গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম জানুন
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম মেনে জাফরান (কেশর) সেবন করলে তা বহু শারীরিক সমস্যার সমাধান করে বলে অনেকে বিশ্বাস করে থাকে। তাই গর্ভবতী মায়েদের সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য জাফরান সেবন করা ভালো।
আয়ুর্বেদ বা হারবাল শাস্ত্রে জাফরানকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী ঔষধিগুন সম্পন্ন বস্তু হিসেবে বলা আছে। তাই সকলেই জাফরান সেবন করতে চান। আজকের আর্টিকেলে আমরা গর্ভা অ বস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব।
পেজ সূচিপত্র: গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম
- গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা
- গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
- গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়
- গর্ভাবস্থায় জাফরান দুধ খাওয়ার নিয়ম
- জাফরান কখন খাওয়া উচিত
- কোন জাফরান সবচেয়ে ভালো মানের
- জাফরান বাদাম মাদার মিক্স খাওয়ার নিয়ম
- প্রতিদিন কতটুকু জাফরান খাওয়া যায়
- প্রশ্নোত্তর পর্ব গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম
- লেখকের শেষ কথা গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়মের বিষয়ে আমরা অনেকেই জানি না তাই আজকে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করে গর্ভাবস্থায় কিভাবে জাফরান খাওয়া যায় তা আলোচনা করব।
জাফরান একটি মূল্যবান মসলা যা বিভিন্ন খাবারে রং ও সুগন্ধ বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। শুধু রান্নার জন্য নয় এটা স্বাস্থ্যের জন্যেও খুবই উপকারী বিশেষ করে গর্ভাবস্থায়। গর্ভা অবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়মগুলো নিচে দেওয়া হলো:
- সঠিক সময়: প্রথম তিন মাসে মায়ের শরীরে নানা পরিবর্তন দেখা যায়। এ সময় বাচ্চার আকৃতি তৈরি হয় তাই অনেক সময় গর্ভপাত হওয়ার ও আশঙ্কা থাকে । তাই এ সময় জাফরান এড়িয়ে চলাই ভালো। জাফরান খাওয়ার সঠিক সময় হল চতুর্থ মাস থেকে। তখন গর্বের শিশু একটু শক্ত হয় এবং গর্ভবতী মা মানিয়ে নিতে পারে। তাই গর্ভবতী মা চতুর্থ মাসে যখন গর্ভের শিশু নড়াচড়া অনুভব করতে শুরু করেন তখন থেকে জাফরান খেতে পারেন।
- সঠিক পদ্ধতি : জাফরান খাওয়ার সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি হলো দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া। অনেক সময় গর্ভবতী মায়েরা দুধ খেতে পারে না তখন দুধের সাথে জাফরান মিশিয়ে খাওয়ালে দুধের স্বাদ, রং আর গন্ধ পাল্টে যায় ফলে সহজেই খেতে পারে। এক গ্লাস গরম দুধে জাফরান ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। তারপর সেই দুধ পান করুন।
- সকালে বা রাতেও যেকোন সময় জাফরান খাওয়া যাবে। হালকা খাবারের পর জাফরান দুধ খাওয়া যায়। সপ্তাহে তিন চার দিন খাওয়াই ভালো প্রত্যেকদিন খাওয়ার প্রয়োজন নেই।
- সঠিক পরিমান: মনে রাখতে হবে জাফরান একটি শক্তিশালী উপাদান তাই অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া যাবেনা। দিনে সর্বোচ্চ দুটি থেকে চারটি জাফরান যথেষ্ট, অতিরিক্ত খেলে বমি, মাথা ব্যথা পেটব্যথা, এমনকি রক্তচাপ কমে যেতে পারে। অনেক সময় অতিরিক্ত খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
- জাফরান গুড়া করেও সংরক্ষণ করতে পারেন। স্যুপ, সালাদ, পায়েস, লাচ্চি, ডেজার্ট সহ যেকোন রান্নায় হালকা পরিমান জাফরান গুড়া মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
- ভাত, পোলাও, বিরিয়ানি বা যেকোনো ভাতের আইটেমে জাফরান যোগ করতে পারেন। এজন্য একটু রান্নার তেলে জাফরান মিশিয়ে হালকা গরম করে নিতে হবে। তারপর চাল ধুয়ে সমস্ত চালে এই মিশ্রনটি যোগ করতে হবে। এতে করে রান্নায় পুষ্টির পাশাপাশি সুগন্ধ হবে অতুলনীয়। এই পদ্ধতিতে স্যুপও খেতে পারেন।
- দুধ বা অন্য যেকোন খাবার ঝামেলা মনে হলে আপনি শুধু পানি দিয়েও জাফরান খেতে পারেন। এক গ্লাস পানিতে কয়েকটি জাফরানের সুতা মিশিয়ে তা পান করতে পারেন।
- বিভিন্ন বাদাম, খেজুর ও ড্রাই ফুডের সঙ্গে দুধ দিয়ে জাফরান ভিজিয়ে রেখে পিষে খেতে পারেন। সকালে অথবা সন্ধ্যায় যেকোনো এক সময় এটি খেতে পারেন।
- সকালের চা তে রাখতে পারেন এক চিমটি জাফরান। পানিতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত কয়েক টুকরা জাফরান সুতা ভিজিয়ে রেখে সেই পানি দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। এতে বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তি বোধ বিশেষ করে বমি বমি ভাব, গা গুলানো, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, অলসতাবোধ দূর হয়।
- অনেক গর্ভবতী মা রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারেন না। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস গরম পানিতে এক চিমটি জাফরানের গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে অনিদ্রার সমস্যা দূর হয়ে ভালো ঘুম হবে।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা অনেক এবং এটি মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্যই অনেক ভালো। তবে কোনো সমস্যা থাকলে খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। এসময় মা ও সন্তানকে সুস্থ রাখা খুবই জরুরী। জাফরান দেখতে ক্ষুদ্র হলেও এতে প্রাকৃতিক ঔষধি উপাদানে ভরপুর তাই গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই উপকারী। চলুন জেনে নেই গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার কিছু উপকারিতা।
- মানসিক চাপ কমায়ঃ গর্ভাবস্থায় হরমোনের তারতম্যের কারণে মায়েরা বিভিন্ন সময় হতাশা, দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। জাফরান স্নায়ু শান্ত করতে সাহায্য করে এবং মনকে প্রফুল্ল রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি মস্তিষ্কে সেরোটনিন নিঃসরণ বাড়িয়ে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- বদহজম ও গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান করেঃ গর্ভকালীন সময় অনেক মায়ের বদহজম, গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্যর দেখা দেয়, জাফরান এগুলো দূর করে। এটি প্রাকৃতিকভাবে পাচনতন্ত্র সক্রিয় ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।
- হার্টের চাপ কমেঃ গর্ভবতী নারীদের জন্য রক্তচাপ উঠানামা করা একটি সাধারণ বিষয়, জাফরান খেলে শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে হার্টের উপর চাপ কমে ও হার্ট ভালো থাকে।
- অনেকেই বিশ্বাস করেন, গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে শিশুর ত্বক ভালো হয় হয় অর্থাৎ ফর্সা হয়, যদিও এই ধারণার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, তবে এটি সত্যি যে জাফরান ত্বকের উজ্জ্বল বাড়াতে সহায়তা করে এবং ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখে। তবে তা সেবনের মাধ্যমে বাচ্চার ত্বক উজ্জ্বল হয় না।
- জাফরানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুন আছে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফলে মা নানান ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পান।
- জাফরানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা মায়ের ত্বক সুস্থ, সুন্দর ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। মাতৃত্বকালীন দাগ কমাতেও এর প্রভাব আছে।
- জাফরানে থাকা অ্যান্টিফাংগাল বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ ও ইনফেকশন থেকে খুব সহজে মা ও শিশুর সুরক্ষা প্রদান করে।
- জাফরান একটি প্রাকৃতিক ব্যথা নাশক হিসেবে কাজ করে। গর্ভাবস্থায় অনেক মায়ের পিঠে, কোমরে এবং গিটে ব্যথা হতে পারে জাফরান সেই ব্যথা দূর করে।
- শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে জাফরান দারুন কাজে দেয়। নিয়মিত জাফরান সেবন শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ইত্যাদি লক্ষণ দূর করে সুস্থ স্বাভাবিক ও সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে।
- গর্ভকালীন বেশিরভাগ মায়েদের একটি সাধারণ সমস্যা হল ঘুম না হওয়া। ঘুমানোর আগে দুধ অথবা গরম জলের সাথে জাফরান খেলে ঘুম ভালো হয় এবং অনিদ্রার সমস্যা থাকলে তা দূর হয়।
- বাচ্চা প্রসবের সময় অনেক মহিলার পেট ও বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা বা ওঠে একে ক্র্যামস বলা হয়। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত জাফরান খেলে এর সমস্যা অনেকাংশে কাটিয়ে তোলা যায়।
- জাফরানে থাকা পুরোসিন নামক ক্যারোটিন বিভিন্ন ক্যান্সার কোষ যেমন লিউকোমিয়া, ওভারিয়ান কার্শিয়ানামো ইত্যাদি ধ্বংস করে মায়ের প্রজননতন্ত্র সুরক্ষিত রাখে।
- জাফরান শরীরে আয়রনের ঘাটতি মেটায়, রক্তস্বল্পতা দূর করে ও হিমোগ্লোবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত জাফরান সেবন করলে মায়ের শরীরের অতিরিক্ত আয়রনের চাহিদা মেটায়, রক্তশূন্যতা দূর করে।
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য জাফরান নিরাপদ। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ও ভূমিকা রাখে।
- জাফরান স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে। এছাড়াও এটি পারকিনসন নামক কনজেনিটাল এনোমালিস থেকে ভ্রুনকে সুস্থ রাখে।
- রূপচর্চায় জাফরানের ব্যবহার বহু আগে থেকেই প্রচলিত। জাফরান গর্ভবতী মায়ের চুল পড়া বন্ধ করে, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রন, মেসতা, চোখের নিচে কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
- গর্ভাবস্থায় জাফরান সেবন করলে অকাল প্রসব এর ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়া মায়ের শরীর ও মনের জন্য অনেক দিক থেকে উপকারী। এটি হরমোন নিয়ন্ত্রণ রাখে, হজম নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মানসিক প্রশান্তি দেয়। তবে পরিমান সচেতন থাকা ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে জাফরান গ্রহণ করলে এটি গর্ভকালীন সময়কে আরো আরামদায়ক করে তুলতে পারে।
আরও পড়ুন: গর্ভবতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আমরা সবসময় সচেতন থাকি না। জাফরান হলো Crocus sativus নামক এক ধরনের উদ্ভিদের ফুল থেকে সংগ্রহ করা দামি মসলা যা খাবারের রং ও স্বাদ বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও রূপচর্চা , প্রসাধন ও ঔষধ তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।
জাফরান একটি উষ্ণ প্রকৃতির মসলা বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে এটি জড়ায়ুকে উত্তেজিত করতে পারে এর ফলে জরায়ুর সংকোচন বেড়ে যায় এবং গর্ভপাতের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে বিশেষ করে প্রথম তিন মাসে। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস জাফরান খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
জাফরান খেলে অনেক সময় রক্তচাপ কমে যেতে পারে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে রক্তচাপের তারতম্য অনেক সমস্যার কারণ হতে পারে যেমন মাথা ঘোরা, দুর্বল হওয়া ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। অনেকের শরীরে জাফরানের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকতে পারে এতে চুলকানি, ত্বকে ফুসকুড়ি, চোখ লাল হওয়া, বা শ্বাসকষ্টের মত এলার্জির লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় এমনিতে অনেক নারীর বমি বমি ভাব থাকে তার সঙ্গে যদি অতিরিক্ত জাফরান খাওয়া হয় তবে গন্ধ বা স্বাদ পরিবর্তনের কারণে বমি আরও বেড়ে যেতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত পরিমাণে জাফরন খাওয়া শরীরের হরমোনের স্বাভাবিক কাজকে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে যা মা ও শিশুর উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
জাফরান যতই পুষ্টিকর হোক না কেন গর্ভাবস্থায় এর ব্যবহার হতে হবে খুবই সচেতনভাবে। অল্প পরিমাণে খাওয়া উপকার দিতে পারে কিন্তু অতিরিক্ত খেলে মা ও অনাগত শিশুর জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে, তাই গর্ভাবস্থায় যে জাফরান খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয়
গর্ভাবস্থায় জাফরান খেলে কি বাচ্চা ফর্সা হয় এই বিষয়টি অনেকেই জানতে চান। আজকে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
গর্ভাবস্থায় একটি নারীর জীবনের বিশেষ সময় এ সময় মা যেমন নিজের শরীরের যত্ন নেন তেমনি অনাগত শিশুর জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করেন আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত বিশ্বাস আছে,জাফরান খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়। এই ধারণা থেকে অনেক গর্ভবতী মা দুধের সঙ্গে নিয়মিত জাফরান খাচ্ছেন। এখন প্রশ্ন হল আসলেই কি জাফরান খেলে বাচ্চা ফর্সা হয়?
বাচ্চা ফর্সা হওয়া নির্ভর করে তার বাবা মার জিন বা বংশগতির উপরে। বাবা-মার গায়ের রং যেমন সন্তানদেরও রং সাধারণত তেমনই হয়। কোন খাবার যেমন জাফরানের মাধ্যমে গায়ের রং পরিবর্তন হওয়া সম্ভব নয়। বিজ্ঞান বলে জাফরান শরীরের রং পরিবর্তন করতে পারে না তাও উজ্জ্বল দেখাতে সাহায্য করতে পারে ঠিকই কিন্তু তা বাহ্যিকভাবে প্রয়োগ করলে। গর্ভের শিশুর ত্বকে কোন খাবারের সরাসরি প্রভাব পড়ে না। জাফরান খেলে বাচ্চা ফর্সা হবে এটা একটি ভুল ধারণা। সন্তানের গায়ের রং নির্ধারিত হয় বংশগতির মাধ্যমে খাবার বা মসলার কারণে নয়, তবে জাফরান খেলে মায়ের শরীরের কিছু উপকার পেতে পারে, তাই চোখ বন্ধ করে লোক কথা না মেনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জাফরান খাওয়াই ভালো। শিশুর সৌন্দর্য নয় তার সুস্থতা ও নিরাপত্তাই হওয়া উচিত আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
গর্ভাবস্থায় জাফরান দুধ খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় জাফরান দুধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমাদেরকে অবগত হওয়া উচিত কেননা সঠিক নিয়মে খাদ্য গ্রহণ করলে তার উপকার সহজেই অর্জন করা যায়।
গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের প্রতিটি খাবারই তার নিজের এবং গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সময় অনেকেই পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদান খেতে চান যেগুলো মা ও শিশুর উভয়ের জন্য উপকারি। এরকম একটি উপাদান হলো জাফরান, যা অনেকের কাছে পরিচিত। যে কোন খাবারের একটি নিয়ম থাকে নিয়মিত না খেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিম্নে আমরা জাফরান দুধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানব।
জাফরান দুধ বলতে বুঝানো হয় গরম দুধে এক/দুইটি জাফরান দানা মিশিয়ে পান করা। এতে একটি হালকা সোনালী রং হয় এবং দুধে হালকা মিষ্টি স্বাদ আনে। এ পানীয়টি শুধু সাধের জন্য নয় বরং কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা জন্য গর্ভবতী মায়েরা খেতে পারেন।
দুধের তৈরি বিভিন্ন খাবার যেমন পায়েস, লাচ্চি, পুডিং ইত্যাদিতে জাফরান ব্যবহার করেও খেতে পারেন। এতে করে রান্নার স্বাদ বাড়ার পাশাপাশি পুষ্টিগুন বেড়ে যাবে। দুধ ও জাফরান দিয়ে আইসক্রিম বানিয়েও খেতে পারেন। বিভিন্ন রকমের বাদাম, ড্রাই ফুডের সাথেও ক্ষেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় অনেকে ওটস খায়, সকালে এই ওটস এর সাথে দুধ আর জাফরান মিশিয়েও খেতে পারেন।
জাফরান কখন খাওয়া উচিৎ
জাফরান কখন খাওয়া উচিৎ এই প্রশ্ন স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের মুখে শোনা যায়। জাফরান একটি দামি ও পুষ্টিকর মসলা যা মূলত খাবারের ঘ্রাণ ও রং বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয় তবে এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বিশেষ করে ঘুম, হজম এবং মানসিক প্রশান্তি বৃদ্ধির সহায়তা করে কিন্তু জাফরান খাবারেরও নির্দিষ্ট নিয়ম বা সময় আছে তা না জানলে উপকারের বদলে ক্ষতিও হতে পারে।
সাধারণত জাফরান খাওয়ার সবচাইতে ভালো সময়ের রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধে এক দুইটা কেশর দানা মিশিয়ে খেলে তার শরীরকে শিথিল করে এবং খুব ঘুম ভালো হয়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য চতুর্থ মাস থেকে সপ্তাহে দুই দিনের খাওয়া নিরাপদ তবে প্রথম তিন মাসের না খাওয়াই ভালো কারণ এই সময়ে জাফরানের উষ্ণ প্রকৃতি গর্ভের জন্য ঝুকিপূর্ণ হতে পারে।
খালি পেটে জাফরান না খাওয়া ভালো বরং খাবারের পর বা হালকা খাবারের সঙ্গে খেলে এটি ভালোভাবে হজম হয়।
কোন জাফরান সবচেয়ে ভালো মানের
কোন জাফরান সবচেয়ে ভালো মানের তা নির্ভর করে এর গুনাগুন এর উপর। জাফরান পৃথিবীর সবচাইতে দামি ও সুগন্ধযুক্ত মসলাগুলোর একটি। তবে বাজারে বিভিন্ন ধরনের জাফরান পাওয়া যায় সবগুলোই ভালো না তাই সঠিকটা চেনা খুব জরুরী।
ভালো মানের জাফরানের রং হয় গাঢ় লাল এতে হলুদ বা সাদা অংশ কম থাকে। এর সুগন্ধ মিষ্টি ধরনের হয় এবং পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ধীরে ধীরে রঙ ছাড়ে, যদি জাফরান পানিতে সঙ্গে সঙ্গে রঙ ছেড়ে দেয় তবে তা নিম্নমানের বা ভেজাল হতে পারে।
বিশ্বের সবচেয়ে ভালো মানের জাফরান আসে ইরান, কাশ্মীর এবং স্পেন থেকে।
- কাশ্মিরী জাফরান একটু মোটা গাঢ় লাল ও গন্ধে ভরপুর। এটা উন্নত মানের জাফরান।
- ইরানি জাফরান বিশ্বের প্রায় ৯০% চাহিদা পূরণ করে। এটা একটু পাতলা, কিন্তু মানে ভালো।
- স্প্যানিশ জাফরান রঙে উজ্জ্বল এবং রান্নায় বেশি ব্যবহার হয়।
ভালো জাফরান মানেই ভালো স্বাস্থ্য উপকারিতা তাই জাফরান কেনার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং ভেজাল চক্রান্ত থেকে দূরে থাকুন।
জাফরান বাদাম মাদার মিক্স খাওয়ার নিয়ম
জাফরান বাদাম মাদার মিক্স খাওয়ার নিয়ম খুব সহজ। জাফরান যেভাবে খাওয়া যায় এই পাউডারও ওই নিয়মে খাওয়া যায়।
জাফরান বাদাম মাদার মিক্স হলো জাফরান ও কয়েক ধরনের বাদাম যেমন কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, চীনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, আখরোট এবং জাফরান এর সমন্বয়ে তৈরি একটি পুষ্টিকর পাউডার জাতীয় খাবার। এই পাউডার খাওয়ার মাধ্যমে গর্ভবতী মা শুধু জাফরান নয় বরং বাদামের গুনাগুনও পেয়ে থাকেন যা মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি।
প্রতিদিন দুই থেকে তিন চামচ মাদার মিক্স খাওয়া উচিত। আপনি যদি দিনে দুইবার এটি খেতে চান তাহলে সকালে এক চামচ এবং রাতে ১ চামচ খেতে পারেন। গরম দুধ বা গরম পানির সাথে এটি মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে যাদের দুধ খেতে সমস্যা হয় তারা শুধু পানি দিয়েও খেতে পারেন। অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন পায়েস, ফিরনি, লাচ্চি, স্মুদির সাথে মিশিয়েও এটি খেতে পারেন। সাগু বা ওটস এর সাথে মিশিয়েও এটি নাস্তার সাথে খাওয়া যায়।
প্রতিদিন কতটুকু জাফরান খাওয়া যায়
প্রতিদিন কতটুকু জাফরান খাওয়া যায়, এটা সবাই জানতে চায়। এই বিষয়টি নিয়ে আজ কথা বলবো। জাফরান একটি মূল্যবান মসলা এটি সাধারণত খাবার রং ও ঘ্রাণ বাড়াতে ব্যবহার করা হয় তবে এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, কিন্তু যেকোনো ভালো জিনিস অতিরিক্ত খেলে ক্ষতি হতে পারে তাই জাফরান খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে একজন সুস্থ মানুষ দিন ১৫০ মিলিগ্রামের মত জাফরান খেতে পারেন। এটি প্রায় তিন-চারটি জাফরান পাপড়ির স্রির। গর্ভবতীদের জন্য আরো সতর্কতা দরকার তাদের ক্ষেত্রে দিনে এক থেকে দুইটি কেশর আবার সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম যথেষ্ট, এর বেশি খাওয়া গর্ভাবস্থার ক্ষতির কারণ হতে পারে।
জাফান খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো সকাল বেলা খালি পেটে হালকা গরম দুধের সাথে, এক গ্লাস দুধে দুই -তিনটি জাফরান ভিজিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে খাওয়া যায়, এতে হজম ভালো হয়, মন শান্ত থাকে এবং ত্বকের উজ্জল বাড়ায়।
তবে যাদের এলার্জি উচ্চ রক্তচাপ অথবা হরমোন জনিত সমস্যা রয়েছে তাদের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সবশেষে বলা যায় জাফরান যতটা উপকারী ততটাই সংবেদনশীল। নিয়মিত ও পরিমাণমতো খেলে শরীরের জন্য খুব ভালো, তবে অতিরিক্ত খেলেই শুরু হতে পারে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।।তাই পরিমিত পরিমানে খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রশ্নোত্তর পর্ব গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম
আমরা গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম এবং এ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ছোট ছোট প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে কিছু জানবো।
প্রশ্ন ১-গর্ভাবস্থায় কতটুকু জাফরান খাওয়া ভালো?
উত্তর :গর্ভাবস্থায় দিনে তিন থেকে চারটি জাফরান খাওয়া যায়। দুধ বা পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া ভালো এতে উপকার মিলে তবে বেশি খেলে ক্ষতি হতে পারে।
প্রশ্ন ২-কোন জাতের জাফরান শরীরের জন্য উপকারী?
উত্তর :কাশ্মীরি ও ইরানি জাতের জাফরান সবচেয়ে উপকারী। এগুলো খাঁটি গন্ধে ও রঙে শক্তিশালী আর শরীরের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর।
প্রশ্ন ৩-জাফরান এবং দুধ খাওয়ার নিয়ম কি?
উত্তর :১ থেকে ২ টি জাফরান এক গ্লাস গরম দুধে ভিজিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট রাখুন,তারপর পান করুন।
প্রশ্ন ৪-এক কেজি জাফরান কত টাকা?
উত্তর: বাংলাদেশে এক গ্রাম জাফরানের দাম সাধারণত ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। মূল্যবান মসলা হওয়ার কারণে এক কেজি জাফরান সাধারনত কেউ কেনে না, এটি গ্রাম হিসেবে বিক্রি হয়। আপনি যদি ১ কেজি জাফরান কিনতে চান তাহলে এর দাম আড়াই লক্ষ থেকে ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
প্রশ্ন ৫: কোন দেশে জাফরান সস্তা?
উত্তর: জাফরান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে ইরানে জাফরানের দাম সবচেয়ে সস্তা।
প্রশ্ন ৬: জাফরান কতদিন ভালো থাকে?
উত্তর: সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে জাফরান দুই বছরেরও বেশি সময় ভালো থাকে।
প্রশ্ন ৭: আসল জাফরান চেনার উপায় কি?
উত্তর: আসল জাফরান চেনা যায় রং, গন্ধ ও স্বাদ দিয়ে। আসল জাফরানের রং সাধারনত গাড় লাল বা কমলা রঙের হয়,এটি দেখতে আঁশগুলো সরু এবংপ্রান্ত ভাগ কিছুটা মোটা হয়। এতে একটি তীব্র মিষ্টি এবং ফুলের মত সুগন্ধ থাকে। এর স্বাদ কিছুটা তেতো এবং মিষ্টি মিশ্রিত হয়।
লেখকের শেষ কথা: গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় জাফরান খাওয়ার নিয়ম স্বাস্থ্য সচেতন সবাই জানতে চায়। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল আলোচনা করেছি। তারপরেও যদি কোন কিছুর জানার প্রয়োজন হয় অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন।
ফ্রিলার্নিং আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url