গর্ভবতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
গর্ভবতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এই সময়ে সঠিক খাদ্য যেমন প্রয়োজন তেমনি সহজলভ্য ও প্রাকৃতিক পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে কিসমিস হচ্ছে অন্যতম।
আবার অনেকেই গর্ভবতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানলেও বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করে না। আজকে আমরা গর্ভবতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় সম্পর্কে জানব।
পেজ সূচিপত্র : গর্ভবতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভবতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা
- খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয
- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীদের কিসমিস খাওয়া ঠিক কিনা
- কিসমিসের পুষ্টি উপাদান সমূহ
- কিসমিস খেলে কি মোটা হয়
- বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
- কোন ধরনের কিসমিস সবচেয়ে ভালো
- প্রশ্নোত্তর পর্ব: গর্ভ বতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
- লেখকের শেষ কথা গর্ভ বতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভবতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
- আয়রনের ঘাটতি পূরন : গর্ভাবস্থায় মহিলাদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা দেখা যায় তাই সব মায়ের আয়রন ট্যাবলেট গ্রহন করতে হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে থাকে ১.৯ মিলিগ্রাম আয়রন যা গর্ভবতী মায়ের আয়রনের ঘাটতি পূরন করে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
- ভিটামিন বি / ফলিক এসিড সরবরাহ : গর্ভাবস্থায় শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের গঠন, কোষ বিভাজনে সহায়তা সহ লোহিত রক্তকনিকা সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফলিক এসিড করে থাকে। কিসমিসে আছে যথেষ্ট পরিমান ফলিক এসিড যা মায়ের মাধ্যমে শিশুর শরীরে এসব গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে।
- ফাইবার সমৃদ্ধ: কিসমিসে থাকা ফাইবার মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে। গর্ভাবস্থায় নানান পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কারণে বদ হজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে নিয়মিত কিসমিস খাওয়ার কারণে হজমের সক্ষমতা বাড়ায়।
- কিসমিসে পটাশিয়াম থাকে যার কারণে হৃদ রোগের আশঙ্কা কমে যায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- কিসমিসে ক্যালসিয়াম থাকার কারণে হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে।অনেক সময় মায়ের পা এবং মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভূত হয় ক্যালসিয়ামের অভাবে। কিসমিস খেলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরন হয়।
- প্রোটিনে উৎস: কিসমিসে আছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন যা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিসমিস খেলে শিশুর শারিরীক গঠন উন্নত হয় এবং মায়ের প্রোটিনের চাহিদা পূরন করে মাকে শক্তিশালী রাখতে সহায়তা করে।
- কিসমিসে আছে শর্করা যা প্রাকৃতিক মিষ্টি হিসেবে কাজ করে। এতে করে চিনি ছাড়াই খাবার মিষ্টি করা যায় ফলে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস প্রতিরোধ সম্ভব হয়। শর্করা শক্তির আধার হিসেবেও পরিচিত তাই মায়ের কাজ করার শক্তি যোগায়।
- গর্ভকালীন সময়ে মানসিক চাপ মন খারাপ ইত্যাদি এগুলো স্বাভাবিক বিষয়। কিসমিসে থাকা ভিটামিন বি ও ম্যাগনেসিয়াম নার্ভ শান্ত রাখতে সহায়তা করে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট : কিসমিসে রয়েছে পলিফেনলস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা কোষীয় ক্ষয় রোধ করার মাধ্যমে কোষ রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। চুল পাতলা ও ধূসর হওয়া রো করে এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।
- কিসমিস লোহিত রক্তকনিতার গঠনে সহায়তা করে। লোহিত রক্তকনিকা প্রতি ৪ মাসে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়, কিসমিস এই লোহিত রক্তকনিকার পুনর্গঠনে সাহায্য করে।
- হজমশক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্ষুধা বাড়ায়। গর্ভাবস্থায় মায়েরা বেশি খেতে পারেন না আর এজন্য তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে ও পুষ্টিহীনতায় ভোগেন। কিসমিস খেলে ক্ষধা বাড়ে তাই তারা পর্যাপ্ত পরিমান খেতে পারে।
- কিসমিসে থাকে ভিটামিন সি যা মায়ের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাতৃত্বের দাগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
- কিসমিসে থাকে ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিনারেলস যা হরমোনের কাজ নিয়ন্ত্রণ, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও অসমোটিক প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে। এটি রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে শরীর সুস্থ রাখে।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া নিয়ম সম্পর্কে না জেনে মাত্রাতিরিক্ত কিসমিস খেয়ে ফেললে ক্ষতি হতে পারে। যেহেতু কিসমিস গর্ভধারিনী মা এবং গর্ভে বাচ্চার জন্য খুবই উপকারী তাই এটা খাওয়া যায় তবে পরিমাণ মত নিয়মিত খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার নিয়ম -
- গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম কিসমিস খাওয়া স্বাভাবিক। খাওয়ার পরিমাণ বেশি হলে আবার ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা আছে। দিনে একমুঠো কিসমিস সকালে খালি পেটে, রান্নার সাথে কিংবা ড্রাই ফ্রুটের সাথে মধু দিয়ে খেতে পারেন।
- সকালবেলা খালি পেটে কিসমিস খেতে পারেন। অথবা রাতের বেলায় ছোট একটা পাত্রে কিছু কিসমিস পানি অথবা দুধ দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে খালি পেটে এই পানি / দুধ ও কিসমিস খান। এতে করে বেশি পুষ্টি পাওয়া যাবে এব সহজে হজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
- অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে মিক্স করে খাওয়া যেমন সালাদ, খেজুর, বা সকালের নাস্তার সাথে। শুকনো ফল, বাদাম, আখরোট, সীডস, তিল, কালোজিরা, মধু ও কিসমিস একসাথে মিক্স করে স্ন্যাকস হিসেবে খেলেও ভালো উপকার পাওয়া যাবে। এতে করে গর্ভবতী মায়ের সবরকমের পুষ্টির চাহিদা পূরন হবে।
- বাজার থেকে কিসমিস ক্রয় করলে বিভিন্ন সময়ে কিসমিসের সঙ্গে ময়লা লেগে থাকে এইজন্য খাওয়ার সময় কিসমিস ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া জরুরি।
- অনেকেই কিসমিস ভিজিয়ে রাখা পানি ফেলে দেন কিন্তু এই পানি ফেলে না দিয়ে যদি কিসমিস ভেজানো পানিটা পান করলে এটাও গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেক উপকারী হবে।
- সর্বোপরি কিসমিস খাওয়ার পূর্বে যদি ডায়াবেটিস বা অন্য কোন রোগ শরীরে থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই সর্বপ্রথম ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- বিভিন্ন রান্না যেমন পায়েস, ফিরনি বা ডেজার্ট রেসিপিতে কিসমিস ব্যবহার করেও খাওয়া যায়।
গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা
গর্ভ অবস্থায় কিসমিস খাওয়ার অপকারিতাও রয়েছে যদিও কিসমিস একটি প্রসিদ্ধ পুষ্টিকর খাবার হিসেবে ধরা হয়। এতে প্রাকৃতিক উপাদান যেমন চিনি, ফাইবার , আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এ কারণেই অনেকেই ভাবে এটি গর্ভবতী মা এবং সন্তানের জন্য উপকারী। কিন্তু আমরা যদি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে বুঝতে পারবো এই ছোট শুকনো ফলটিও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য কিছু অপকারিতা বয়ে নিয়ে আসে বিশেষ করে অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে। নিম্নে গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
প্রথমতঃ কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক শর্করা (গ্লুকোজ) বা চিনি থাকে, যার ফলে গর্ভাবস্থায় বেশি কিসমিস গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ অবস্থায় পেটের বাচ্চার স্বাভাবিক ওজন থেকে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে এবং প্রসবের সময় বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।
দ্বিতীয়তঃ কিসমিসে থাকা ফাইবার হজমের জন্য উপকার হলেও বেশি গ্রহণের কারণে গ্যাস বা পেট ফাঁপা শুরু হয়ে যায়। অনেক নারী গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই হজমজনিত সমস্যায় ভোগেন কিসমিস বেশি গ্রহণ করার কারণে তাদের জন্য এটা হতে পারে অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা। আবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়ার পরিবর্তে বাড়তেও পারে।
তৃতীয়তঃ বাজারে আমরা যে সমস্ত কিসমিস দেখতে পাই সেগুলো বিভিন্ন পদার্থের সংমিশ্রণ থাকে যেটা গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শরীরে বিষের মতো কাজ করে। গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই বিশুদ্ধ কিসমিস যাচাই করে কিনে আনতে হবে।
চতুর্থতঃ কিসমিসে বিভিন্ন উপাদান থাকার কারণে এলার্জি হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এতে ত্বকে চুলকানি শ্বাসকষ্ট ও বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পরিমিত পরিমাণ খেলে এই সমস্যা হবে না।
মনে রাখতে হবে কিসমিস যতই প্রাকৃতিক খাদ্য হোক বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে ওজন বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। এজন্য সব সময় পরিমাণ মতো গ্রহণ করতে হবে।
খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয়
খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয় এই ধারনা অনেকেরই নেই। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রত্যেকটি মানুষ চিন্তা করে খালি পেটে আমি কি খাব কি খেলে আমার দেহের জন্য উপকারী হবে কেউ লেবুর শরবত খায় কেউবা বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু আপনি কি জানেন? ছোট্ট একটি শুকনো ফল খালি পেটে খেলে আমাদের দেহের জন্য করতে পারে বড় পরিবর্তন। খালি পেটে কিসমিস খেলে কি হয় চলুন আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কিছু আলোচনা করিঃ
খালি পেটে কিসমিস খেলে পেট খুব সহজেই পরিষ্কার হয়ে যায় এতে থাকা প্রাকৃতিক আঁশ পাকস্থলীর ময়লা দূর করে দেয়। সকালে খালি পেটে কিসমিস খেলে শরীর থেকে টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) বের হয়ে যায় ফলে ত্বক ঝকঝকে হয় মুখ থেকে ব্রণ কমে যায়।
কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। খালি পেটে কিসমিস খেলে কিসমিসের উপাদান গুলি সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে এতে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ে ও প্রোটিন শোষন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যাদের মাথা ঝিমঝিম করে বা শরীর দুর্বল তাদের জন্য খালি পেটে কিসমিস খাওয়া খুবই উপকারী।
সকালে ভিজিয়ে রাখা কিসমিস খেলে লিভার পরিষ্কার রাখে এবং ওজন কমে। খালি পেটে কিসমিস খেলে কিসমিসের উপাদানগুলি তাৎক্ষণিক শরীরে কাজ করে যার ফলে সারাদিন একটিভ থাকা যায়। এটি শরীর ও মন দুটোই ভালো রাখে।
খালি পেটে কিসমিস খাওয়া একটি ছোট অভ্যাস কিন্তু এর উপকার অনেক বেশি। এটি প্রাকৃতিক, সহজ এবং প্রতিদিনকার রুটিনে রাখা যায়। তাই খালি পেটে কিসমিস খান সুস্থ থাকুন প্রাণবন্ত থাকুন।
আরও পড়ুন : কালোজিরা তেল বানানোর ৩টি সহজ পদ্ধতি বিস্তারিত জানুন
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীদের কিসমিস খাওয়া ঠিক কিনা
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগীদের কিসমিস খাওয়া ঠিক কি না তা এই অংশে আলোচনা করব। কিছু কিছু মহিলা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন আবার কেউ আগে থেকেই ডায়াবেটিসে ভোগেন। তখন খাবার খাওয়ার সময় সাবধানে চলতে হয়।
আমরা সবাই জানি কিসমিস হল একটি মিষ্টি জাতীয় খাদ্য এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকে। এতে কিছু উপকারী উপাদান থাকে যেমন ফাইবার, আয়রন, এন্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি। ১০০ গ্রাম কিসমিসে শর্করা বা চিনির পরিমান থাকে প্রায় ৩.১ গ্রাম যা এতে থাকা উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এই অধিক পরিমাণ শর্করা ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যা করতে পারে অথবা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস এর কারন হতে পারে।
কিসমিসে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি যার কারণে ব্লাড সুগার খুবই তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পায়। গর্ভবতী নারীদের জন্য এটা বিপদজনক হতে পারে। শিশু এবং গর্ভবতী মা উভয়েই ঝুঁকিতে পড়তে পারে। মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় যেই খাবারই খাই না কেন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে বিশেষ করে চিনিযুক্ত কিসমিসের মতো খাদ্য। যদি ডায়াবেটিস থেকে থাকে তাহলে কিসমিস খাওয়া থেকে বিরত থাকাটাই ভালো।
কিসমিসের পুষ্টি উপাদান সমূহ
কিসমিসের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। কিসমিস হলো আঙ্গুর শুকিয়ে তৈরি করা মিষ্টি ও শক্তিদায়ক একটি খাবার। দেখতে ছোট হলেও পুষ্টিতে ভরপুর। অনেকেই এটি নাস্তা,দুধ ,এবং রান্নার সাথে ব্যবহার করে থাকে। আসুন দেখে নেই কিসমিসের পুষ্টি উপাদানসমূহ কি কিঃ
- কার্বোহাইড্রেট(শর্করা): কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে শর্করা বা চিনি থাকে। এই চিনি দ্রুত শক্তি যোগায় যারা দুর্বল এবং ক্লান্ত বোধ করেন তাদের জন্য কিসমিস ভালো উৎস হতে পারে।
- ফাইবার (আঁশ): কিসমিস হলো রাফেজ জাতীয় খাবার। এতে অনেক ফাইবার থাকে যেটা হজম শক্তি বাড়াতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
- আয়রন: কিসমিসে থাকা আয়রন দেহের রক্তশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে এবং লোহিত রক্তকনিকা গঠনে ভূমিকা রাখে।
- মিনারেল: বিভিন্ন মিনারেলস যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম থাকে কিসমিসে যা শরীরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে পটাশিয়াম হৃদযন্ত্র ভালো রাখে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড় গঠনে সাহায্য করে ইত্যাদি।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে টক্সিন দূর করে যার ফলে ত্বক ও শরীর সুস্থ রাখে।
- ভিটামিন: ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ( বি১,বিই২,বি৬) এইসব শরীরের শক্তি উৎপাদন ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এসব ভিটামিন শরীরে ভিটামিনের অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
কিসমিস দেখতে ছোট হলেও এর ভিতরে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী কিন্তু সেটা নিয়মিত পরিমাণ মতো গ্রহণ করতে হবে
কিসমিস খেলে কি মোটা হয়
কিসমিস খেলে কি মানুষ মোটা হয়? এই প্রশ্ন শুনে অনেকে হাস্যকর ভাবলেও স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা কোন খাবার খাওয়ার পূর্বে চিন্তা করে এটা খেলে কি আমি মোটা হব নাকি আমার ওজন বাড়বে ইত্যাদি। কিসমিস খেলে মোটা হয় কিনা আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
কিসমিস দেখতে ছোট হলেও এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে প্রায় ৩০০ কিলোক্যালোরি শক্তি থাকে। তাই যারা নিয়ম ছাড়া বেশি কিসমিস খান তাদের ওজন বাড়তে পারে। আবার এতে প্রাকৃতিক উপাদান চিনি থাকে বেশি পরিমাণে চিনি খাওয়ার কারণে শরীরের চর্বি জমে যায় যার ফলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অতএব কিসমিস খেলে মোটা হবেন কি না এটা নির্ভর করবে আপনার উপরে আপনি যদি পরিমাণের অতিরিক্ত গ্রহণ করেন তাহলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিপরীতে পরিমান মত গ্রহণ করলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
আরও পড়ুন: পাতি লেবুর ১০ টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানুন
বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অনেক। সন্তান বেড়ে ওঠার জন্য পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই, মা বাবারাও ঠিক এমনই খাবার খুঁজে থাকেন যেটা খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি শরীরের জন্য উপকারী। চলুন জেনে নেই বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
কিসমিসে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে তাড়াতাড়ি শরীরে শক্তি যোগায়। বাচ্চারা সারাদিন খেলাধুলা, স্কুল থেকে এসে ক্লান্ত এবং দুর্বল হয়ে যায় তখন বাচ্চাকে কিসমিস খাওয়ান পুনরায় ফুরফুরা হয়ে যাবে। কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আয়রন শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে যা বাচ্চার মস্তিষ্ক ভালো রাখে। যার মাধ্যমে বাচ্চার পড়াশুনায় মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। ছোটবেলায় বাচ্চাদের বিভিন্ন রোগের দেখা দেয় বিশেষ করে বদহজমের কিসমিসে থাকা ফাইবার বদহজমকে দূর করে।
কিসমিসে থাকা আয়রন বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা, দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম নামক খনিজ পদার্থ থাকে যা দাঁত ও হাড় গঠনে সহায়তা করে। কিসমিসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ভিটামিন বাচ্চাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এতে বাচ্চাদের সর্দি এবং বিভিন্ন ভাইরাস জনিত রোগ হয় না।
কোন ধরনের কিসমিস সবচেয়ে ভালো
কোন ধরনের কিসমিস সবচেয়ে ভালো এটা নিয়ে সবাই বিভ্রান্তিতে থাকে। আমাদের সুপরিচিত ছোট একটা ফল যেটা আঙ্গুর শুকিয়ে তৈরি করা হয়। ছোট হলেও এর ভিতরে ক্যালসিয়াম ফাইবার আরো বিভিন্ন ভিটামিনে ভরপুর। তবে প্রশ্ন হল আঙ্গুরের বিভিন্ন জাতের সবচাইতে ভালো এবং পুষ্টিতে ভরপুর কোন ধরনের কিসমিস? আসুন এই বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করি।
কালো কিসমিসঃ এটা সাধারণত কালো এবং বাদামি রঙের হয়। রোদের তাপে শুকানো হয় কোন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না। এতে উপকারিতা বেশি থাকে। সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর কিসমিস এটাকেই ধরা হয়
সোনালী কিসমিসঃ হালকা হলুদ বা সোনালী রঙের হয়। এটা রাসায়নিক দিয়ে শুকানো হয় যাতে রং নষ্ট না হয়। দেখতে আকর্ষণীয় স্বাদে হালকা মিষ্টি। তবে কেমিক্যাল ব্যবহারের জন্য সংবেদনশীল লোকদের জন্য গ্রহণ করা ঝুঁকিপূর্ণ।
সবুজ কিসমিসঃ এটি চিকন লম্বাটে এবং হালকা সবুজ। হালকা প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে তৈরি করা হয়। টক- মিষ্টি যা শিশুদের কাছে অনেক প্রিয়। এটা মুখের রুচি বাড়ায় ,হজম শক্তির জন্য কিছু উপকার দেয়।
উল্লেখিত কিসমিসগুলো স্বাস্থ্যকর এবং গুণগতমানের দিক থেকে ভালো। এছাড়া বিভিন্ন মার্কেটে আরো অনেক কিসমিস পাওয়া যায় যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য বাজারে ভালো জাতের কিসমিস গ্রহণে সচেষ্ট থাকতে হবে।
প্রশ্নোত্তর পর্ব : গর্ভ বতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভ বতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তবুও অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন থেকেই যায়। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা এরকমই কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তর নিয়ে আলোচনা করব।
প্রশ্ন ১: প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত?
উত্তর : প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ২৫-৩৫ গ্রাম কিসমিস খাওয়া উচিত।
প্রশ্ন ২: কিসমিস কেলে কি গর্ভপাত হয়?
উত্তর : কিসমিস একটি স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্য। বিশেষজ্ঞ এবং ডাক্তাররা নিশ্চিত করেছেন যে গর্ভাবস্থায় পরিমিত পরিমাণ কিসমিস খেলে গর্ভবতী মায়ের কিলবা বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয় না বরং এটি উপকারি।
প্রশ্ন ৩: কিসমিস কি হিমোগ্লোবিন বাড়ায়?
উত্তর : কিসমিসে আছে আয়রন যেটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৪: কিসমিসে কত ক্যালরি থাকে?
উত্তর: ১০০ গ্রাম কিসমিসে প্রায় ৩০০ কিলোক্যালরি শক্তি থাকে।
প্রশ্ন ৫: কালো কিসমিস কি গর্ভবতী হতে সাহায্য করে?
উত্তর: কালো কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি যা প্রজনন স্বাস্থের জন্য উপকারি। তাই কিসমিস উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য সাহায্য করতে পারে।
প্রশ্ন ৬: কালো কিসমিস কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে?
উত্তর : কিসমিস সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং সকালে এই ভিজানো পানি ও কিসমিস পান করতে হবে। এর অনেক উপকারিতা আছে।
প্রশ্ন ৭: কিসমিস কাদের জন্য খাওয়া উচিত নয়?
উত্তর : কিসমিস মূলত আঙ্গুর থেকে তৈরি করা হয়। এর মধ্যে থাকা সালফেট নামক উপাদানটিতে অনেকের এলার্জি থাকে। তাই যাদের সালফেটে এলার্জি আছে তাদের কিসমিস খাওয়া উচিত নয়। আবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও কিসমিস খাওয়া ক্ষতিকর। তাই ডায়াবেটিস রোগীদেরও এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
প্রশ্ন ৮: কালো কিসমিস ও হলুদ কিসমিসের মধ্যে কোনটা ভালো?
উত্তর : আঙ্গুরকে রোদে শুকানোর ফলে কিসমিসের রং কালো বা হালকা ধূসর রঙের হয় এটাই স্বাভাবিক। এর সাথে কিছু রাসায়নিক মিসিয়ে এটিকে হলুদ বা সোনালি রঙের করা হয়। তাই হলুদ কিসমিসের থেকে কালো কিসমিস ভালো।
প্রশ্ন ৯: ১ কেজি কিসমিস কত টাকা?
উত্তর : বাজারে সাধারণত ইরানি, বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি কিসমিস পাওয়া যায়। সব কিসমিসের দাম একরকম হয় না। তবে গড়ে ১ কেজি কিসমিসের দাম ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন ১০: কোন কিসমিস খেলে ত্বক ফর্সা হয়?
উত্তর : কিসমিস খেলে ত্বক ফর্সা হয় না তবে কিসমিসে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে খুব অল্প পরিমানে। এক্ষেত্রে কালো কিসমিস সবচেয়ে ভালো হবে।
লেখকের শেষ কথাঃ গর্ভবতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভবতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করেছি। গর্ভাবস্থায় সবাই অনেক দুশ্চিন্তায় থাকেন কোন ধরনের খাবার খাওয়া যাবে, কোনটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর বা উপকারী ইত্যাদি বিষয় নিয়ে।
তাই আমরা গর্ভবতী মায়েদের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা বর্ণনার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতা, সঠিক নিয়মে খাওয়ার পদ্ধতি ও পরিমাণ সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আর্টিকেল সম্পর্কে কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করতে পারেন। এরকম আরও তথ্যবহুল লেখা পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট।
ফ্রিলার্নিং আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url