বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার নিয়ম জানুন সহজেই

দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার আগ্রহ অনেকেরই থাকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আধুনিক প্রযুক্তি  ও ঐতিহাসিক স্থাপনার জন্য জনপ্রিয়  এই দেশটি পর্যটকদের কাছে দিনে দিনে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।

দক্ষিণ-কোরিয়া-টুরিস্ট-ভিসা

বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়া  আগের থেকে অনেক সহজ। পাঠকবৃন্দ যদি আমাদের আজকের আর্টিকেল সম্পূর্ণ পড়েন তাহলে বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার নিয়ম বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

পেজ সূচিপত্রঃ দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার নিয়ম

দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার নিয়ম

দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার নিয়ম স্বপ্ন যাদের দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণ তারা এটি  জানতে চায়। সঠিক দিকনির্দেশনা এবং তথ্য না জানার কারনে অনেকেই দক্ষিণ কোরিয়া যেতে পারেন না আবার অনেকেই দালালের হাতে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন৷ তাই আপনি যদি দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য মনস্থির করে থাকেন তাহলে আগে অবশ্যই দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন। 

দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসার মেয়াদ সাধারণত ৯০ দিন বা তিন মাসের হয়ে থাকে। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় বেড়াতে যেতে চান তাহলেই কেবল টুরিস্ট ভিসা পাবেন এবং এ ভিসা দিয়ে আপনি ৯০ দিনের বেশি কোরিয়াতে অবস্থান করতে পারবেন না। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়া অনেকটাই সহজ যদি নিয়ম মেনে ধাপে ধাপে সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার নিয়মঃ 
  • প্রথমেই আপনাকে পাসপোর্ট করতে হবে অথবা আপনার যদি আগে থেকেই পাসপোর্ট থেকে থাকে তাহলে তার মেয়াদ চেক করতে হবে। যদি ট্যুর শেষ করার পরও পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থাকে তাহলে আপনি সেই পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন অন্যথায় নতুন পাসপোর্ট বানাতে হবে।
  • এরপর আপনাকে একটা সঠিক ট্যুর প্ল্যান করতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে আপনি কোন হোটেলে উঠবেন, কোনো ট্যুর গাইড বুক করবেন কি না, কতদিন থাকবেন ইত্যাদি সকল বিষয় নির্ধারণ করতে হবে কেননা ভিসার আবেদনের জন্য এটি প্রয়োজন। 
  • প্রস্তুতিমূলক ধাপ অর্থাৎ পাসপোর্ট তৈরি করা, ট্যুর প্ল্যান করা এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করার পর আপনি টুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। এই কাজটি নিজে নিজে করতে পারেন অথবা কোনো এজেন্সির মাধ্যমেও করতে পারেন। নিজে নিজে করতে বাংলাদেশে অবস্থিত দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাস থেকে অথবা তাদের ওয়েবসাইট থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করুন এবং তা পূরন করুন।
  • আবেদনপত্র পূরন করে ভিসা ফি প্রদান করতে হবে। ভিসা প্রসেসিং ফি প্রদান করার মাধ্যমে আপনার আবেদনটি গৃহীত হবে এবং ইন্টারভিউ এর জন্য আপনাকে ডাকা হবে। ভিসা প্রসেসিং ফি বিভিন্ন দূতাবাস বা এজেন্সিতে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
  • এরপর কিছুদিনের মধ্যে আপনাকে ইন্টারভিউ এর জন্য ডাকা হবে। ইন্টারভিউয়ে সাধারণত আপনার ভ্রমন বিস্তারিত (ট্যুর প্ল্যান, রিজার্ভ করা হোটেলের ঠিকানা, ট্যুর গাইডের বিস্তারিত তথ্য, কতদিন অবস্থান করবেন) এসব বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হবে। ইন্টারভিউ শেষ হলে আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে জমা দিতে হবে। 
টুরিস্ট ভিসা আবেদনের ধাপসমূহ সঠিকভাবে সম্পূর্ন করলে ১০-১৫ দিনের মধ্যে ভিসা প্রসেসিং সম্পন্ন হবে এবং আপনার পাসপোর্টের সাথে ভিসা যুক্ত করা হবে। দ্রুত ভিসা পাওয়ার জন্য সঠিকভাবে আবেদন প্রক্রিয়া অনুসরন করুন এবং নির্ভূল তথ্য দিয়ে আবেদনপত্র পূরন করুন। যদি কোনো এজেন্সি দিয়ে কাজটি করাতে চান তাহলে পূর্বেই তাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে রাখতে হবে।

দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য

দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ কেননা সঠিক তথ্য প্রদান করলে আপনার ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা যেমন বেড়ে যাবে তেমনি ভুল তথ্য প্রদান করলে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা বাড়বে, দেরি হবে। দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র নিম্নে দেওয়া হলোঃ
  1. বৈধ পাসপোর্ট (ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকবে এরকম পাসপোর্ট এবং এতে ভিসার জন্য পর্যাপ্ত খালি পৃষ্ঠা আছে কি না চেক করতে হবে।) 
  2. সাদা ব্যকরাউন্ডসহ সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  3. ট্যুর প্ল্যান (ট্যুরের জন্য যাবতীয় সব তথ্য আবেদনপত্রে দিতে হবে যেমনঃ হোটেল রিজার্ভজেশন,ফ্লাইট টিকিট এবং ভ্রমণের বিস্তারিত সব তথ্য)
  4. আর্থিক স্বচ্ছলতার বিষয় স্পষ্ট করার জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বেতন রশিদ এবং যাবতীয় নথি যা প্রমাণ করবে আপনি ভ্রমনের ব্যয় বহন করার জন্য সমর্থ।
  5. দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসার আবেদন পত্র 
  6. জাতীয় পরিচয়পত্র এবং শিশুদের জন্য জন্ম সনদ 
  7. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট 
  8. মেডিকেল সার্টিফিকেট 
  9. ভিসা ফি পেমেন্ট রশিদ 
  10. রিটার্ন টিকেট (ভ্রমন শেষে দেশে ফেরার জন্য বিমানের টিকেট)
  11. আপনার আত্মীয় বা পরিচিত কেউ যদি আপনাকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ভ্রমনের জন্য আমন্ত্রণ জানায় তাহলে ইনভাইটেশন লেটারটি এখানে সংযুক্ত করতে হবে। এটি আপনার ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং আপনি খুব সহজেই ভিসা পাবেন।
উপরোক্ত কাগজপত্রসমূহ ভিসা আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে এবং সার্টিফিকেট ইংরেজিতে ট্রান্সলেশন করা থাকতে হবে। এর বাহিরে প্রয়োজনীয় তথ্য বলতে আপনার আবেদনপত্রে প্রদানকৃত আপনার নাম, পরিচয়, ঠিকানা, বয়স ইত্যাদি বোঝায়। এসব তথ্য অবশ্যই আপনার সার্টিফিকেটের সাথে মিল রেখে প্রদান করতে হবে। 

দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়া কি সহজ

দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়া কি সহজ, এটা কোন ক্ষেত্রে সহজ এবং কোন ক্ষেত্রে কঠিন। ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া নির্ভর করে প্রয়োজনীয় তথ্য ও প্রফাইলের উপর। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আবেদন করলে  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিসা পাওয়া সহজ হয়। আবার যাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে, একাধিক দেশ ভ্রমনের ডকুমেন্টস আছে তাদের জন্যেও দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা পাওয়া সহজ। আবার যাদের আত্মীয় স্বজন বা পরিচিত কেউ কোরিয়া থাকে তাদের আমন্ত্রণ পেলে ভিসা পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়।

দক্ষিণ কোরিয়া কিছু দেশের জন্য তাদের ভিসা প্রসেসিং এ ছাড় দিয়ে থাকে তবে বেশিরভাগ ভ্রমনকারীদের জন্য ভিসার দরকার হয়। কিছু দেশের নাগরিক সি-৩ ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন যা তাদের ভিসা প্রাপ্তির সম্ভাবনা বাড়ায় আবার কেউ ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশনের সাহায্য নিতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে ভিসা ছাড়াই ৯০ দিনের কম সময় কোরিয়া ভ্রমণ করা যায়। যদি উপরোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করা হয় তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়া সহজ হবে।

কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা করতে কত ব্যাংক ব্যালেন্স লাগে

কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা করতে কত ব্যাংক ব্যালেন্স লাগে এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সংশয়ে থাকে। আর্টিকেলের এই অংশে বিষয়টি স্পষ্ট করার চেষ্টা করব।

ভ্রমণের খরচ বাবদ টাকা ছাড়া নির্ধারিত কোন ব্যাংক ব্যালেন্স থাকা প্রয়োজন নেই বা এটা কোন শর্তের মধ্যেও পড়ে না। শুধুমাত্র দূতাবাসে আপনার বিগত ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ডকুমেন্টস দিতে হবে। ব্যাংক একাউন্টে দক্ষিণ কোরিয়াতে বিভিন্ন ভ্রমণ আরো যাবতীয় বহন করার মতো ব্যালেন্স থাকলেই হবে। আপনার দক্ষিণ কোরিয়া গিয়ে কতদিন থাকার ইচ্ছা আছে, সেখানে কতটুকু পরিমাণ টাকা প্রয়োজন হতে পারে এর উপর ভিত্তি করে ব্যালেন্স কম বেশি হতে পারে।

তবে কোনো জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে তা মোকাবিলা করার জন্য আপনি সামর্থ্যবান কি না তা যাচাই করার জন্য ব্যাংক স্টেটমেন্টে বিগত ৪-৬ মাসের লেনদেন ৩-৪ লক্ষ টাকার মতো হলে ভালো হয়। অর্থাৎ আপনার ব্যাংকিং লেনদেনের পরিমান এবং ধরন দেখে যাতে বোঝা যায় আপনি বিদেশে ট্যুরে যাওয়া এবং যাবতীয় খরচ বহন করার জন্য সমর্থ। 

বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা খরচ কত

বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা খরচ কত? যাদের স্বপ্ন দক্ষিণ কোরিয়া ভ্রমণ তারা এই বিষয়টি নিয়ে ভাবেন। কেননা ভ্রমনের জন্য যথেষ্ট অর্থ সঞ্চয় না থাকলে ভ্রমন করা সম্ভব নয়। কোরিয়া ভিসার খরচ নির্ভর করে ভিসার ধরণ এবং প্রক্রিয়াকরনের উপর ভিত্তি করে। কোরিয়া ভিসার দাম খুব বেশি নয়, সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা ফি প্রায় ৫০০০ টাকা এবং মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা ফি প্রায় ৮০০০ টাকা (এই মান পরিবর্তনযোগ্য)।
বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার খরচ শুধু ভিসা ফির উপর নির্ভর করে না। ভিসা ফি এর সাথে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ খরচ, বিমানের টিকেট, এজেন্সির ফি ইত্যাদি আনুষঙ্গিক খরচ সহ মোট ৩০,০০০- ৩৫,০০০ টাকা লাগতে পারে। এটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা হারের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।ভিসার বিভিন্ন ধরন রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে ভিসার ফ্রি ধার্য করা হয়। ভিসার জন্য এক ফি ভিসার জন্য আরেক ফি।

বাংলাদেশের দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসের মাধ্যমে আপনি যদি নিজে নিজে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি সম্পন্ন করতে চান তাহলে স্বল্প খরচে করতে পারবেন। তবে যদি এজেন্সির মাধ্যমে এটি কাজ করতে চান তাহলে খরচ অনেক বেশি হবে। বিভিন্ন এজেন্সি ভিন্ন ভিন্ন এমাউন্ট নিয়ে থাকে। তাই এজেন্সির দ্বারা কোরিয়া যেতে চাইলে বিশ্বশ্ত এজেন্সি নির্বাচন করুন।

দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা পেতে কতদিন লাগে

দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা পেতে কতদিন লাগে, বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায়ায় শর্ট টার্ম ভিজিট ভিসায় যাওয়া যায়। এটা একটি টেম্পোরারি ভিসা সার্ভিস হওয়ায় খুব দ্রুত এবং কম সময়ের মধ্যে (অন্য ভিসার তুলনায়) ভিসা প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়। ভিসার জন্য অনলাইনে আবেদন ফর্ম সাবমিট করার পর ইন্টারভিউ, রিচেক সহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগে।

সাউথ কোরিয়ায় ভিসা প্রাপ্তি, প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি এবং সুষ্ঠু পরিচালনার উপর নির্ভর করে এই সময় কম বেশি হতে পারে। ভিসা পাওয়ার পর ফলাফল প্রকাশ এবং পাসপোর্ট রিটার্ন করতে অতিরিক্ত ২/৩ দিন সময় লাগতে পারে। তাই সর্বসাকুল্যে হিসেব করে আপনার কাঙ্ক্ষিত তারিখের ২০/২৫ দিন আগে ভিসার জন্য আবেদন করুন। যদি দ্রুততার সাথে ভিসা পেতে চান এবং কম সময়ের মধ্যে আপনার ট্যুর শুরু করতে চান তাহলে আপনার কাঙ্ক্ষিত তারিখের অনেক বেশ আগে ভিসার জন্য আবেদন করুন। এটি তাড়াতাড়ি ভিসা পেতে আপনাকে সাহায্য করবে।

দক্ষিণ কোরিয়া কাজের ভিসা

দক্ষিণ কোরিয়া কাজের ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা হলো চাকরি, বিজনেস বা যেকোন কাজ করার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদি একটি ভিসা। যারা টাকা উপার্জনের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চান তাদেরকে অবশ্যই ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে হবে। আপনি কি কাজের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চান? তাহলে বিস্তারিত জেনে নিন দক্ষিণ কোরিয়া কাজের ভিসা সম্পর্কে। 

দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিসা আছে। কাজের ধরন, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং মেয়াদ অনুযায়ী কোরিয়ায় বিভিন্ন ধরনের কাজের ভিসা প্রচলিত আছে যেমনঃ
  • E-1 visa: Professor Visa 
  • E-3 visa: Language Instructor/ Teacher Visa 
  • E-3 visa: Researcher Visa 
  • E-4 visa: Technological Guidance Visa 
  • E-5 visa:  Professional Employment Visa (lawyers, doctors, nurse etc.) 
  • E-6 visa: Culture and Art Visa (artists, entertainers, singer etc.)
  • E-7 visa: Specialty Occupetion visa (Engineers, programmer, designer, technical expert etc.) 
‎E-1 থেকে E-6 ভিসাসমূহকে specialised categorise visa বলা হয়। উচ্চশিক্ষার পর যারা ক্যারিয়ার গড়তে কোরিয়া যেতে চান তাদের জন্য এই ভিসা প্রযোজ্য। এসব কাজের জন্য নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা বাধ্যতামূলক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য স্কিল থাকতে হয়। সাধারণত এসব ভিসায় কাজের বেতন, সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি হয়ে থাকে এবং ভিসার মেয়াদও বেশি থাকে। 
তথ্যসূত্র: https://share.google/qE6ZZJ1Tj50l6aFh5

যারা সাধারণত কম দক্ষ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি না তারা শ্রমিক, কৃষিকাজ, ক্লিনার, প্লাম্বার, ফ্যাক্টরি, ফিশিং, ওয়েটার, সেফ ইত্যাদি কাজের জন্য কোরিয়া যেতে চান। এক্ষেত্রে E-9 ভিসা প্রযোজ্য হবে। আপনি যদি সাধারন পেশাজীবি হয়ে থাকেন তাহলে এই ভিসার আওতায় সহজেই আপনি কাজ পেতে পারবেন, তবে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অন্য কাজের তুলনায় কম পাবেন। অনেকেই বাসার কাজের জন্য কোরিয়া যেতে চায় তাদের জন্য H-2 ভিসা প্রযোজ্য।

আপনি যদি বুঝতে না পারেন কোন ভিসার আওতায় আপনি দক্ষিণ কোরিয়া কাজ করতে যাবেন তাহলে এজেন্সি বা দূতাবাসে আপনার কাজের ধরন এবং দক্ষতা জানান তারা নির্দিষ্ট ধরনের ভিসা আপনাকে সাজেস্ট করবে এবং ব্যবস্থা করে দেবে। এছাড়াও বোয়েসেল ও লটারির মাধ্যমে সরকারিভাবে কম খরচে কোরিয়া যাওয়া যায়। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি বছর অনেক শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকরি করার উদ্দেশ্যে যদি আপনি কোরিয়া যেতে চান তাহলে দালালের কাছে প্রতারিত না হয়ে বোয়েসেল কিংবা লটারির মাধ্যমে খুব সহজে সঠিক পদ্ধতিতে কোরিয়া যেতে পারবেন।
দক্ষিণ-কোরিয়া-কাজের-ভিসা

কোরিয়ান ভিসা লটারি

কোরিয়া ভিসা লটারি হলো দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকারিভাবে কাজের ভিসা পাওয়ার একটি মাধ্যম। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে সরকারিভাবে ওয়ার্ক মারমিট ভিসায় কর্মী পাঠানোর প্রতিষ্ঠান হলো বোয়েসেল। দক্ষিণ কোরিয়ায় করৃমী সংকট হলে এই বোয়েসেলের মাধ্যমে লটারি নামক একটি নিয়োগ প্রক্রিয়ার দ্বারা লোক পাঠানো হয়। আপনি যদি সরকারিভাবে কোরিয়া যেতে চান তাহলে লটারি ভিসা সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। চলুন লটারি ভিসা সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক। 

দক্ষিণ কোরিয়ায় লোক নিয়োগের জন্য সবচেয়ে বেশি যে যোগ্যতাটা দেখে তা হলো কোরিয়ান ভাষায় পারদর্শীতা। আপনি ভিসা পাওয়ার আগে যদি কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা ট্রেনিং নিয়ে থাকেন তাহলে সরকারিভাবে কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোরিয়া যেতে পারবেন। এটি সরকারিভাবে কোরিয়া যাওয়ার একটি উপায়। সরকারি ভাবে কোরিয়া যাওয়ার অন্য উপায়টি হলো বোয়েসেল। এক্ষেত্রে আপনার ভিসা আবেদনের পূর্বে ভাষা ট্রেনিং করা না থাকলেও চলবে।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর অনলাইনে আবেদনকৃত প্রার্থীদের মধ্য থেকে ইলেক্টনিক সিলেকশন সিস্টেমে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রার্থী সিলেক্ট করা হয়। এটাই কোরিয়া লটারি। কোরিয়া লটারি নির্দিষ্ট কোনো যোগ্যতা বা ভাষা দক্ষতা দেখে হয় না। দৈবভাবে চয়ন করা হয় বলে বলা হয়ে থাকে। লটারিতে জিতে গেলে আপনি বোয়েসেলের মাধ্যমে কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ভাষা শিখতে পারবেন। ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি সমস্যা করবে না।

দক্ষিণ কোরিয়া লটারি পাওয়ার যোগ্যতা কি

দক্ষিণ কোরিয়া লটারি পাওয়ার যোগ্যতা কি এই বিষয়ে সঠিকভবে বলা মুশকিল কেননা লটারিতে আবেদনকারী বেশিরভাগ মানুষ যোগ্যতা সম্পন্ন হলেও অনেক সময় দেখা যায় কম যোগ্যতার মানুষ বেশি সুযোগ পাচ্ছে। তবুও বেশ কিছু দিক বিবেচনা করে দক্ষিণ কোরিয়া লটারি ভিসায় প্রার্থীর যোগ্যতা যাচাই করা হয় যেমনঃ
  • কোরিয়ান ভাষা বোঝা ও কিছু কিছু কাজের ক্ষেত্রে পড়তে ও লিখতে জানতে হবে। তাই আপনি যদি কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা ট্রেনিং নিয়ে থাকেন তাহলে অগ্রাধিকার পাবেন এই ভিসায়।
  • শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম এসএসসি/সমমান হতে হবে।
  • বয়সসীমা ১৮-৩৯ বছরের মধ্যে হতে হবে
  • বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে
  • প্রদত্ত সকল তথ্য সঠিক হতে হবে।
  • 3D (Dirty, Difficult and Dangerous) কাজ করার সমর্থন থাকতে হবে। কেননা কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে যেকোন কাজ করতে হতে পারে।
  • মেডিকেল টেস্টে কালার ব্লাইন্ড সমস্যা থাকা যাবে না।
  • মাদকাসক্ত ও কিছু রোগ (সিফিলিস, এচআইভি) থাকলে প্রার্থী অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে
  • ফৌজদারি বা অন্যকোন অপরাধে জেন খাটার রেকর্ড থাকা যাবে না (পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট থাকতে হবে)
  • ই-৯ এবং ই-১০ ভিসায় ৫ বছরের বেশি কোরিয়াতে অবস্থান করা যাবে না। 
লটারির ক্ষেত্রে আবেদনপত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেলে সেই প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। আপনি যদি কোরিয়ান লটারি পেতে চান তাহলে প্রথমেই কোরিয়ান ভাষা ট্রেনিং নিবেন। কোরিয়ান ভাষায় দক্ষতা থাকলে খুব সহজেই চাকরি পাওয়া যায় কোরিয়ায়। 

সেনজেন ভিসা দিয়ে কি দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া যাবে

সেনজেন ভিসা দিয়ে কি দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া যাবে এটা জানার আগে আপনাকে জানতে হবে সেনজেন ভিসা কি। সেনজেন হলো ইউরোপের ২৭টি দেশ নিয়ে গঠিত একটি অঞ্চল যেখানে অবস্থানকারী নাগরিকরা একটি বিশেষ ভিসার দিয়ে সেনজেনভুক্ত যেকোন দেশে ভ্রমব করতে পারে বাড়তি ভিসা ছাড়াই। অর্থাৎ সেনজেন ভিসা কার্ড থাকলে আপনি ইউরোপের ২৭টি দেশে অনায়াসে ঘুরতে পারবেন, কোনো ভিসা লাগবে না। 
দক্ষিণ-কোরিয়া-টুরিস্ট ভিসা-নিয়ম

কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া যেতে সেনজেন ভিসা যথেষ্ট নয়। কারন দক্ষিণ কোরিয়া সেনজেনভুক্ত দেশ না। সেনজেনভুক্ত দেশ হলে দক্ষিণ কোরিয়াতে সেনজেন ভিসায় যাওয়া যেত। তবে আপনি যদি আগে থেকেই ইউরোপের কোনো দেশে অবস্থান করে থাকেন তাহলে K-ETA( Korean Electronuc Authorization) ভিসার সাহায্যে অনেক সহজে কোরিয়া ভ্রমন করতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে কোরিয়া যাওয়ার জন্য সেনজেন কিংবা K-ETA কোনো ভিসা প্রযোজ্য না। আপনার যদি সেঞ্জেন ভিসা থাকে তাহলে আপনি ইলেকট্রনিক ভিসা সার্ভিস এর সুবিধা পেতে পারেন।

FAQ/ প্রশ্নত্তর পর্ব  

প্রশ্ন ১ঃ বাংলাদেশের কোরিয়ান দূতাবাসের ঠিকানা কোথায়?
উত্তরঃ কোরিয়ান দূতাবাস, বাংলাদেশ 
প্লট #৪, মাদানি এভেনিউ, বারিধারা, ঢাকা -১২১২
ফোনঃ+৮৮০২২২২২৬০৮৫২, ওয়েবসাইটঃ https://overseas.mofa.go.kr/bd-en/indesdo

প্রশ্ন ২ঃ দক্ষিণ কোরিয়া লটারি ২০২৫ কবে আসবে?
উত্তরঃ দক্ষিণ কোরিয়া লটারি ২০২৫ সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কোনো আপডেট পাওয়া যায় নি। বিগত লটারি (দক্ষিণ কোরিয়া লটারি ২০২৪) এর কার্যকক্রম শেষ  হলে ২০২৫ এর কার্যক্রম শুরু হবে। 

প্রশ্ন ৩ঃ ভাষা ট্রেনিং নাকি লটারি কোনটি দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার সহজ উপায়?
উত্তর: ভাষা ট্রেনিং এর মাধ্যমে কোরিয়া যাওয়া সহজ। লটারির মাধ্যমে কোরিয়া যাওয়ার জন্য লটারিতে নির্বাচিত হওয়া অনেকটাই কঠিন বিষয়। 
প্রশ্ন ৪ঃ দক্ষিণ কোরিয়া বেতন কত?
উত্তরঃ দক্ষিণ কোরিয়া ওয়ার্কট পারমিট ভিসার আওতায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অটোমোবাইল, কনস্ট্রাকশন, টেক্সটাইল, কৃষি সহ বিভিন্ন খাতে কমিটেড ও সাধারন এই দুই ধরনের কর্মী যায় কোরিয়াতে কাজের জন্য। এসব ভিসায় কাজের ক্ষেত্রে সাধারনত ১ লক্ষ থেকে ওভারটাইম সহ আড়াই লক্ষ বাংলাদেশি টাকা বেতন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে কোরিয়ায়।

প্রশ্ন ৫ঃ  বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত সময় লাগে?
উত্তরঃ সাধারনত সরাসরি রুটে বিমানে করে বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে ৭-১০ ঘন্টা সময় লাগে। তবে ট্রানজিট থাকলে সময় আরও বেশি লাগতে পারে।

প্রশ্ন ৬ঃ দক্ষিণ কোরিয়ায় কি স্টুডেন্ট ভিসায় যাওয়া যায়?
উত্তরঃ হ্যাঁ, স্কলারশিপের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসায় স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও উচ্চতর প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যায়।

লেখকের মন্তব্যঃ দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার নিয়ম 

দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার নিয়ম জানলে আপনিও খুব সহজেই নিজে নিজে করতে পারবেন দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসার আবেদন৷ দালালের কাছে সময় ও অর্থ খুইয়ে প্রতারিত হওয়ার আগে নিয়ম জেনে সঠিকবে দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাবেন খুব সহজেই।

আজকের আর্টিকেলে আমরা দক্ষিণ কোরিয়া টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার নিয়ম, দক্ষিণ কোরিয়া কাজের ভিসা ও বেশ কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আপনাদের যদি আরও কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্রিলার্নিং আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url