধিক তেল মশলাযুক্ত খাবার খেতে পারেন না। যদিও এসব খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর, তবুও রীচ ফুড খাওয়ার ৩০ মিনিট পর লেবু পানি ও গরম জল সাথে চিয়া সীডের পানীয়টি খেলে অতিরিক্ত ক্যালরি তাৎক্ষণিক হজম হয় এবং ওজন বৃদ্ধি হতে মুক্তি পাওয়া যায়।
- চিয়া সীড স্বাদহীন হওয়ায় অনেকে খেতে পারে না এক্ষেত্রে বিভিন্ন স্ন্যাকস, ডেজার্ট (পায়ের, ফিরনি, পুডিং) , স্মুদি, শরবতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
- চিয়া সীড আর এ্যালোভেরা মিশিয়ে খেলে শরীরের ওজন অনেক দ্রুত কমে যায়।
বাচ্চাদের চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম
বাচ্চাদের চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম প্রাপ্তবয়স্কের থেকে একটু আলাদা। অনেকে বাচ্চাদের চিয়া সীড খেতে দিতে চান তারা প্রথমে চিয়া সীড ঠিক কি কারনে খাওয়াবেন সেটা নির্দিষ্ট করুন। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের তুলনা বাচ্চাদের শারীরিক কার্যক্রম অনেক ভালো এবং সক্রিয় থাকে তাই তাদের বদহজম, পেট ফাঁপা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কিংবা শক্তির জন্য চিয়া সীড না খাওয়ানোই ভালো।
তবে অনেক বাচ্চার বয়সের তুলনায় ওজন অনেক বেশি থাকে তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিয়া সীড খাওয়াতে হবে। সাধারণত এক বছরের বেশি বয়স থেকে চিয়া সীড খাওয়ানো শুরু করতে হবে যদি বেশি প্রয়োজন পড়ে তাহলে। আর পরিমান অবশ্যই ১ টেবিল চামচ বা তার কম রাখতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির থেকে পরামর্শ নিয়ে খাওয়ানো।
প্রশ্নোত্তর পর্ব : গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার উপকারিতা ও প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় নিয়ে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আর্টিকেলের এই অংশে কিছু ছোট ছোট প্রশ্ন ও তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করব।
প্রশ্ন ১: গর্ভাবস্থায় কতটুকু চিয়া সীড খাওয়া শরীরের জন্য ভালো?
উত্তর : দৈনিক ১-২ টেবিল চামচ চিয়া সীড গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালো। এর বেশি খেলে শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন ২: রাতে চিয়া সীড খাওয়ার উপকারিতা কি কি?
উত্তর : রাতে চিয়া সীড খেলে ঘুম ভালো হয়, হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়, ওজন কমে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
প্রশ্ন ৩: চিয়া সীড খেলে কি শরীরের ক্ষতি হয়?
উত্তর : চিয়া সীড খেলে শরীরের ক্ষতি হয় না তবে চিয়া সীড যেহেতু পানি শোষন করে তাই বেশি বেশি পানি পান করতে হবে অন্যথায় পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। আবার মাত্রাতিরিক্ত চিয়া সীড খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
প্রশ্ন ৪: কাদের চিয়া সীড খাওয়া উচিত না?
উত্তর: চিয়া সীডে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম ও ফসফরাস থাকে যা কিডনির কার্যক্ষমতায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই কিডনি রোগীদের চিয়া সীড এড়িয়ে চলা ভালো।
প্রশ্ন ৫: গরম পানি দিয়ে কি চিয়া সীড খাওয়া যাবে?
উত্তর: চিয়া সীডকে কখনও তাপ দেওয়া উচিত না। এতে করে এর গঠনগত পরিবর্তন হয় এবং গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। তবে হালকা কুসুম গরম পানিতে চিয়া সীড মিশিয়ে খেতে পারেন।
লেখকের শেষ কথা: গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় চিয়া সীড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী থাকেন অনেকেই। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখতে চিয়া সীডকে একটি অত্যাবশ্যকীয় খাবার হিসেবে নেন। আজকের আর্টিকেলে তাই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনাদের আরও কিছু জানার থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করতে পারেন।
ফ্রিলার্নিং আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url