ধুতরা গাছের শিকড়ের ১০টি উপকারিতা জানুন

 ধুতরা গাছের শিকড়ের উপকারিতা যেমন আছে তেমনি এর অপকারিতা সম্পর্কেও নানা বিশ্বাস প্রচলিত আছে। প্রাকৃতি নানা গাছপালা আমাদের জন্য ওষুধের মতো কাজ করে, ঠিক তেমনই এক রহস্যময় গাছ হলো ধুতরা।

ধুতরা-গাছের-শিকড়ের-উপকারিতা

বিশেষ করে এর শিকড় দীর্ঘদিন ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে। ধুতরা গাছের শিকড়ে থাকে এমন কিছু শক্তিশালী উপাদান যা ঔষধি গুণে ভরপুর। আজকের আর্টিকেলে আমরা ধুতরা গাছ এর শিকড়ের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।

পেজ সূচিপত্র: ধুতরা গাছের শিকড়ের উপকারিতা 

ধুতরা গাছের শিকড়ের উপকারিতা

ধুতরা গাছের শিকড়ের উপকারিতা, এখনও মানুষ ধুতরা উদ্ভিদ থেকে নানাভাবে উপকৃত হয়।  ধুতরা এক ধরনের বুনো উদ্ভিদ যার ফুল, পাতা, বীজ এবং শিকড় প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদ ও লোকচিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ধুতরা গাছের শিকড় বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে উপকারী হিসেবে পরিচিত।
ধুতরা (Datura) গাছটি সাধারণত মাঝারি আকারের হয় এবং গাছে বড় আকৃতির বেগুনি বা সাদা ফুল ফোটে। এটি বিষাক্ত উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত হলেও সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এতে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এই গাছের শিকড়ের গঠন সরু ও ধূসরাভ এবং এতে থাকে শক্তিশালী ওষুধি গুণ।তার কিছু গুনাগুন নিচে আলোচনা করা হলো: 
  • ধুতরা শিকড়ে থাকা উপাদানগুলো স্নায়ুবিক ব্যথা কমাতে সাহায়তা  করে। যারা দীর্ঘদিন ধরে বাত, জয়েন্টের ব্যথা বা নার্ভের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য ধুতরা শিকড় ব্যবহার আরামদায়ক হতে পারে। শিকড়গুলো গুঁড়ো করে সরিষার তেলের সঙ্গে মিক্স করে  আক্রান্ত স্থানে মালিশ করলে ব্যথা কমে।
  • ধুতরা শিকড়ের ধোঁয়া শ্বাসনালীর প্রদাহ ও সংক্রমণ প্রশমনে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদ মতে, শিকড় শুকিয়ে নিয়ে ধূপ বা ধোঁয়ার মতো ব্যবহার করলে তা ফুসফুসে জমে থাকা কফ পরিষ্কার করে এবং শ্বাস নিতে সহজ হয়। তবে এই পদ্ধতি খুব সতর্কভাবে প্রয়োগ করতে হয়।
  • অনেক প্রাচীন  সময়ে আয়ুর্বেদিক পদ্ধতিতে ধুতরার শিকড় মৃগী রোগে ব্যবহৃত হতো। শিকড়ের নির্যাস মাথায় বা জিহ্বার নিচে প্রয়োগ করলে খিঁচুনির মাত্রা কমে যেতে পারে।
  • ধুতরা শিকড়ের পেস্ট চুলকানি, খোসপাঁচড়া বা চামড়ার ফুসকুড়িতে ব্যবহার করা হয়। এটি অ্যান্টিসেপটিকের মতো কাজ করে। বিশেষ করে শিকড়ের রস বা গুঁড়োকে তিলের তেলে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল মেলে।
  • গ্রাম বাংলার অনেকে ধুতরার শিকড় জলে সিদ্ধ করে সেই পানি গরম গরম পান করান ঠান্ডাজনিত জ্বরের ক্ষেত্রে। এতে শরীর ঘামে এবং তাপমাত্রা কমে যায়।
  • ধুতরার শিকড় সেদ্ধ করে সেই পানি গাঁটে গাঁটে সেঁক দিলে গেঁটেবাতজনিত ব্যথা ও ফোলা ভাব কমে আসে। এটি রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে ও প্রদাহ প্রশমনে সাহায্য করে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য এটি এক দারুণ ঘরোয়া সমাধান হতে পারে।
  • আয়ুর্বেদ মতে, ধুতরার শিকড় থেকে তৈরি তেল বা নির্যাস কপালে হালকা ম্যাসাজ করলে মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের ব্যথা কিছুটা হ্রাস পায়। এটি স্নায়ুর চাপ কমায় এবং মস্তিষ্ককে শীতল রাখতে সাহায্য করে।
  • ধুতরার শিকড় পিষে সরাসরি পোকামাকড়ের কামড় দেওয়া জায়গায় লাগালে চুলকানি কমে এবং বিষক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া হ্রাস পায়। বিশেষ করে মশা বা পিঁপড়া কামড়ের পর এই মিশ্রণটি লাগালে তাৎক্ষণিক আরাম পাওয়া যায়।
  • আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ধুতরার শিকড় থেকে তৈরি নির্যাস বা গুঁড়োকে নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করে ঘুমের সমস্যা ও মানসিক অস্থিরতা কমানোর জন্য দিয়ে থাকেন। এটি স্নায়ুকে প্রশমিত করে ও ঘুম আনতে সাহায্য করে। তবে এটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগযোগ্য, কারণ মাত্রা বেশি হলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
  • ধুতরার শিকড় শুকিয়ে তা গুঁড়ো করে লবণ ও সরিষার তেলের সাথে মিশিয়ে দাঁতে ও মাড়িতে ঘষলে দাঁতের ব্যথা, মাড়ি ফুলে যাওয়া বা রক্ত পড়ার মতো সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। এই প্রাকৃতিক মিশ্রণ জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে এবং মুখগহ্বরকে জীবাণুমুক্ত রাখতে সহায়ক।
ধুতরা গাছের শিকড় যেমন রোগ নিরাময়ে উপকারী, তেমনি ভুল ব্যবহার করলে ক্ষতিকরও হতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা কবিরাজের পরামর্শ ছাড়া এই গাছের কোনো অংশই ব্যবহার করা ঠিক না। সঠিক নিয়মে, পরিমাণ অনুপাতে এবং অভিজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী এই প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে তা অনেক রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। প্রাচীন চিকিৎসা শাস্ত্রে ধুতরার গুরুত্ব অনেক এবং আধুনিক গবেষণাতেও এই শিকড়ের গুণাগুণ নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে।

ধুতরা গাছের অপকারিতা

ধুতরা গাছের অপকারিতা সম্পর্কে নানা ধরনের বিশ্বাস ও ভ্রান্ত ধারনা মানুষের মাঝে প্রচলিত আছে। এর বেশিরভাগই ভুল, তবে এই উদ্ভিদের অপকারিতাও অনেক আছে। ধুতরা (Datura) একটি উপকারি গাছ হলেও এর ভুল ব্যবহার ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে। এই গাছের পাতা, বীজ, ফুল এবং শিকড় সবই অত্যন্ত বিষাক্ত। অনেক সময় গ্রামের মানুষ নানা রোগে এই গাছের অংশ ব্যবহার করে থাকে, তবে চিকিৎসকের সাথে  পরামর্শ ছাড়া ধুতরা ব্যবহার জীবনঘাতী হতে পারে। নিচে ধুতরা গাছের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অপকারিতা সহজ ভাষায় তুলে ধরা হলো: 

  • ধুতরা গাছের সব অংশেই থাকে ট্রোপেন অ্যালকালয়েড নামক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যেমন: অ্যাট্রোপিন, হায়োসিয়ামিন ও স্কোপোলামিন। এইসব উপাদান যদি বেশি পরিমাণে  খাওয়া হয়, তাহলে শরীরে বিষক্রিয়া শুরু হয়। এতে মাথা ঘোরা, বমি, ঘাম হওয়া, চোখে অন্ধকার দেখা, এমনকি জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা তৈরি হতে পারে।
  • ধুতরা বীজ বা পাতা খেলে অনেক সময় মানুষ হ্যালুসিনেশন (অবাস্তব জিনিস দেখা বা শোনা) অনুভব করে। এতে মানুষ নিজের দিক-বেদিক ভুলে যেতে পারে এবং মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে ধুতরা খেয়ে মানুষ উন্মাদ হয়ে গেছে এবং পরে মৃত্যুবরণ করেছে।
  • ধুতরার বিষাক্ত উপাদান রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে তোলে। এটি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই যাদের হার্টের সমস্যা আছে, তাদের ধুতরার ধারে কাছেও যাওয়া ঠিক না।
  • ধুতরার গন্ধ বা ধোঁয়াও অনেক সময় সংবেদনশীল মানুষের জন্য ক্ষতিকর হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী এবং ছোট শিশুরা এর প্রভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে এটি গর্ভপাত ঘটাতে পারে।
  • অনেক সময় ধুতরার পাতার রস বা গুঁড়ো চোখে লাগলে চোখ লাল হয়ে ফুলে যায় এবং দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে। যদি দ্রুত চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা থাকে।
  • কিছু মানুষ ধুতরার বীজ বা রস মাদক হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এটি একধরনের মানসিক আসক্তি তৈরি করে। প্রথমে নেশা করে ভালো লাগলেও পরে তা ভয়ংকর রোগে রূপ নেয় যেমন স্মৃতি লোপ, খিঁচুনি, এবং এমনকি পাগল হয়ে যাওয়া।
  • ধুতরার ডোজ একটু বেশি হলেই মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। বিশ্বজুড়ে বহু মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে শুধুমাত্র ধুতরা গাছের ভুল ব্যবহার করার কারণে।
ধুতরা গাছ যেমন কিছু রোগে কাজ করতে পারে, তেমনি এটি সঠিক জ্ঞান ছাড়া ব্যবহার করলে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাই এই গাছ কখনোই নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহার করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ধুতরার যেকোনো অংশ খাওয়া বা লাগানো বিপজ্জনক। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।

ধুতরা ফল খেলে কি হয়

ধুতরা ফল খেলে কি হয় তা জানা জরুরি। ধুতরা গাছ অনেকেই চেনেন না, কিন্তু এটি একটি বিষাক্ত উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে এর ফল দেখতে সুন্দর হলেও  এটি খাওয়া অত্যন্ত বিপদজনক । আমাদের দেশে বিভিন্ন  জায়গায় এই গাছ নিজে থেকেই জন্মে, বিশেষ করে পরিত্যক্ত জমি, রাস্তার পাশ, কিংবা ঝোপঝাড়ে। এই ফল খেলে শরীরে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়, তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ সচেতনতা জীবন বাঁচাতে পারে।

ধুতরা গাছের প্রতিটি অংশ পাতা, ফুল, বীজ ও ফল বিষাক্ত উপাদানে ভরা।
ধুতরা ফলে কিছু মারাত্মক উপাদান থাকে, যার  মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো:
  • ট্রোপিন অ্যালকালয়েড (Tropine alkaloid)
  • স্কোপোলামিন (Scopolamine)
  • হায়োসিয়ামিন (Hyoscyamine)
এই উপাদানগুলো স্নায়ুতন্ত্রে সরাসরি প্রভাব ফেলে এবং শরীরের স্বাভাবিক কার্যপ্রণালী ব্যাহত করে। ধুতরা ফলের বিষক্রিয়া প্রভাবের মাধ্যমে শরির বিভিন্ন সমস্যাার সম্মুখীন হয় যেমন : 
  1. ধুতরা ফল খেলে প্রথম দিকেই মাথা ঘোরানো, চোখে ঝাপসা দেখা এবং বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়।
  2. মুখ একেবারে শুকিয়ে যায়, পানি খেলেও আরাম পাওয়া যায় না। এটা স্নায়ুতন্ত্রের বিকৃতির ফল।
  3. হঠাৎ করেই হৃৎপিণ্ড দ্রুত গতিতে স্পন্দন করতে থাকে। এতে বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
  4. বিষক্রিয়ার কারণে পেটের ভেতরে গণ্ডগোল শুরু হয়, যা বমি ও পেটব্যথা সৃষ্টি করে।
  5. অনেক সময় ধুতরা ফল খাওয়ার পর মানুষ বাস্তবতা ভুলে যায়, ভ্রান্ত ধারনায় ভোগে। কেউ কেউ একেবারে  জ্ঞানহারা হয়ে যেতে পারে। 
  6. অতিরিক্ত পরিমাণে ধুতরা ফল খেলে প্রাণঘাতী বিষক্রিয়ার শিকার হওয়া অসম্ভব নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ধুতরা বিষ খেয়ে মৃত্যুর বহু ঘটনা রয়েছে
ধুতরা ফল দেখতে যতই মুগ্ধকর হোক না কেন, এটি একটি ভয়ংকর বিষাক্ত ফল। এটি খেলে শরীরের স্নায়ুতন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলে এবং প্রাণঘাতীও হতে পারে। শুধু খাওয়া না বরং এটি স্পর্শ, ঘ্রাণ নেওয়া ও শরীরে লাগালেও হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি। সচেতনতা এবং সতর্কতাই একমাত্র উপায় এই গাছের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার।

ধুতরা পাতার ঔষধি গুণ

ধুতরা পাতার ঔষধি গুণ কমবেশি সবাই জানি।ধুতরা পাতা পরিত্যক্ত জায়গায় হলেও এর গুণাগুণ অনেক বেশি।যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসাবে কাজ করে। নিম্নে ধুতরা পাতার ঔষধি গুণ  নিয়ে কিছু আলোচনা করা হলো:

  • ব্যথা উপশম: ধুতরা পাতার রস বা পাতা গরম করে ব্যথার স্থানে লাগালে তা আরাম দেয়।
  • বিশেষ করে যন্ত্রণাদায়ক বাত, গাঁটে ব্যথা, কিংবা পিঠের ব্যথায় এটি ব্যবহার করা হয়।
  • ধুতরা পাতার তেল বানিয়ে আক্রান্ত স্থানে মালিশ করলেও ব্যথা কমে।
  • অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টে উপকারী: আয়ুর্বেদ মতে, ধুতরার শুকনো পাতা পুড়িয়ে তার ধোঁয়া শ্বাস নিলে অ্যাজমার উপসর্গ হ্রাস পায়। এটি শ্বাসনালির সংকোচন কমিয়ে কিছুটা আরাম দেয়।
  • ত্বকের সমস্যার সমাধান: ধুতরা পাতার রস ফোঁড়া, পুজ হওয়া ঘা, বা চুলকানির জায়গায় লাগালে সংক্রমণ কমতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক উপাদান, যা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
  • নাক বন্ধ ও মাথাব্যথায় উপকার:  অনেকে ধুতরার পাতা শুকিয়ে গুঁড়া করে তার ধোঁয়া নাকে টেনে নেয় যা সর্দি, নাক বন্ধ ও সাইনুসাইটিস উপশমে সাহায্য করতে পারে। তবে অতিরিক্ত ব্যবহার করলে  বিপরীত হতে পারে।
  • পোকামাকড় কামড়ের চিকিৎসায়: ধুতরার পাতা চটকে কামড়ের স্থানে লাগালে বিষের প্রতিক্রিয়া কিছুটা কমে যেতে পারে।  বিশেষ করে পিঁপড়া, মাকড়সা বা মৌমাছির কামড়ে এটি কিছুটা উপকার দিতে পারে।
ধুতরা পাতার মধ্যে আছে প্রাকৃতিক  শক্তির এক অপূর্ব সম্ভার। এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ব্যথা, চর্মরোগ ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যায় আরাম পাওয়া যায়। তবে ভুল মাত্রা বা না জেনে ব্যবহার করলে এটি ভয়ঙ্কর বিষে পরিণত হয়। তাই ধুতরা পাতাকে সম্মান করুন, জেনে-বুঝে ব্যবহার করুন এবং যেকোনো প্রয়োজনে অভিজ্ঞ ভেষজ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

ধুতরা বীজের তেলের উপকারিতা

ধুতরা বীজের তেলের উপকারিতা জানলে আমরা কখন গাছটাকে অবমূল্যায়ন করতাম না।প্রাকৃতিক  উদ্ভিদের মধ্যে ধুতরা (Datura) একটি পরিচিত নাম, যাতে ঔষুধি গুণে ভরপুর । বিশেষ করে এর বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল বিভিন্ন  রোগে ব্যবহৃত হয়ে থাকে আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও লোকজ চিকিৎসায়। তবে এই তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক, কারণ ধুতরা একটি বিষাক্ত উদ্ভিদ। আজকের আলোচনায় থাকছে ধুতরা বীজের তেলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা যা অনেকেরই অজানা।
  1. ধুতরা বীজের তেল বিভিন্ন ব্যথা যেমন: সায়াটিকা, বাত বা আথ্রাইটিসের ব্যথা উপশমে ব্যবহার করা হয়। এটি পেশি ও স্নায়ুকে সাময়িকভাবে অবশ করে ব্যথার অনুভূতি কমিয়ে আনে।
  2. বাত, গাঁটে ব্যথা কিংবা বাতজ ব্যথায় ধুতরা বীজের তেল গরম করে হালকা করে মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়। এতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যালকালয়েড উপাদান শরীরে রক্তসঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে ব্যথা দ্রুত  সেরে যায়।
  3. অনেকেই জানেন না, ধুতরা বীজের তেল চুলের জন্যও উপকারী। মাথার ত্বকে এই তেল ব্যবহার করলে খুশকি ও সংক্রমণ প্রতিরোধ হয় এবং চুল পড়া কমে। 
  4. পল্লি  চিকিৎসায় কানের ব্যথা উপশমে ধুতরা বীজের তেল কয়েক ফোঁটা হালকা গরম করে কানে ব্যবহারের রীতি রয়েছে। এতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কমে এবং ব্যথা কম হয়। 
  5. ধুতরা বীজের তেলের প্রদাহবিরোধী (anti-inflammatory) ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাগুণ চর্মরোগে কাজে আসে। বিশেষ করে সোরিয়াসিস বা একজিমার মতো ত্বকজনিত রোগে সাময়িক আরাম দিতে পারে এই তেল।
  6. মাথার ত্বকে ধুতরা বীজের তেল হালকাভাবে মালিশ করলে মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হয় এবং মাথা ব্যথা বা মাইগ্রেন কমতে সাহায্য করে। তবে এর ঘ্রাণ কিছুটা ঝাঁঝালো ও তীব্র হতে পারে, তাই সংবেদনশীলদের জন্য সাবধানতা প্রয়োজন।
  7. যদি কোন পোকামাকড় কামড় দেয় বা দংশন করে, সেক্ষেত্রে ধুতরা বীজের তেল আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করলে চুলকানি ও ব্যথা কমে। এটি প্রাকৃতিকভাবে জীবাণুনাশক হিসেবেও কাজ করে
তবে মনে রাখতে হবে, যেহেতু ধুতরা একটি বিষাক্ত উদ্ভিদ তাই শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও সংবেদনশীল ত্বকে এই তেল ব্যবহার না করাই ভালো। কখনোই মুখে বা খালি ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করা উচিত নয়। 

ধুতরা বীজের তেল একটি উপকারী কিন্তু জটিল প্রাকৃতিক উপাদান। এর যথাযথ ব্যবহার করলে উপকার মিলতে পারে অনেক, তবে ভুল প্রয়োগে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই ঘরোয়া চিকিৎসায় এটি ব্যবহারের আগে জেনে বুঝে, নিরাপদভাবে প্রয়োগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ
ধুতরা-বীজের-তেলের-উপকারিতা

ধুতরা পাতা বা বীজের রস খেলে আসলেই কি মানুষ মারা যায়


ধুতরা গাছের পাতা বা ফুল খেলে সত্যিই কি মানুষ মারা যায় না কি এই বিষয়ে নানা রকমের ঘটনা প্রচলিত আছে আমাদের সমাজে। অনেকের এই গাছের পাতা, ফল খেয়ে অসুস্থতা এমনকি মানসিক ভারসাম্য হারানোর মতো নজিরও পাওয়া যায়। 

আয়ূর্বেদিক শাস্ত্রে ধুতরা উদ্ভিদকে অনেক উপকারি এবং ঔষধি গুণসম্পন্ন বলা হলেও কবিরাজের পরামর্শ ছাড়া এটি কোনোমতেই ব্যবহার করা উচিত নয়। বিশেষ করে কাঁচা ফল কেননা এই ফল প্রচুর বিষাক্ত। এই উদ্ভিদের ফুল, ফল  অনেক আকর্ষনীয় হলেও পশু পাখি কিন্তু এই গাছের কোনো কিছুই স্পর্শ করে না। কারন এর বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া থেকে মানুষ, পশু পাখিসহ কোনো প্রানীই রক্ষা পায় না। 

ধুতরা গাছের ফল বা পাতা খেলে কতটুকু ক্ষতি হবে তা নির্ভর করে গাছের বয়স এবং কি পরিমানে খাওয়া হচ্ছে তার উপর। ধুতরা গাছে ট্রোপেইন, স্কোপোলামিন ও হায়াসিয়ামিন নামক তিনটি বিষাক্ত উপাদান থাকে। শরীরে প্রবেশ এমনকি স্পর্শের মাধ্যমেও এটি ক্ষতিসাধন করে। প্রথমে এটি শরীরের স্নায়ুন্ত্রকে আক্রমন করে, তারপর পুরো শরীরের কার্যক্রম অকেজো করার মাধ্যমে শেষ পরিণতি মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। কেউ যদি প্রাণে বেঁচেও যায় তবুও সারাজীবনের মত মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। 

এটি থেকে চেতনানাশক ঔষধ প্রস্তুত করা হয়৷ এই গাছের ফুল, পাতা, ফল, শিকড়, কান্ড সম্পূর্ণ অংশই বিষাক্ত। ধুতরা পাতা ও বীজের রস খেলে আসলেই মানুষ মারা যেতে পারে। তাই সর্বদা সাবধানে এই গাছ ব্যবহার করতে হবে। পরিবারের শিশু বাচ্চাদের এর থেকে দূরে রাখতে হবে।

ধুতরা গাছের পরিচর্যা

ধুতরা গাছের পরিচর্যা করা খুব কঠিন ব্যাপার না। এটি জংলি গাছ হওয়ায় রাস্তার ধার, বন জঙ্গল, পুকুরের পাড় ইত্যাদি সব জায়গায় জন্মায়। খুব বেশি যত্ন বা পরিচর্যা করার দরকার হয় না। তবুও অনেকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বাগানে বা বাড়িতে এই উদ্ভিদটি লাগাতে চান। এর বেশ কিছু প্রজাতি অনেক সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর ফুল দেয় যা বাগানের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তোলে। 

ধুতরা গাছ লাগানোর সময় অর্ধেক মাটি আর অর্ধেক বালি দিয়ে মাটি বানাতে হবে। যদি প্রতিদিন যত্ন করতে না পারেন বা পানি দিতে না পারেন তাহলে ৬০ ভাগ মাটি ও ৪০ ভাগ বালি দিতে হবে। টবের নীচে পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা অবশ্যই রাখতে হবে কারন অতিরিক্ত আর্দ্রতায় এই গাছ মারা যেতে পারে। মাটির সাথে ভার্মি কম্পোস্ট মিশিয়ে ধুতরা গাছের চারা অথবা বীজ রোপন করলেই হবে। মাত্র ৪-৫ মাসের মধ্যে এই গাছে ফুল আসে। যারা ভেষজ ঔষধ তৈরি করেন এবং কবিরাজি করেন তারা সাধারণত অন্যান্য ঔষধিগাছের পাশাপাশি এই গাছও লাগান। তবে বাগান করার উদ্দেশ্যে খুব কম মানুই এই গাছ লাগান। আপনি যদি এই গাছ বাড়িতে লাগাম তাহলে অবশ্যই আপনাকে সাবধান থাকতে হবে যাতে বাড়ির ছোট বাচ্চারা এই গাছের আশেপাশেও না যায়। 
ধুতরা-গাছের-পরিচর্যা

কালো ধুতরা গাছ বাড়িতে থাকলে কি হয়

কালো ধুতরা গাছ বাড়িতে থাকলে কি হয়, কালো ধুতরা গাছ নিয়ে অনেক মিথ প্রচলিত আছে আমাদের সমাজে। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভিতর। সাধারণ ধুতরা গাছের মতোই এর উপকারিতা ও অপকারিতা আছে। তবে এর বিশেষ কিছু ব্যবহার বা গুনের কথা শোনা যায় যেমন :

হিন্দু ধর্মে এটি বিশ্বাস করা হয় যে কালো ধুতরা গাছ আশীর্বাদ বয়ে আনে, অশুভ শক্তি দূর করে বাড়ির সুখ শান্তি বজায় রাখে, আর্থিকভাবে সমৃদ্ধিশালী করে এবং সংসারে অভাব অনটন দূর করে। দাম্পত্য জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসবে কালো ধুতরাকে বাড়িতে রাখা হয়। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিশ্বাস হলো কালো ধুতরা ভগবান শীবের সাথে সম্পর্কিত এবং একারনে এটি শিব পূজায় ব্যবহার করা হয়। এই গাছ ও ফুল বাড়িতে থাকলে ভগবান শিবের আশীর্বাদ বাড়িতে বর্ষিত হয় বলে ধরা হয় এবং শীবের কৃপায় সংসার সমৃদ্ধ থাকে। 

এই গাছের কিছু ঔষধি গুণও আছে যেমন: কালো ধুতরা গাছের পাতা, ফুল ও ফলের নির্যাস ব্যথা কমাতে ও ঘুম আনতে সাহায্য করে। আয়ূর্বেদ শাস্ত্রে এটি শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা ও আন্ত্রিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়। তবে অন্যান্য ধুতরার মতো কালো ধুতরা গাছের ফল ও বীজ বিষাক্ত। তাই, এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আর বাড়িতে রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে শিশুদের নাগালের বাইরে থাকে।

প্রশ্নোত্তর পর্ব ধুতরা গাছের শিকড়ের উপকারিতা

প্রশ্ন ১: ধুতরা গাছের বৈশিষ্ট্য কি?
উত্তর: ধুতরা গাছ একটি ঔষধি গাছ যার ফুল, পাতা, বীজ, শিকড় সম্পূর্ণ গাছই উপকারী ও অপকারি দুই বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। এটি সাধারণত ৩-৫ ফুট লম্বা হয়ে থাকে, পাতার কিনারা হালকা খাজকাটা থাকে। ফুল সাধারণত দুই ধরনের হয় সাদা এবং কালো রঙের। 

প্রশ্ন ২: ধুতরা শিকড়ের প্রধান উপকারিতা কী?
উত্তর: এটি স্নায়ুবিক ব্যথা, জ্বর এবং বাতজনিত ব্যথা উপশমে ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন ৩: ধুতরার শিকড় কিভাবে স্নায়ুর সমস্যা কমাতে সাহায্য করে?
উত্তর: এতে থাকা বিশেষ উপাদান স্নায়ুকে শিথিল করে ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

প্রশ্ন ৪: ধুতরার শিকড় কি অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে?
উত্তর: হ্যাঁ, ধুতরার শিকড়ের নির্যাসে জীবাণুনাশক গুণ রয়েছে।

প্রশ্ন ৫: ধুতরার শিকড় কি ত্বকের রোগে উপকার দেয়?
উত্তর: প্রাচীন চিকিৎসায় ত্বকের ফোঁড়া বা চুলকানিতে শিকড়ের ব্যবহার দেখা যায়।

প্রশ্ন ৬: ধুতরা শিকড় কি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি বহু প্রাচীনকাল ধরে আয়ুর্বেদিক ও ইউনানি চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

প্রশ্ন ৭: মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের জন্য ধুতরা শিকড় কি উপকারী?
উত্তর: হালকা মাত্রায় ধুতরার শিকড় ব্যবহারে মাথাব্যথা উপশম হতে পারে।

প্রশ্ন ৮: ধুতরার শিকড়ের ব্যবহার নিরাপদ কিনা?
উত্তর: অতিরিক্ত ব্যবহার বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, তাই চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করতে হয়।

প্রশ্ন ৯: ধুতরার শিকড় কি তাবিজ বা তন্ত্র-মন্ত্রে ব্যবহার হয়?
উত্তর: অনেক লোকবিশ্বাসে এটি নেতিবাচক শক্তি দূর করতে তান্ত্রিক কাজে ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন ১০: ধুতরা গাছের শিকড় কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর: গ্রামাঞ্চলে বা পরিত্যক্ত জায়গায় ধুতরা গাছ জন্মায়, সেখান থেকেই শিকড় সংগ্রহ করা যায়।

লেখকের শেষ কথা: ধুতরা গাছের শিকড়ের উপকারিতা

ধুতরা গাছের শিকড়ের উপকারিতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি সেই সাথে ধুতরা গাছ নিয়ে মানুষের কৌতূহল থেকে আসা অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে ধুতরা গাছ এর শিকড়ের উপকারিতা এবং প্রাসঙ্গিক বিষয় সবার কাছে স্পষ্ট হবে। 

ধুতরা একটি  জংলি গাছ হলেও এর নানাবিধ ব্যবহার চোখে পড়ার মতো। সেই সাথে এর অপব্যবহারের ফলে অনেকের জীবন সংশয় তৈরি হয়। আর্টিকেল ধুতরা গাছের যেসব ব্যবহারবিধি উল্লেখ করা হয়েছে তা কোনোক্রমেই কবিরাজের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্রিলার্নিং আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url