গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয় জেনে নিন চাঞ্চল্যকর তথ্য

গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় যেকোন ধরনের খাবার খাওয়া নিরাপদ না। কিছু খাবার আছে যেগুলো গর্ভাবস্থায় খেলে মা ও শিশুর ক্ষতি হয় এমনকি গর্ভপাত হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।

গর্ভাবস্থায়-আনারস-খেলে-কি-হয়

গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া যাবে কি না এই নিয়ে অনেকের মনে সংশয় থাকে। আজকের আর্টিকেলে আমরা গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়, কেন গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া যাবে না ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

পেজ সূচিপত্র : গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয় 

গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয় এই বিষয় নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন থাকে। কেননা প্রচলিত একটি ধারনা আছে গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে গর্ভপাত হয়। কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা নেই। আমাদের দেশে প্রচলিত একটি ধারনা আছে গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে পেটের বাচ্চার ক্ষতি হয় এমনকি বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়েদেরে কঠোরভাবে আনারস খেতে নিষেধ করা হয়। কিন্তু ইউকে বেবি সেন্টারের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রমান হয় যে আনারস খেলে গর্ভবতী মায়ের কোনো ক্ষতি হয় না বা গর্ভপাতের কোনো আশংকা নেই। এটি মায়েদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।

 তাহলে প্রশ্ন উঠতে পার যে এতো ফল থাকতে আনারস নিয়েই কেন মানুষ ভ্রান্ত এই ধারনা পোষন করে? এর উত্তরে বলা যায় আনারস নিয়ে মানুষের এই ভুল বিশ্বাসের মূলে রয়েছে এতে থাকা একটি উপাদান যার নাম "ব্রোমিলিন"। পূর্বে ব্রোমিলিন এবোরশন বা গর্ভপাতের জন্য ব্যবহার করা হতো। যেহেতু আনারসে ব্রোমিলিন আছে তাই বলা হয়ে থাকে আনারস খেলে গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যদিও আনারসে এই ব্রোমিলিনের পরিমান অনেক কম। তবুও গর্ভবতী মায়েদের সাবধান থাকা উচিত আনারস বেশি না খাওয়ার। অনেক বেশি আনারস খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতেও পারে। গর্ভবতী মায়েরা আনারস খেতে পারেন তবে খুব বেশি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

তাছাড়া আনারস খাওয়া গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারি। এতে থাকা বিভিন্ন খনিজ লবন ও ভিটামিন ভ্রুনের বিকাশে সহায়তা করে, ব্রোমেলেইন হজমে সাহায্য করে, মায়ের গর্ভকালীন ক্র্যাম্পস দূর করে জরায়ু পেশিকে শীথিল করে,  অ্যান্টিাক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। এসব উপকারি গুনের জন্য গর্ভাবস্থায় আনারস খাদ্যতালিকায় স্থান পেতেই পারে। 

আনারসের পুষ্টিগুণ 

আনারসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। এটি অন্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। নিচে আনারসের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত তালিকা দেওয়া হলো:

প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসের পুষ্টি উপাদান: ‎
পুষ্টি উপাদান পরিমান
শক্তি ৫০ কিলঃক্যালরি
শর্করা ১৩.২ গ্রাম
রাফেজ ১.৪ গ্রাম
প্রোটিন ০.৫৪ গ্রাম
ক্যালসিয়াম ১৩ মিঃগ্রাম
ভিটামিন ১.০৩গ্রাম
পটাসিয়াম ১০৯ মিঃগ্রাম
সোডিয়াম ১.০০মিঃগ্রাম
জিঙ্ক ০.১২মিঃগ্রাম
ব্রোমিন ১৩ মিঃগ্রাম

আনারস খাওয়ার উপকারিতা 

আনারস খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। এটি একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এটি আমাদের দেশে খুবই পরিচিত এবং সহজলভ্য। গ্রীষ্মকালে আনারস খাওয়া যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তেমনি এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে নানা ধরনের ভিটামিন, খনিজ উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের নানা উপকারে আসে। চলুন জেনে নিই আনারস খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা।
  • আনারসে আছে ব্রোমেলেইন (Bromelain) নামক একটি এনজাইম, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। এই উপাদানটি প্রোটিন ভেঙে ফেলে এবং পেটের গ্যাস, অম্বল, বদহজমের সমস্যা দূর করতে সহায়ক। যারা প্রায়ই পেটের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য আনারস একটি ভালো প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও অনেক বড় ভূমিকা রাখে। এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • আনারস ভিটামিন সি-তে ভরপুর। এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  •  নিয়মিত আনারস খেলে সর্দি, কাশি ও জ্বরের মতো সাধারণ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া এটি শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা শরীরকে নানা রকম সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • আনারসের ক্যালোরি খুব কম কিন্তু এতে ফাইবার অনেক বেশি থাকে। এটি খেলে অনেকক্ষণ পেট ভরা অনুভব হয়, ফলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য আনারস একটি ভালো স্ন্যাক্স হতে পারে।
  • আনারসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ত্বককে উজ্জ্বল ও তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। এটি বয়সের ছাপ কমায় এবং ব্রণ, র‍্যাশ ইত্যাদি ত্বকের সমস্যা কমাতে পারে। চাইলে আনারসের রস মুখে লাগিয়েও ব্যবহার করা যায়।
  • আনারসে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ থাকে, যা হাড় এবং দাঁত শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। বিশেষ করে বাচ্চা এবং বয়স্কদের জন্য এটি উপকারী।
  • আনারস খেলে শরীরে "সেরোটোনিন" নামক হরমোনের মাত্রা বাড়ে, যা মন ভালো রাখে। এটি দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • আনারসে ক্যালরির পরিমান কম থাকে অন্যদিকে ফাইবার ও খনিজ লবন বেশি থাকে যা ওজন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
  • এতে থাকা পটাশিয়াম ও ভিটামিন কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি কিডনি থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • আনারস পেটের কৃমি দূর করে। কিছুদিন নিয়মিতভাবে সকালে খালি পেটে আনারস খেলে কৃমি দূর হয়। এটি ক্ষুদ্রান্ত্রের জীবনুও ধ্বংস করে।
  • আনারসে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ হাড়ের ক্ষয় রোধ করে হাড়কে মজবুত রাখে। আর্থ্রাইটিস বা গেটেবাত উপশমে সাহায্য করে।
  • দেহের বিভিন্ন গ্রন্থির কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে আনারসের উপাদান খুবই উপকারি।  গয়টার (ঘ্যাগ নামে অধিক পরিচিত)  নামক থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ প্রতিরোধেও এটি সাহায্য করে।
  • জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য আনারস প্রতিষেধকের মতো কাজ করে। এটি মর্নিংস সিকনেস দূর করতেও অনেক উপকারি।
  • ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হলো একটি চোখের রোগ যা আমাদের চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং চোখ নষ্ট করে ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন আনারস খেলে এই রোগের সম্ভাবনা প্রায় ৩০% পর্যন্ত কমে যায়। এতে থাকা বিটা ক্যারোটিন আমাদের চোখ সুস্থ রাখতেও ভূমিকা রাখে। 
আনারস শুধু একটি সুস্বাদু ফলই নয়, এটি একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদানও। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আনারস রাখলে শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত খেলে মুখে ঘা বা অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে, তাই পরিমিতভাবে খাওয়াই উত্তম।

আনারস খাওয়ার অপকারিতা

আনারস খাওয়ার অপকারিতা অনেকের অজানা। আনারস একটি জনপ্রিয় ও সুস্বাদু ফল। এটি যেমন অনেক উপকারে আসে, তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে যা জানা জরুরি। যেকোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের ক্ষতি করতে পারে, আনারসও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশেষ করে যাদের কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক সমস্যা আছে, তাদের জন্য আনারস খাওয়া কখনো কখনো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আজকের এই লেখায় আমরা সহজ ভাষায় জানব আনারস খাওয়ার কিছু অপকারিতা।

  • আনারস খাওয়ার পর অনেক সময় মুখে ঝাঁঝালো ভাব হয়, জ্বালাপোড়া করে বা ঘা হয়ে যায়। এর কারণ হলো আনারসে থাকা ব্রোমেলেইন নামক এনজাইম ও প্যানটোথেনিক অ্যাসিড। এই উপাদান মুখের ভেতরের নরম টিস্যুতে জ্বালাভাব সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যদি অনেক বেশি পরিমাণে একবারে খাওয়া হয়।
  • কিছু মানুষের শরীরে আনারস খেলে অ্যালার্জি হতে পারে। যেমন চুলকানি, ত্বকে লাল দাগ, মুখ বা গলা ফোলার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বা চোখ চুলকানোর মতো উপসর্গও হতে পারে। যদি কখনো এমন লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে আনারস খাওয়া বন্ধ করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
  • গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আনারস খাওয়া নিরাপদ নয়। আনারসে থাকা ব্রোমেলেইন জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে, যা গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যদিও অল্প পরিমাণ খাওয়ায় সমস্যা হয় না, তবুও গর্ভবতী নারীদের আনারস খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
  • আনারস রক্ত পাতলা করতে সাহায্য করে। এটি সাধারণ অবস্থায় উপকারী হলেও, যেসব মানুষ রক্তপাতজনিত সমস্যায় ভুগছেন বা যারা অস্ত্রোপচারের আগে-পরে আছেন, তাদের জন্য আনারস খাওয়া বিপদজনক হতে পারে। এতে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
  • যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাদের জন্য বেশি আনারস খাওয়া ঠিক নয়। আনারসে থাকা প্যানটোথেনিক অ্যাসিড পেটের অম্লতা বাড়িয়ে দেয়। এতে পেটের জ্বালাপোড়া, বুকজ্বালা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে
  • আনারসের অ্যাসিড দাঁতের এনামেল (রক্ষাকবচ স্তর) দুর্বল করে দিতে পারে। বেশি পরিমাণে আনারস খেলে দাঁত সংবেদনশীল হয়ে যেতে পারে এবং দাঁতে ব্যথা বা ক্ষয় দেখা দিতে পারে। তাই যাদের ক্যাভেটিস বা জিংজাইভেটিসের সমস্যা আছে তাদের আনারস না খাওয়াই উত্তম।
  • কিছু কিছু ওষুধ (যেমন এন্টিকোয়াগুলেন্ট বা অ্যান্টিবায়োটিক) এর সঙ্গে আনারস খেলে সমস্যা হতে পারে। ব্রোমেলেইন এসব ওষুধের কাজের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা শরীরের ক্ষতি করে।
  • অনেকেই কাঁচা আনারস খেয়ে থাকেন। এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং বিষক্রিয়ার তৈরি করে। কাঁচা আনারস মুখ ও গলার ভিতর শ্লেষ্মা তৈরি করে। 
  • আনারসে থাকে প্রাকৃতিক চিনি সুক্রোজ এবং ফ্রুক্টোজ যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারন হতে পারে কেননা এটি রক্তে চিনির পরিমান বাড়িয়ে দেয়। তবে কম পরিমানে খেলে কোনো সমস্যা হয় না। ডায়াবেটিস রোগীরা চাইলো সপ্তাহে ২দিন সীমিত পরিমানে আনারস খেতে পারেন।
আনারস একটি স্বাস্থ্যকর ফল হলেও, কিছু ক্ষেত্রে এটি শরীরের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে যারা বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলেন বা যাদের নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তাদের জন্য আনারস খাওয়ার আগে সচেতন থাকা জরুরি। পরিমিত পরিমাণে খেলে আনারসের উপকার পাওয়া যায়, তবে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। সন্দেহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয় 

আনারস খেলে কি পিরিয়ড হয় এ বিষয়টি আমাদের প্রত্যেকটা মা ও বোনেরা জানতে চান। পিরিয়ড এমন একটি বিষয় যেটা প্রত্যেক নারীর জীবনে প্রতি মাসে মাসে হয়ে থাকে। অনেকেই বলে থাকে যে আনারস খেলে নাকি পিরিয়ড হয় বা অনিয়মিত পিরিয়ড এর মতো সমস্যা হয়। আজকে আমরা এই বিষয়টি স্পষ্ট করব। 

যাদের সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও পিরিয়ড হচ্ছে না তাদের যে আনারস খেলে পিরিয়ড হবে এই তথ্যটি ভুল। তবে আনারসের ভিতরে ব্রোমেলিন নামক একটি উপাদান থাকে যা মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং পিরিয়ড চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে ,তবে এটি পিরিয়ড শুরু করার জন্য যথেষ্ট নয়। এতে থাকা প্রদাহ বিরোধী উপাদান পিরিয়ডের তীব্র ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে, জরায়ুর পেশিকে শীথিল করে পিরিয়ড ক্র্যাম্প কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পিরিয়ডের সময় মেয়েদের শরীরে আয়রনের বিশেষ চাহিদা তৈরি হয়। আনারসে থাকা ভিটামিন সি আয়রন শোষন বৃদ্ধি করে শরীরে আয়রনের পরিমান বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আনারসে আছে ৮৬% পানি যা দেহে হাইড্রেশন বজায় রাখে বিশেষ করে পিরিয়ডের সময়ে এটি অনেক উপকারি৷ 

মেয়েদের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে আনারস খেলে বিশেষ কিছু উপকার হয় তবে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দূর করতে আনারস যথেষ্ট না। এজন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ গাইনী ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 

দুধ আর আনারস একসাথে খেলে কি হয়

দুধ আর আনারস একসাথে খেলে কি হয়, প্রচলিত একটি কথা আছে যে দুধ আর আনারস একসাথে খেলে বিষক্রিয়া হয় এমনকি মানুষ মারাও যেতে পারে।  আজকের এই লেখায় আমরা খুব সহজ ভাষায় জানব দুধ আর আনারস একসাথে খেলে কী হতে পারে, এবং এই নিয়ে বাস্তব তথ্য ও সাধারণ যুক্তি কী বলে।

আনারস একটি টক-মিষ্টি ফল, যার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ব্রোমেলেইন নামে একটি বিশেষ এনজাইম। এই এনজাইম প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে এবং হজমে সহায়তা করে। কিন্তু এটার অ্যাসিডিক স্বভাবের কারণে এটি কিছু খাবারের সাথে ভালোভাবে মিশে না।
দুধ-আর-আনারস-একসাথে-খেলে-কি-হয়
দুধ একটি প্রোটিনসমৃদ্ধ, ক্ষারধর্মী খাবার। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। সাধারণভাবে দুধ সহজপাচ্য হলেও, কিছু নির্দিষ্ট খাবারের সঙ্গে মিশলে হজমে সমস্যা করতে পারে।

আনারসের টক গুণ ও দুধের প্রোটিন একসাথে মেশানো হলে তা শরীরে অনেক সময় সমস্যা করতে পারে। আনারসের অ্যাসিড আর এনজাইম ব্রোমেলেইন দুধের প্রোটিনকে জমাট বাঁধিয়ে ফেলে। এই জমাট দুধ পেটে হজম হতে দেরি করে এবং কখনো কখনো গ্যাস, অম্বল বা পেটে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষ করে যাদের হজমের সমস্যা আছে, বা যাদের পেট সহজে খারাপ হয়, তাদের জন্য দুধ ও আনারস একসাথে খাওয়া ঠিক নয়। দুধ খাওয়ার অন্তত ১ ঘণ্টা আগে বা পরে আনারস খান। যদি দুধে আনারস মিশিয়ে কিছু তৈরি করতে চান, তবে আগে আনারস রান্না করে নিন। যাদের পেট সংবেদনশীল বা অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তারা এ দুই খাবার একসাথে না খেলেই ভালো। শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য এই দুই খাবার একসাথে খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন।

আনারস খালি পেটে খাওয়া যায় কি

আনারস খালি পেটে খাওয়া যায় কি এটা সবাই জানতে চায়। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অনেকেই ফল খেয়ে দিন শুরু করতে চান। ফল খাওয়া শরীরের জন্য ভালো, এই কথাটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু প্রশ্ন হলো সব ফল কি খালি পেটে খাওয়া যায়? বিশেষ করে আনারস?

আজকের এই লেখায় আমরা আনারস খালি পেটে খাওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে এমনভাবে আলোচনা করব, যেটা আপনি আগে কোনো বই বা ইন্টারনেটে দেখেননি। চলুন শুরু করি একদম নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।

আনারস আসলে একরকম "অ্যাজিল ফল" অর্থাৎ, এটি শরীরে দ্রুত কাজ করে, কিন্তু ভুল সময়ে খেলে সেটা বিপরীতও হতে পারে। অনেক সময় আমরা ভাবি, খালি পেটে ফল খেলে শরীরে সঠিকভাবে শোষণ হয়। এই ধারণা কিছু ক্ষেত্রে ঠিক হলেও, আনারসের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু আলাদা। আনারসে থাকা ব্রোমেলেইন প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে, কিন্তু খালি পেটে গেলে এটা সরাসরি পেটের ভিতরের দেয়ালে প্রভাব ফেলতে পারে।  ফলে হালকা জ্বালাপোড়া, বুকজ্বালা বা অম্বলের কারণ হতে পারে। আবার কারও কারও শরীরে এই ব্রোমেলেইন এতটাই তীব্র প্রতিক্রিয়া করে যে তারা বমি, পেটে মোচড় বা মাথা ঘোরার মতো সমস্যায় পড়েন।

এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যক্তিগত সহনশীলতা। কেউ কেউ খালি পেটে আনারস খেয়ে নিজেদের একদম হালকা ও সতেজ মনে করেন। আবার অন্য কেউ খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে টয়লেটে দৌড় দেন! এটা একেকজনের শরীরের  প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। এজন্য একদম খালি পেটে না খেয়ে, আনারস খেতে পারেন হালকা কিছু খাওয়ার পর। যেমন: সকালে এক গ্লাস গরম পানি বা ১টা বিস্কুট খাওয়ার পরে বা নাস্তার কিছু সময় পরে। এতে আনারসের গুণাগুণও পাবেন, আবার ক্ষতির সম্ভাবনাও কমবে।

আনারস আপনার বন্ধু হতে পারে, যদি আপনি তাকে সময় দেন নিজের শরীর বুঝতে।

আনারস খেলে কি এলার্জি হয় 

আনারস খেলে কি এলার্জি হয়, যারা বিভিন্ন সমস্যায় ভুগেন তাদের কাছে এই প্রশ্নটা অনেক পরিচিত। কারণ তারা যেই খাদ্যই গ্রহণ করেন না তার আগে বাছাই করেই গ্রহণ করেন। এরকমই একটা খাবার হচ্ছে আনারস। আনারস নাম শুনলেই খাওয়ার  ইচ্ছা জাগে। টক মিষ্টি স্বাদের  এই ফল  খেতে যেমন দারুন, তেমনি শরীরের জন্য বেশি উপকারী কিন্তু অনেকেরই প্রশ্ন করেন আনারস খেলে কি এলার্জি হয় আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে এই বিষয়টি স্পষ্ট করবো।
আনারস-খেলে-কি-এলার্জি-হয়
আনারস কোনো এলার্জেন বা এলার্জি সৃষ্টিকারী ফল নয়। তবে এর মধ্যে থাকা ব্রোমেলেইন নামক উপাদানটি কারো কারো ক্ষেত্রে এলার্জির লক্ষন প্রকাশ করতে পারে যেমন: ত্বকে চুলকানি বা ফুসকুড়ি, ফোলাভাব, বমি বমি ভাব, বমি, পেট ব্যথা ইত্যাদি। আনারসের এলার্জি লক্ষন দুভাবে প্রকাশ পায় :
  1. ওরাল এলার্জি সিন্ড্রোম: সাধারনত বিশেষ কোনো ফল বা সবজির নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিনে কারো কারো এলার্জি থাকে। এই এলার্জির ফলে মুখ, গলা ও ঠোঁট জ্বালাপোড়া করে এমনকি মুখে ফুসকুড়ি উঠতে পারে। সাধারনত কাঁচা আনারস খেলে অনেকের এই ধরনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়।
  2. ল্যাটেক্স ফ্রুট সিন্ড্রোম : সাধারনত ল্যাটেক্স নামক উপাদানের প্রতি যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আনারস খেলে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় যেমন : ত্বকে লালভাব, চুলকানি, ফুলে যাওয়া, ফুসকুড়ি হওয়া এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে অ্যানাফাইলেক্সিসের (খুব কম ক্ষেত্রে ঘটে) মতো মারাত্মক লক্ষন প্রকাশ পায়। এমনকি আনারসের প্রতি এলার্জিযুক্ত মানুষের মধ্যে হিস্টামিন প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
আনারসের এলার্জিক প্রতিক্রিয়ার কথা শুনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যদি আপনার আনারস খাওয়ার ১ মিনিট থেকে ১ ঘন্টার মধ্যে এরকম লক্ষন প্রকাশ পায় তাহলে আপনাকে আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং এন্টিহিস্টামিন ঔষধ গ্রহন করতে হবে। এলার্জির লক্ষন গুরুতর হলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। আর গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এই বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

প্রশ্নোত্তর পর্ব: গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয় 

প্রশ্ন ১: আনারস কখন খাওয়া উচিত নয়?
উত্তর: আনারস খালি পেটে আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খাওয়া উচিত নয়। এতে করে বদহজম, এ্যাসিডিটি ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যা হতে পারে। যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদেরও আনারস কম খাওয়া উচিত। 

প্রশ্ন ২: আনারস খেয়ে দুধ খেলে কি মানুষ মারা যায়?
উত্তর : না। আনারস খেয়ে দুধ খেলে মানুষ মারা যায় না তবে পেটে বিষক্রিয়া হতে পারে, পেট ফাঁপা, বদহজম, পেট ব্যথা, ডায়রিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। 

প্রশ্ন ৩:  আনারস খেলে কি ফাইব্রয়েড হয়? 
উত্তর : না, আনারস খেলে ফাইব্রয়েড (নারীদের জরায়ুতে হওয়া এক ধরনের টিউমার) হয় না। 

প্রশ্ন ৪: আনারসে কি এসিড থাকে?
উত্তর : আনারসে প্রধানত ম্যালিক এসিড ও সাইট্রিক এসিড থাকে যা এর টক স্বাদের জন্য দায়ী। এছাড়াও এতে প্যানটেথেনিক এসিড থাকে। 

প্রশ্ন ৫: আনারসে কোন ধরনের এস্টার থাকে?
উত্তর : আনারসে ইথাইল বিউটানয়েড নামক অ্যালকোহল ও এসিডের এস্টার থাকে।

লেখকের শেষ কথা: গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়, গর্ভাবস্থায় আনারস খাওয়া নিরাপদ তবে পরিমান মতো খেতে হবে। বেশি আনারস খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। যাদের এলার্জির সমস্যা আছে বা ডায়াবেটিস আছে তাদেরও সাবধানে খেতে হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমরা আজকের লেখায়। আশা করি তথ্যবহুল এ লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে। আরও কিছু জানার থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ফ্রিলার্নিং আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url