জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন।জয়তুন
তেল, যাকে আমরা অলিভ অয়েল নামে বেশি চিনি, স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের খাদ্যতালিকায়
আজকাল এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠেছে। এটি শুধু রান্নার উপকরণ নয়,
বরং একধরনের প্রাকৃতিক ওষুধও বলা চলে। শরীরের ভেতরে ও বাইরে-দুই দিকেই জয়তুন
তেলের উপকারিতা অনেক।
তবে শুধু উপকার জানলেই হয় না, জানতে হয় এর সঠিক ব্যবহার ও নিয়ম, কারণ ভুলভাবে ব্যবহার করলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি থাকে। অনেকেই জানেন না, কোন ধরনের জয়তুন তেল কোন কাজে ব্যবহারযোগ্য, কবে এটি খাওয়া উচিত, কিভাবে মাখলে ত্বকে ভালো কাজ করবে-এই নিয়ম না জানলে ভালো ফল পাওয়া কঠিন।
পোস্ট সূচীপত্রঃজয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম
- জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম
- খালি পেটে জয়তুন তেল খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
- চুলের জন্য জয়তুন তেল ব্যবহারের সঠিক নিয়ম ও উপকারিতা
- বাচ্চাদের খাবারে জয়তুন তেল মেশানোর নিরাপদ নিয়ম
- ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হার্ট সুস্থ রাখতে অলিভ অয়েলের ভূমিকা
- রান্নার তেলের বিকল্প হিসেবে নিয়মিত ব্যবহারের পরামর্শ
- ত্বকের যত্নে জয়তুন তেল
- জয়তুন তেল সংরক্ষণের নিয়ম ও সতর্কতা
- FAQ/সাধারণ প্রশ্নোত্তর
- লেখকের মন্তব্যঃজয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম
জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম
জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম বা অলিভ অয়েল অনেক উপকারি হলেও, এর সঠিক ব্যবহার না
জানলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না। অনেকেই শুধু শুনে ব্যবহার শুরু করেন, কিন্তু
জানেন না কোন কাজের জন্য কোন ধরনের জয়তুন তেল ব্যবহার উপযুক্ত। সাধারণত বাজারে
তিন ধরনের জয়তুন তেল পাওয়া যায়-এক্সট্রা ভার্জিন, ভার্জিন, আর রিফাইন্ড বা
রিফাইন্ড অলিভ অয়েল।
এর মধ্যে
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর, তাই এটি কাঁচা খাওয়ার জন্য ভালো-যেমন সালাদে
ব্যবহার, রুটি বা টোস্টে হালকা ছিটিয়ে খাওয়া, কিংবা সকালে খালি পেটে ১ চা চামচ
করে খাওয়া। এতে হজম ভালো হয়, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি
কমে।রান্নার জন্য রিফাইন্ড বা সাধারণ অলিভ অয়েল ব্যবহার করা নিরাপদ, কারণ এতে
তাপ সহ্য করার ক্ষমতা বেশি।
ত্বকে ব্যবহারের সময় এক্সট্রা ভার্জিন তেলই উপযুক্ত, কারণ এটি ত্বকে সহজে শোষিত
হয় এবং ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করে। মুখে, হাতে-পায়ে বা শুষ্ক ত্বকে সরাসরি
ব্যবহার করা যায়। চুলের যত্নে ব্যবহার করলে কিছুক্ষণ রেখে হালকা গরম পানিতে
ধুয়ে ফেলাই ভালো।তবে অতিরিক্ত ব্যবহার করলে ত্বকে ব্রণ বা চুলে তেলতেলে ভাব তৈরি
হতে পারে।
তাই সবকিছুই পরিমিতভাবে ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। যারা অ্যালার্জিতে ভোগেন,
তাদের আগে অল্প জায়গায় পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। সব মিলিয়ে, সঠিক নিয়মে জয়তুন
তেল ব্যবহার করলে এটি স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য-দুই দিকেই প্রকৃত উপকারে আসে।
জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম গুলো নিচে দেওয়া হল:
সালাদে ও রান্না ছাড়াই খাবারে মেশানো
জয়তুন তেল সালাদ ড্রেসিং হিসেবে খুবই উপকারী। টমেটো, শসা, ক্যাপসিকাম বা যেকোনো
কাঁচা সবজির সালাদে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল ছিটিয়ে খেলে তা শুধু স্বাদই বাড়ায়
না, বরং খাবারের পুষ্টিমানও বেড়ে যায়। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন E সহজে
শরীরে শোষিত হয়।
হালকা আঁচে রান্নায় ব্যবহার
অনেকেই ভুল করে ভাবেন জয়তুন তেল রান্নার জন্য ভালো না। আসলে, এক্সট্রা ভার্জিন
অলিভ অয়েল খুব বেশি গরম না করলে (Medium Heat - 120°C থেকে 180°C পর্যন্ত)
রান্নার জন্যও ভালো। আপনি এটি দিয়ে হালকা ভাজা বা স্টার-ফ্রাই করতে পারেন। তবে
গভীর ভাজার (Deep Frying) জন্য এটি উপযুক্ত নয়।
ত্বকে সরাসরি লাগানো (Skin Care)
জয়তুন তেল খুব ভালো প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কয়েক
ফোঁটা অলিভ অয়েল হাতে নিয়ে মুখে ও ঘাড়ে ম্যাসাজ করলে ত্বক কোমল ও উজ্জ্বল হয়।
শুষ্ক ত্বকের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী। তবে তৈলাক্ত ত্বকে সরাসরি বেশি ব্যবহার
না করাই ভালো – এতে ব্রণ হতে পারে।
চুলের যত্নে নিয়মিত ব্যবহার
চুলে সপ্তাহে ২-৩ বার জয়তুন তেল দিয়ে হালকা গরম করে ম্যাসাজ করলে চুল পড়া
কমে, ড্যানড্রাফ দূর হয় এবং চুলের গোড়া শক্ত হয়। ম্যাসাজ করার ১-২ ঘণ্টা পরে
হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। রাতে রেখে দিলে তেল চুলের ভেতর ঢুকে
ভালো কাজ করে, তবে সকালের আগে অবশ্যই ধুয়ে ফেলতে হবে।
ঠোঁট, নখ ও ফাটা পায়ের যত্নে
অনেকেই জানেন না, অলিভ অয়েল ঠোঁট নরম করতে দারুণ কাজ করে। ঠোঁটে, পায়ের ফাটা
স্থানে বা নখের চারপাশে রাতে ঘুমানোর আগে সামান্য অলিভ অয়েল লাগালে সেটা
ফাটাভাব দূর করে, নরম রাখে। এটা বিশেষ করে শীতে খুবই উপকারী।
ডায়েট পরিকল্পনায় বিকল্প চর্বি হিসেবে
যেসব মানুষ হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগছেন, তারা ঘি,
মাখন বা সাধারণ সয়াবিন তেলের বদলে জয়তুন তেল ব্যবহার করতে পারেন। তবে একসাথে
দুই ধরনের তেল মেশানো ঠিক না। প্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল খাওয়ার মধ্যে
থাকলে এটি শরীরের জন্য ভালো চর্বির উৎস হিসেবে কাজ করে।
বাচ্চাদের খাবারে ব্যবহার (সতর্কতার সঙ্গে)
৬ মাসের পর থেকে বাচ্চাদের খাবারে সামান্য (১/৪ চা চামচ) এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ
অয়েল মেশানো যেতে পারে। বিশেষ করে খিচুড়ি বা ম্যাশ করা সবজির সঙ্গে এটি হজমের
জন্য সহায়ক। তবে প্রথমবার ব্যবহার করার সময় অ্যালার্জি আছে কিনা খেয়াল করতে
হবে। প্রয়োজনে ডাক্তার পরামর্শ নেওয়া ভালো।
মেডিসিন হিসেবে ব্যবহার নয়, বরং সহায়ক পুষ্টি হিসেবে
অনেকে জয়তুন তেলকে ওষুধ হিসেবে দেখেন, যা ভুল। এটি কোনো অসুখ সারায় না-তবে
শরীরকে ভেতর থেকে ভালো রাখতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। তাই
নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবারের অংশ হিসেবে এর ব্যবহার করতে হবে, বেশি খেলে উল্টো
সমস্যা হতে পারে (গ্যাস্ট্রিক, ডায়রিয়া, ওজন বৃদ্ধি)।
জয়তুন তেলের ধরণ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে
বাজারে বিভিন্ন ধরনের জয়তুন তেল থাকে - যেমন Extra Virgin, Virgin, Pomace।
রান্নার জন্য Pomace তেল ভালো, কিন্তু খাওয়ার জন্য সর্বোত্তম হচ্ছে Extra
Virgin Olive Oil। তাই তেল কেনার সময় লেবেল দেখে বুঝে নেওয়া জরুরি।
খালি পেটে জয়তুন তেল খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম
খালি পেটে এক চামচ এক্সট্রা ভার্জিন জয়তুন তেল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত
উপকারী। সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি খাওয়ার পর বা সরাসরি জয়তুন তেল খেলে তা আমাদের
শরীরের পরিপাকতন্ত্রকে সজাগ করে তোলে। এটি লিভার ডিটক্স করতে সাহায্য করে, অর্থাৎ
শরীরের ভেতরে জমে থাকা টক্সিন বা বিষাক্ত উপাদান সহজে বেরিয়ে যায়।
যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য এটি খুবই কার্যকর – কারণ এটি
অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়ায় এবং মল সহজে বের হতে সাহায্য করে।এছাড়া, খালি পেটে
জয়তুন তেল খেলে হজমের রস (digestive enzymes) বেশি পরিমাণে নিঃসরণ হয়, ফলে
খাবার ভালোভাবে হজম হয়। এটি পাকস্থলীতে অ্যাসিড কমায়, ফলে গ্যাস্ট্রিক বা
অ্যাসিডিটির প্রবণতা কমে যায়।
আরো পড়ুনঃবরই পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
আর যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য এটি দারুণ সহায়ক – কারণ এটি শরীরকে তৃপ্তি
দেয়, অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায়।তবে খালি পেটে তেল খাওয়ার সময় অবশ্যই
অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। প্রতিদিন ১ চা চামচ বা ১ টেবিল চামচ যথেষ্ট।
চাইলে এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া যায়, এতে স্বাদও ভালো হয়
আর লিভারের কার্যকারিতাও আরও বাড়ে।
একবারে ফল আশা করা ঠিক না -নিয়মিত খেলে ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে শরীরের পরিবর্তন বুঝা
যাবে।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সঠিক ধরনের অলিভ অয়েল নির্বাচন করা – খাওয়ার
জন্য অবশ্যই “Extra Virgin Olive Oil” ব্যবহার করতে হবে, কারণ এটিই সবচেয়ে
বিশুদ্ধ ও কার্যকর।
চুলের জন্য জয়তুন তেল ব্যবহারের সঠিক নিয়ম ও উপকারিতা
চুলের যত্নে জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম একেবারে প্রাকৃতিক আশীর্বাদ বলা চলে।
বিশেষ করে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুষ্টি জোগায়
এবং চুল পড়া অনেকটাই কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। অনেকেই প্রতিদিন চুলে নানা ধরনের
কেমিকেল ব্যবহার করেন-শ্যাম্পু, হেয়ার কালার, হিট ইত্যাদি-যার ফলে চুল শুষ্ক হয়ে
পড়ে ও আগা ফেটে যায়।
এই সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে নিয়মিত জয়তুন তেল ম্যাসাজ।ব্যবহারের সবচেয়ে
ভালো নিয়ম হলো -সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার অলিভ অয়েল হালকা গরম করে চুলের গোড়ায়
আঙুলের সাহায্যে ম্যাসাজ করা। ম্যাসাজটা ধীরে ধীরে, গোল গোল করে করলে রক্ত চলাচল
বাড়ে, ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
ম্যাসাজ শেষে ১ থেকে ২ ঘণ্টা রেখে তারপর হালকা কোনো হার্বাল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে
ফেললেই ভালো ফল পাওয়া যায়। কারও কারও চুল খুব শুষ্ক হলে তারা চাইলে রাতে তেল
দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে পারেন, তবে অবশ্যই সকালে ধুয়ে ফেলতে হবে।অলিভ অয়েলে থাকা
ভিটামিন E, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি অ্যাসিড চুলের শুষ্কতা দূর করে,
ড্যানড্রাফ কমায় এবং চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনতে সাহায্য করে।
এছাড়া, যারা অতিরিক্ত চুল পড়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যায় আছেন, তাদের
জন্য এটি নিয়মিত ব্যবহার করা সত্যিই কার্যকর হতে পারে।তবে মনে রাখতে হবে,
প্রতিদিন তেল ব্যবহার প্রয়োজন নেই, আর অতিরিক্ত তেল চুলে জমে থাকলে তা উল্টো
স্ক্যাল্পে সমস্যা করতে পারে। তাই পরিমিত, নিয়মিত এবং ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করে
ব্যবহার করলেই জয়তুন তেলের পূর্ণ উপকার পাওয়া যায়।
বাচ্চাদের খাবারে জয়তুন তেল মেশানোর নিরাপদ নিয়ম
বাচ্চাদের খাবারে জয়তুন তেল মেশানো অনেকটাই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হতে পারে, তবে
এতে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলা দরকার। অনেক মা-বাবা ভাবেন সবকিছুতে অলিভ অয়েল
দিলেই বুঝি শরীর ভালো থাকবে, কিন্তু ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিছুই ভালো
নয়। সাধারণত শিশুর বয়স ৬ মাসের পরে যখন সে সলিড খাবার খেতে শুরু করে, তখনই অল্প
করে জয়তুন তেল দেওয়া যায় - তবে সেটা যেন হয়
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
এবং একেবারে স্বল্প পরিমাণে।
শুরুতে মাত্র ১/৪ চা চামচ অর্থাৎ এক-দু’ফোঁটা খাবারে মিশিয়ে দেখা উচিত, বাচ্চার
হজম ঠিক আছে কি না।জয়তুন তেল মূলত বাচ্চার হজমে সাহায্য করে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
এবং ব্রেইন ডেভেলপমেন্টে সহায়তা করে। mashed আলু, সেদ্ধ ডাল বা সবজির খিচুড়ি
জাতীয় খাবারে সামান্য মিশিয়ে দিলে সেটা শুধু খাবারকে আরও পুষ্টিকর করে তোলে না,
বরং খাবারের স্বাদেও একটা হালকা মোলায়েমভাব যোগ হয়, যা বাচ্চারা সহজে পছন্দ
করে।
তবে কখনোই রান্না করা গরম খাবারে সরাসরি তেল ঢেলে দেওয়া ঠিক না - বরং ঠান্ডা হয়ে
এলে মিশিয়ে দেওয়া নিরাপদ।সাবধানতা হিসেবে প্রথমবার দিলে বাচ্চার শরীরে কোনো
অ্যালার্জির লক্ষণ (চুলকানি, বমি, পাতলা পায়খানা) আছে কি না, সেটা খেয়াল রাখতে
হবে। প্রতিদিন না দিয়ে সপ্তাহে ২-৩ দিন যথেষ্ট। এই নিয়মে দিলে জয়তুন তেল
বাচ্চার জন্য একটি নিরাপদ ও কার্যকর পুষ্টি সহায়ক হতে পারে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হার্ট সুস্থ রাখতে অলিভ অয়েলের ভূমিকা
আজকাল আমাদের খাবার তালিকায় যত বেশি প্রক্রিয়াজাত (processed) তেল, তত বেশি
শরীরে জমে অপ্রয়োজনীয় চর্বি আর কোলেস্টেরল। এর থেকে ধীরে ধীরে বাড়ে ওজন,
ক্লান্তি, আর সবচেয়ে ভয়ের বিষয় - হার্টের অসুখ। কিন্তু এসবের মাঝেও কিছু
প্রাকৃতিক উপাদান আছে, যেগুলো ঠিকভাবে ব্যবহার করলে শরীরকে ভালো রাখা যায়, তার
মধ্যে একটি হলো
অলিভ অয়েল বা জয়তুন তেল।
বিশেষ করে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলকে বলা হয় “হৃদয়ের বন্ধু”।এই তেলে থাকে
মনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল
(HDL) বাড়ায়। ফলে হৃদপিণ্ডে চর্বি জমে যাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। যারা নিয়মিত
একটু হাঁটাচলা করে আর দৈনন্দিন রান্নায় বা সালাদে অলিভ অয়েল ব্যবহার করেন,
তাদের ওজনও ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আরো পড়ুনঃকোন কোন ১০টি শাকে ও সবজিতে এলার্জি আছে
তবে এটাও মাথায় রাখা জরুরি - অলিভ অয়েল ক্যালোরি-সমৃদ্ধ, তাই বেশি খেলেই ওজন
বাড়তে পারে। তাই প্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচ যথেষ্ট, তার বেশি নয়।সকালে খালি পেটে
এক চামচ অলিভ অয়েল খাওয়া, অথবা দুপুরের সালাদে কয়েক ফোঁটা মেশানো -এসব ছোট ছোট
অভ্যাস অনেক বড় প্রভাব ফেলে শরীরের ওপর।
আর কেউ যদি সাধারণ ভাজাভুজি বাদ দিয়ে হালকা রান্নায় অলিভ অয়েল ব্যবহার করে,
তাহলে শুধু ওজনই কমবে না, বরং হৃদরোগের ঝুঁকিও অনেকটা কমে যাবে। সবশেষে বলা যায়,
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাবারের মান বদল করাই সবচেয়ে সহজ পথ -আর সেই বদলের এক
চমৎকার অংশ হতে পারে জয়তুন তেল।
রান্নার তেলের বিকল্প হিসেবে নিয়মিত ব্যবহারের পরামর্শ
আমরা সাধারণত প্রতিদিন রান্নায় যে তেল ব্যবহার করি, সেটা নিয়ে খুব একটা ভাবি
না। অথচ রান্নার তেলটাই আমাদের শরীরে ভালো বা খারাপ চর্বি ঢুকিয়ে দেয়। আজকাল
অনেকেই উচ্চ কোলেস্টেরল, ওজন বাড়া, ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি সমস্যায় ভোগেন - এর
পেছনে একটা বড় কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত এবং নিম্নমানের তেলের ব্যবহার।
এ কারণে এখন অনেক চিকিৎসকই পরামর্শ দেন অলিভ অয়েলকে রান্নার তেলের বিকল্প হিসেবে
বেছে নিতে।অলিভ অয়েল, বিশেষ করে “পোমেস অলিভ অয়েল” বা “লাইট অলিভ অয়েল” হালকা
রান্নার জন্য বেশ ভালো। ভাজাভুজির চেয়ে যদি কেউ সেদ্ধ, গ্রিল বা স্টার-ফ্রাই
রান্নায় অভ্যস্ত হন, তাহলে অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করলেই ভালো ফল পাওয়া
যায়।
এতে শরীরে অতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাট ঢোকে না, বরং থাকে উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের জন্য নিরাপদ।তবে অনেকে ভাবেন, অলিভ অয়েল খুব
দামি, প্রতিদিন রান্নায় ব্যবহার করা সম্ভব নয়। কথাটা পুরোপুরি ঠিক না। আপনি
চাইলে অন্য তেলের সঙ্গে অল্প পরিমাণে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন, অথবা সপ্তাহে
২-৩ দিন অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করার অভ্যাস করতে পারেন।
একবারে পুরো বদল না এনে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হলে খরচও খুব বাড়ে না।সবশেষে বলব,
রান্নার স্বাদ যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ সেই রান্না আমাদের শরীরে
কীভাবে প্রভাব ফেলছে। তাই একটু সচেতন হয়ে রান্নার তেলে পরিবর্তন আনলেই ভবিষ্যতে
অনেক বড় সমস্যাকে এড়ানো সম্ভব।
ত্বকের যত্নে জয়তুন তেল
ত্বকের যত্ন বলতে আমরা অনেক সময় বড় বড় কসমেটিক ব্র্যান্ডের কথা ভাবি, কিন্তু
আসলেই কি দরকার এত কেমিকেলের? প্রকৃতির মধ্যেই আছে অনেক উপকারী উপাদান, যার মধ্যে
জয়তুন তেল বা অলিভ অয়েল একটি অন্যতম। আমি নিজেও যখন মুখের ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে
যেতো, তখন অনেক কিছু ব্যবহার করেও ফল পাইনি।
পরে একদিন জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম রাতে হালকা ম্যাসাজ করে ঘুমিয়ে
পড়লাম - পরের দিন সত্যিই ত্বকটা নরম আর কোমল লাগলো।জয়তুন তেলে আছে ভিটামিন E,
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজিং উপাদান, যা ত্বকের গভীরে ঢুকে
কাজ করে। শীতকালে ঠোঁট ফাটা, মুখ টানটান হয়ে যাওয়া বা হাত-পা রুক্ষ হয়ে
যাওয়ার সমস্যায় এটা সত্যিই কাজে দেয়।
রাতে ঘুমানোর আগে এক ফোঁটা অলিভ অয়েল হাতে নিয়ে মুখে, ঠোঁটে বা হাতের ওপর ঘষে
দিলে তা সারা রাত ত্বককে হাইড্রেট রাখে। চাইলে গরম পানিতে চুবানো তোয়ালে মুখে
চেপে ধরলে তেল আরও ভালোভাবে ঢুকে যায়।তবে যাদের ত্বক খুব তৈলাক্ত বা একনেগ্রস্ত,
তাদের ক্ষেত্রে সরাসরি অলিভ অয়েল ব্যবহার একটু সতর্কভাবে করতে হয়। অল্প করে
লাগিয়ে পরীক্ষা করা ভালো।
এছাড়াও, শরীরের ফাটা দাগ (স্ট্রেচ মার্ক), কনুই, গোড়ালি বা নখের আশেপাশেও এটা
বেশ কাজ করে।সব মিলিয়ে বললে, ত্বকের যত্নে জয়তুন তেল হলো একদম সহজ, সাশ্রয়ী,
আর নিরাপদ প্রাকৃতিক সমাধান - শুধু দরকার নিয়মিত ও বুঝে ব্যবহার।
জয়তুন তেল সংরক্ষণের নিয়ম ও সতর্কতা
জয়তুন তেল যেমন উপকারী, তেমনি এটা ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে অনেক দ্রুত গুণাগুণ
হারিয়ে ফেলে। আমি নিজেও আগে ভাবতাম, তেল তো তেলই - বোতলে থাকলেই হবে। কিন্তু পরে
বুঝলাম, জয়তুন তেল সাধারণ তেলের মতো না। এতে থাকা ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
সহজেই বাতাস, আলো আর তাপের সংস্পর্শে নষ্ট হয়ে যায়।
ফলে এটা থেকে আমরা যে উপকার পাওয়ার কথা, সেটা আর ঠিকভাবে কাজ করে না।সঠিকভাবে
সংরক্ষণ করতে হলে প্রথমে খেয়াল রাখতে হয়, তেলের বোতলটা যেন
গাঢ় রঙের কাঁচের হয় - যেমন
হালকা কালো বা সবুজ রঙের। কারণ এই বোতল আলো প্রতিরোধ করে, আর আলো থেকে বাঁচলেই
তেল অনেকদিন ভালো থাকে।
প্লাস্টিকের বোতলে থাকলে সেটা দ্রুত গন্ধ ধরে ফেলে এবং তেলের গুণমান নষ্ট হয়ে
যায়। তেল রাখার জায়গাটাও গুরুত্বপূর্ণ - সরাসরি চুলার পাশে বা সূর্যের আলো পড়ে
এমন জায়গায় রাখলে সেটা উষ্ণতায় খারাপ হয়ে যেতে পারে। বরং শুষ্ক, ঠান্ডা ও
অন্ধকার কেবিনেটে রাখা উচিত।আর একটা জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো তেল
ব্যবহারের পরে বোতল ভালোভাবে বন্ধ করা।
অনেকেই খাওয়ার পর ঢাকনা আলগা করে রাখেন - এতে বাতাস ঢুকে তেল অক্সিডাইজ হয়ে
যায় এবং স্বাদ বা গন্ধ খারাপ হয়। এমনকি, পুরনো তেলের সাথে নতুন তেল মেশানোও ঠিক
না।সতর্কতার সাথে সংরক্ষণ করলে জয়তুন তেল অনেকদিন ভালো থাকে এবং প্রতিবার
ব্যবহারে তার আসল পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। তাই শুধু কিনে রাখলেই হবে না, ঠিকভাবে
যত্নও নিতে হবে।
FAQ/সাধারণ প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃজয়তুন তেল কীভাবে খাওয়া যায়?
উত্তরঃসালাদে, রান্নায় অথবা এক চামচ কাঁচা খাওয়া যায়। এটি স্বাস্থ্যের জন্য
উপকারী।
প্রশ্নঃরন্ধনপ্রণালীতে কোন ধরনের জয়তুন তেল ব্যবহার করা উচিত?
উত্তরঃরান্নার জন্য লাইট বা রিফাইন্ড জয়তুন তেল উপযুক্ত। এক্সট্রা ভার্জিন তেল
সাধারণত কাঁচা খাওয়ার জন্য ভালো।
প্রশ্নঃএক্সট্রা ভার্জিন জয়তুন তেল কী?
উত্তরঃএটি প্রথম চাপানো এবং পরিশোধন না করা বিশুদ্ধ তেল। এতে পুষ্টিগুণ সবচেয়ে
বেশি থাকে।
প্রশ্নঃপ্রতিদিন কতটুকু জয়তুন তেল খাওয়া নিরাপদ?
উত্তরঃপ্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচ নিরাপদ ও উপকারী। অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে।
প্রশ্নঃজয়তুন তেল কি ওজন কমাতে সাহায্য করে?
উত্তরঃহ্যাঁ, এটি উপকারী চর্বি সরবরাহ করে যা হজমে সহায়ক। তবে পরিমিতভাবে খেতে
হবে।
প্রশ্নঃজয়তুন তেল চুলে ব্যবহার করা যায় কি?
উত্তরঃহ্যাঁ, এটি চুলে পুষ্টি জোগায় এবং খুশকি কমায়। সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার
উপকারী।
প্রশ্নঃজয়তুন তেল ত্বকে ব্যবহার করা যায় কি?
উত্তরঃহ্যাঁ, এটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। শুষ্ক ত্বকে লাগালে
উপকার পাওয়া যায়।
প্রশ্নঃতেলে ভাজা খাবারে জয়তুন তেল ব্যবহার করা যায় কি?
উত্তরঃহালকা ফ্রাই করার জন্য উপযুক্ত, তবে ডিপ ফ্রাই না করাই ভালো। উচ্চ তাপে
পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়।
প্রশ্নঃজয়তুন তেল ফ্রিজে রাখা উচিত কি?
উত্তরঃনা, এতে তেল জমে যেতে পারে। ঠান্ডা ও অন্ধকার স্থানে সংরক্ষণ করাই ভালো।
প্রশ্নঃজয়তুন তেলের মেয়াদ কত দিন থাকে?
উত্তরঃসাধারণত ১৮–২৪ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। খোলা হলে ৬ মাসের মধ্যে ব্যবহার করাই
উত্তম।
লেখকের মন্তব্যঃজয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম
জয়তুন তেল ব্যবহারের নিয়ম স্বাস্থ্যসম্মত একটি প্রাকৃতিক তেল, যা খাদ্য ও
রূপচর্চা উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। রান্নায় এক্সট্রা ভার্জিন তেল কাঁচা
অবস্থায় ব্যবহার করলে এর পুষ্টিগুণ অটুট থাকে। এটি হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক এবং
ওজন নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। চুল ও ত্বকের যত্নেও জয়তুন তেল খুবই কার্যকর,
কারণ এতে আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ই। তবে এর ব্যবহার পরিমিত
হওয়াই শ্রেয়, বিশেষ করে রান্নার সময় অতিরিক্ত তাপ এড়ানো উচিত।প্রতিদিনের
জীবনে জয়তুন তেল যুক্ত করলে এটি সুস্থ ও সচেতন জীবনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ
পদক্ষেপ হতে পারে।
প্রিয় পাঠক, আশা করি এই কন্ঠে আপনাদের ভালো লাগবে এবং এই কনটেন্ট এর দ্বারা
আপনারা উপকৃত হতে পারবেন।যদি এই কন্টেন্টের দ্বারা আপনারা উপকৃত হতে পারেন তবে এই
কন্টেন্টটি আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের নিকট শেয়ার করতে পারেন যাতে
তারা এই পড়ে উপকৃত হতে পারে।এছাড়াও প্রতিদিনের আপডেট ও নতুন নতুন তথ্য পেতে
নিয়মিত আমাদের সাইটটি ভিজিট করুন।
ফ্রিলার্নিং আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url