চকলেটের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্ময়কর তথ্য জানুন
চকলেটের উপকারিতা ও অপকারিতা কি বর্তমান সময়ের পরিচিত একটি প্রশ্ন এটা কারণ দেখা যায় প্রতি ২টি বাচ্চার মধ্যে একজনের চকলেট খাওয়ার কারণে সমস্যা হয়েছে।
পেজ সূচিপত্র: চকলেটের উপকারিতা ও অপকারিতা
- চকলেটের উপকারিতা ও অপকারিতা
- কোন ধরনের চকলেট শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী
- চকলেট খেলে মস্তিষ্কে কী প্রভাব পড়ে
- চকলেট ও হৃদরোগ উপকার নাকি ঝুঁকি
- ডার্ক চকলেট বনাম মিল্ক চকলেট কোনটা ভালো
- চকলেট কি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর
- শিশুদের জন্য চকলেট কতটা নিরাপদ
- চকলেট খাওয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রতিকারমূলক পরামর্শ
- প্রশ্নোত্তর পর্ব চকলেটের উপকারিতা ও অপকারিতা
- লেখকের শেষ কথা চকোলেটের উপকারিতা ও অপকারিতা
চকলেটের উপকারিতা ও অপকারিতা
চকলেটের উপকারিতা ও অপকারিতা স্বাস্থ্য সচেতন প্রত্যেকেরই জানা উচিত। চকলেট এমন একটি খাবার সবার কাছেই অনেক প্রিয়। চকলেট বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, যেগুলোর মধ্যে কিছু উপকারী এবং কিছু অপকারী যেমন ডার্ক চকলেট মিল্ক এবং হোয়াইট চকলেট শরীরের জন্য উপকারী। তবে চকলেটের ভালো দিক থাকলেও তার অপকারিতার দিকটাও অনেক বেশি।
আসুন প্রথমে আমরা চকলেটের উপকারিতা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করি -
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: ডার্ক চকলেটে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেটা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে ।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে: ডার্ক চকলেটে কোকো নামক উপাদান রয়েছে যা মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সহায়ক।
- এন্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে: ডার্ক চকলেটে এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়,মিল্ক চকলেটেও ফ্ল্যাভানল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরিরের বিভিন্ন কোষকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল থেকে বাঁচাতে সহায়তা করে।
- মন প্রফুল্ল রাখে: কিছু চকলেট বিশেষ করে ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং এন্ডোর নামক হরমোন নিঃসরণ করতে সাহায্য করে। এই হরমোনগুলো আমাদের ভালো লাগার অনুভতি তৈরি করে যা মনকে ভালো রাখে। মিল্ক চকলেটে থাকা ফেনিলইথাইলামিন (PEA) ও থিওব্রোমিন নামক উপাদান মানসিক শান্তি দেয় এবং মুড ভালো রাখে।
- ডার্ক চকলেটে থাকা ক্যাফেইন মাথা ব্যথা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
- ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক : কিছু গবেষক বলেছেন ডার্ক চকলেট ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা উন্নত করে, যা রক্তে চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
- ত্বকের সুরক্ষা দেয়: ডার্ক চকলেটে যে উপাদান আছে তা ত্বকের জন্য উপকারি। ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং ত্বককে সূর্যের রশ্মি থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
- হোয়ইট চকলেটে থাকে কোকো বাটার নামক উপাদান যা বাহ্যিক প্রয়োগের ফলে ত্বক মসৃণ হয়।
- মিল্ক চকলেটে থাকা দুধ শরীরে ক্যালসিয়াম নামক খনিজ উপাদান সরবরাহ করে। এটি দাঁত ও হাড় গঠনে সাহায্য করে।
- মিল্ক ও হোয়াইট চকলেটে দুধ, চিনি ও চর্বি থাকে যা শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগায়।
চকলেট খাওয়ার উপকারিতার শেষে আমরা এখন আলোচনা করব চকলেটের অপকারিতা কি:
- ওজন বৃদ্ধি করে: চকলেটে চিনি ও চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে, যা অতিরিক্ত গ্রহণ করলে খুব সহজেই ওজন বাড়তে পারে।
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: প্রত্যেকটা চকলেটে চিনির পরিমাণ অতিরিক্ত মাত্রায় থাকে যা রক্তের শর্করা বৃদ্ধি করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটা ঝুঁকিপূর্ণ।
- দাঁতের সমস্যা: চকলেটে থাকা চিনি দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে যেটা দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ক্যাভিটিস, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করে।
- আসক্তি হওয়া: অনেকেই এত বেশি পরিমাণ চকলেট খায় যার ফলে চকলেটের নেশা হয়ে যায়। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের বেলায় এটি ক্ষতিকর। বারবার চকলেট খেতে চাওয়া এবং অতিরিক্ত পরিমানে খাওয়াটাই নেশার মতো।
- পেটের সমস্যা: চকলেট খাওয়ার কারণে কিছু মানুষের বদহজম, গ্যাস্ট্রিক ও পেট ব্যথার মতো বিভিন্ন পেটের সমস্যা দেখা দেয়।
- চর্মরোগ: অতিরিক্ত মাত্রায় চকলেট খেলে কারো কারো ব্রণ বা চর্মরোগ দেখা দেয়।
কোন ধরনের চকলেট শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী
কোন ধরনের চকলেট শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী চকলেট প্রিয় মানুষরা এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর জানার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের চকলেট পাওয়া যায় যেমন মিল্ক চকলেট, ডার্ক চকলেট, হোয়াইট চকলেট ইত্যাদি। তবে সব ধরনের চকলেটই উপকারী নয়, কিছু চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বিভিন্ন গবেষক শরীরের জন্য উপকারী চকলেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ডার্ক চকলেটকে।
ডার্ক চকলেট উপকারিতা:
- ডার্ক চকলেটে প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভানয়েড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এটি রক্তচাপ কমাতে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- ডার্ক চকলেটে ফাইবার এবং অন্যান্য উপাদান রয়েছে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- ডার্ক চকলেটে দুধ ও চিনির পরিমাণ কম থাকে,ফলে ডায়বেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
- ডার্ক চকলেট সেরোটোনিন বৃদ্ধি করে যা দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
- অনেক গবেষণায় দেখা গেছে ডার্ক চকলেটের উপাদানগুলো রক্ত সঞ্চলন স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক।
মিল্ক চকলেটের উপকারিতা :
এতে দুধ এবং চিনির পরিমাণ অনেক বেশি যা শরীরে তাৎক্ষনিক একটা শক্তি দেয়। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত গঠনেও সাহায্য করে। কিন্তু অধিক পরিমানে খেলে এটি ওজন বাড়ায়, দাঁতের ক্ষয় করে এবং ডায়াবেটিসের ঝুকি বাড়ায়। এতে এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমান একেবারে কম থাকে।
হোয়াইট চকলেটের উপকারিতা:
এতে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস থাকে যা হাড় ও দাঁতের গঠনে সাহায্য করে। এটি চিনি ও চর্বিতে ভরপুর। বাহ্যিক ব্যবহারের ফলে এতে থাকা কোকো বাটার ত্বক মসৃণ করতে সাহায্য করে। তবে চিনি ও চর্বির পরিমান কম থাকা এবং ক্যাফেইন না থাকায় এটি স্বাস্থ্যের জন্য অতটা ভালো না।
সব ধরনের চকলেটের মধ্যে ডার্ক চকলেটই শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এটি হৃদরোগ প্রতিরোধ, মানসিক চাপ কমানো, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও ত্বকের যত্নে সহায়ক হতে পারে।
চকলেট খেলে মস্তিষ্কে কী প্রভাব পড়ে
চকলেট খেলে মস্তিষ্কে কী প্রভাব পড়ে এটা সবারই জানা জরুরি কারণ চকলেট ছোট বড় সবার অনেক পছন্দের একটি খাবার। চকলেট খাওয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক কিছু প্রভাব পড়ে। যেমন:
ইতিবাচক দিক:
- মুড ভালো করে: চকলেটে "ফিনাইলইথাইলামিন (PEA)" নামে একটি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কে 'ডোপামিন' নিঃসরণ বাড়িয়ে মানসিক শান্তি দেয় ও মুড ভালো রাখে।
- স্ট্রেস কমায়: ডার্ক চকলেট কর্টিসল নামে স্ট্রেস হরমোনের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে, ফলে মানসিক চাপ কমে যায়।
- স্মৃতিশক্তি উন্নত করে: চকলেটের ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে, মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায়, যা স্মৃতিশক্তি বিকাশিত করতে সাহায্য করে।
- মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ায়: চকলেটে রয়েছে ক্যাফেইন ও থিওব্রোমিন যা হালকা উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে মস্তিষ্ককে সজাগ রাখে ও মনোযোগ স্থির রাখতে সাহায্য করে।
- মাইগ্রেন কমায়: ডার্ক চকলেটে থাকা ক্যাফেইন মাইগ্রনের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
নেতিবাচক প্রভাব:
- অতিরিক্ত ক্যাফেইন সমস্যা করতে পারে: বেশি চকলেট খেলে অতিরিক্ত ক্যাফেইনের কারণে উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে।
- আসক্তি তৈরি হতে পারে: চকলেট খাওয়ার পর মস্তিষ্কে শান্তির মতো অনুভূতি তৈরি হয় যা অনেকের ক্ষেত্রে অভ্যাস বা আসক্তি তৈরি করতে পারে।
মাঝে মাঝে পরিমিত পরিমাণে চকলেট খাওয়া মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। তবে প্রতিদিন অতিরিক্ত খাওয়া এড়ানো উচিত, বিশেষ করে যারা মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা বা মাইগ্রেনে ভোগেন।
চকলেট ও হৃদরোগ: উপকার নাকি ঝুঁকি
চকলেট ও হৃদরোগ উপকার নাকি ঝুঁকি আর্টিকেলের এই অংশে এই বিষয়টি আমরা স্পষ্ট করব। অনেকেই চিন্তা করে চকলেট খেলে কি হৃদরোগ হয়? আবার অনেকেই বলেন চকলেট নাকি হৃদরোগের জন্য ভালো! আসুন সঠিক বিষয়টি জেনে নেই।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর:
ডার্ক চকলেটে অনেক বেশি পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড (Flavonoid) থাকে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মতো কাজ করে। এটি রক্তনালির গঠন ভালো রাখে এবং হৃদরোগের কার্যকারিতা উন্নত করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
সীমিত পরিমাণে ডার্ক চকলেট খেলে রক্তচাপ কিছুটা কমে যেতে পারে। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমায়:
চকলেট শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করে। এটি হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
রক্ত চলাচল উন্নত করে:
ফ্ল্যাভোনয়েড রক্তনালির প্রসারণ ঘটিয়ে রক্ত সঞ্চালন সহজ করে, যা হার্টের চাপ কমায়।
এর থেকে বোঝা যায় চকলেট হৃদরোগের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং কিছুটা উপকারি। এখন আমরা চকলেট খাওয়ার কিছু ঝুঁকি বা অপকারিতা সম্পর্কে কিছু বলি তাহলে বলতে হয় অনেক চকলেটেই অতিরিক্ত চিনি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা ওজন বাড়ায়, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় তাই আমাদের সঠিক চকলেট নির্বাচন করতে হবে মিল্ক চকলেট বা সাদা চকলেট নয় বরং ডার্ক চকলেট। কারন এ ধরনের চকলেটে ডার্ক চকলেটের মতো উপকারী উপাদান কম থাকে অধিকন্তু এতে ক্যালরি বেশি, তাই নিয়মিত খেলে ক্ষতি হতে পারে। আবার অতিরিক্ত খাওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ।
পরিশেষে বলা যায় চকলেট হৃদরোগের জন্য ভালো কি না ক্ষতিকর তা নির্ভর করছে আপনি কোন চকলেটটি গ্রহন করছেন এবং কি পরিমান খাচ্ছেন। যদি আপনি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো চকলেট গ্রহন করেন তাহলে উপকার হবে ঝুঁকির সম্ভাবনা নেই।
আরও পড়ুন: খালি পেটে ডায়াবেটিস মাপার নিয়ম সম্পর্কে অবাক করা তথ্য জানুন
ডার্ক চকলেট বনাম মিল্ক চকলেট কোনটা ভালো
দুই চকলেটের মধ্যে সমন্বয় করতে গেলে আগে আপনাকে জানতে হবে ডার্ক এবং মিল্ক চকলেটের পরিচিতি। নিম্নে এই দুটি জনপ্রিয় চকলেটের পরিচিতি সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো:
ডার্ক চকলেট: ডার্ক চকলেটে কোকো (Coco) এর পরিমাণ বেশি থাকে (সাধারণত ৭০%বা তার বেশি)। এতে চিনি ও দুধ থাকে অনেক কম তাই এরস্বাদ তুলনামূলকভাবে একটু তিতা ও কড়া হয়। এতে এন্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে। চিনি, দুধ ও চর্বির পরিমান যথেষ্ট কম থাকে যা বেশি স্বাস্থ্যকর।
মিল্ক চকলেট: মিল্ক চকলেটে কোকোর পরিমাণ কম থাকে (সাধারণত ২০-৫০%) এবং এতে প্রচুর পরিমাণে চিনি ও দুধ মেশানো হয়। এজন্য এর স্বাদ মিষ্টি ও মোলায়েম হয় যা অনেকেই বেশি পছন্দ করেন। এতে এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমান অনেক কম থাকে। চিনি ও চর্বি বেশি পরিমানে থাকার কারনে কম স্বাস্থ্যকর।
স্বাস্থ্যসচেতনদের জন্য ডার্ক চকলেট অনেক ভালো। কারণ এটি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, মন প্রফুল্ল রাখে। তবে মনে রাখতে হবে পরিমিত পরিমান খাওয়াই এসব উপকার পাওয়ার মূল চাবিকাঠি। ডার্ক চকলেট হোক আর মিল্ক চকলেট, বেশি খেলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
চকলেট কি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর
চকলেট কি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর যাদের ডায়াবেটিসের আশঙ্কা রয়েছে তারা এ বিষয়টি জানতে চান। বর্তমান বাজারে যত প্রকার চকলেট পাওয়া যায় সব চকলেটেই কম বেশি চিনির ব্যবহার হয়। এতোক্ষন আমরা বিভিন্ন ধরনের চকলেটের উপাদান, ক্ষতিকর এবং ভালো দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। এই অংশে আমরা আলোচনা করব চকলেট কি ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ক্ষতিকর নাকি উপকারি সেই সম্পর্কে।
চকলেট মূলত তৈরি হয় কোকো (cocoa), চিনি, দুধ এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট দিয়ে। এসব উপাদানের পরিমাণ চকলেটের প্রকারভেদে ভিন্ন হয়। যেমন:
মিল্ক চকলেট: চিনি ও দুধ বেশি থাকে।
ডার্ক চকলেট: কোকো বেশি, চিনি ও দুধ কম থাকে।
হোয়াইট চকলেট: কোকো না থাকলেও চিনি ও ফ্যাট বেশি থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে চকলেটের প্রভাব :
রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়: চকলেটের মধ্যে রয়েছে চিনি যা দ্রুত রক্তে শোষিত হয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগীর শরীরে গ্লুকোজ লেভেল হঠাৎ বাড়িয়ে দিতে পারে।
ওজন বৃদ্ধি ঘটাতে পারে: বেশিরভাগ চকলেটে ক্যালরি ও ফ্যাট বেশি থাকে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা জরুরি, তাই অতিরিক্ত চকলেট খাওয়া বিপজ্জনক।
ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স বাড়াতে পারে: চিনি ও চর্বি বেশি খেলে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চকলেট এড়িয়ে চলা ভালো। তবে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখলেই ডায়াবেটিস রোগীরাও চকলেট খেতে পারবেন যেমন : শুধুমাত্র ডার্ক চকলেট বেছে নেওয়া, একবারে অল্প খাওয়া, কখনোই বেশি খাওয়া যাবে না এবং চকলেট খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা চেক করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাবার তালিকায় চকলেট ধরলে অন্যান্য মিষ্টি বাদ দিতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চকলেট একেবারে নিষিদ্ধ নয়, তবে খুব সচেতনভাবে খেতে হবে। কেউ যদি চিনি, ইনসুলিন বা ওজন নিয়ে সমস্যা ভোগ করে থাকেন, তাহলে চকলেট সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলাই সবচেয়ে ভালো।
শিশুদের জন্য চকলেট কতটা নিরাপদ
শিশুদের জন্য চকলেট কতটা নিরাপদ এটা প্রচারযোগ্য একটি বিষয়। ছোট থেকে বড় সবাই চকলেট অনেক পছন্দ করে। তবে ছোট বাচ্চারা চকলেট অনেক বেশি ভালোবেসে। তাই আর্টিকেলের এই অংশে আলোচনা করব শিশুদের জন্য চকলেট কতটা নিরাপদ তা নিয়ে।
ইতোমধ্যে আমরা চকলেটের উপাদান নিয়ে আলোচনা করেছি। বেশিরভাগ চকলেটে থাকে কোকো, চিনি, দুধ, চর্বি, কৃত্রিম ফ্লেভার এবং প্রিজারভেটিভস। এসব উপাদান স্বাদের জন্য ভালো হলেও শিশুর শরীরের জন্য সবসময় উপকারের নাও হতে পারে।
শিশুদের জন্য চকলেটের কিছু উপকারিতা:
মুড ভালো রাখা: চকলেটে থাকা কিছু উপাদান (যেমন থিওব্রোমিন ও সেরোটোনিন) শিশুর মেজাজ ভালো করতে সাহায্য করে।
এনার্জি দেয়: চিনি থাকায় দ্রুত শক্তি দেয়, যা খেলাধুলা বা পড়াশোনার জন্য উপকারী হতে পারে (অবশ্যই সীমিত পরিমাণে খেতে দিতে হবে)।
বুদ্ধি ও মনোযোগে সহায়তা: ডার্ক চকলেটে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড শিশুর মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়াতে সাহায্য করে, যা মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারে।
কিছু ক্ষতিকর দিক:
স্থুলতার ঝুঁকি: চকলেটে চিনি ও চর্বি অতিরিক্ত মাত্রায় থাকায় বেশি খেলে শিশুর ওজন বাড়তে পারে, যা ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি করে।
দাঁতের ক্ষতি: চিনিযুক্ত চকলেট দাঁতে ক্যাভিটি বা গর্ত তৈরি করতে পারে, যদি ব্রাশ না করে ফেলে রাখা হয়।
খিদে কমে যায়: চকলেট খেলে শিশু অনেক সময় ভরপেট মনে করে মূল খাবার এড়িয়ে চলে এতে পুষ্টির ঘাটতি হয়।
ক্যাফেইন সমস্যা: কিছু চকলেটে সামান্য পরিমাণ ক্যাফেইন থাকে, যা অতিরিক্ত খাওয়ায় শিশুর ঘুমের সমস্যা বা অতিরিক্ত চঞ্চলতা তৈরি করতে পারে।
কত বছর বয়েসে চকলেট খাওয়া উচিৎ:
১ বছরের নিচে শিশুদের চকলেট একেবারেই না দেওয়াই ভালো, কারণ তাদের পরিপাকতন্ত্র খুবই সংবেদনশীল। ২ বছর বা তার বেশি বয়সে সামান্য পরিমাণে চকলেট দেওয়া যেতে পারে, তবে দুধ ও চিনি কম এমন চকলেট বেছে নিতে হবে।
চকলেট শিশুদের জন্য একেবারে খারাপ নয়, আবার পুরোপুরি নিরাপদও নয়। এটি স্বাদ ও আনন্দের উৎস হতে পারে, যদি আপনি দেন সীমিত পরিমাণে ও সঠিক সময়ে।
চকলেট খাওয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রতিকারমূলক পরামর্শ
চকলেট খাওয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রতিকারমূলক পরামর্শ জেনে সবাইকে জানান।চকলেট এমন এক খাবার, যা ছোট থেকে বড় সবাই কমবেশি পছন্দ করে। মিষ্টি স্বাদ আর মজাদার গন্ধ চকলেটকে করে তোলে আকর্ষণীয়।
এই লেখায় আমরা জানবো চকলেট খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং সেগুলো থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রতিকারমূলক পরামর্শ।
চকলের খাওয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকি
ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতা: চকলেটে থাকে চিনি ও চর্বি যা অতিরিক্ত খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমে ফলে ওজন বাড়ে এবং মোটা হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ডায়াবেটিসের আশঙ্কা: চিনিযুক্ত চকলেট বেশি খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন এমন চললে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতে পারে।
দাঁতের ক্ষয়: চকলেট খাওয়ার পর দাঁত না মাজলে দাঁতের মাঝে চিনি জমে থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে এবং দাঁতে গর্ত বা ব্যথা দেখা দেয়।
চর্মরোগ ও ব্রণ: চকলেটের অতিরিক্ত চর্বি ও চিনি শরীরের হরমোনের ভারসাম্যতায় প্রভাব ফেলে যার ফলে ব্রণ বা চুলকানি দেখা দিতে পারে।
হজমের সমস্যা: বেশি চকলেট খেলে অনেক সময় গ্যাস, অম্বল বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। বিশেষ করে যাদের হজম দুর্বল, তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ।
প্রতিকারমূলক পরামর্শ-
পরিমিত চকলেট খান: চকলেট একেবারে না খেয়ে বরং প্রতিদিন অল্প পরিমাণেই খান (১–২ টুকরোর বেশি নয়)।
ডার্ক চকলেট বেছে নিন: কোকোযুক্ত ডার্ক চকলেটে চিনি কম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি থাকে, যা শরীরের জন্য তুলনামূলক ভালো।
চকলেট খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করুন: বিশেষ করে শিশুদের চকলেট খাওয়ার পরে দাঁত মাজার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
চকলেট খালি পেটে খাবেন না: খাবারের পরে বা বিকেলের নাস্তার সময় খান, খালি পেটে চকলেট খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
সুস্থ বিকল্প বেছে নিন: শিশু ও ডায়াবেটিস রোগীদের চকলেট না দিয়ে ফল, বাদাম বা দইয়ের মতো স্বাস্থ্যকর কিছু নাস্তা হিসেবে দিন।
চকলেট মজার, কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়া বিপদের। যদি আপনি বা আপনার সন্তান চকলেট খেতে ভালোবাসেন, তবে নিয়ম মেনে, পরিমাণ বুঝে খাওয়াই নিরাপদ।
আরও পড়ুন: কলমি শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন
প্রশ্নোত্তর পর্ব: চকলেট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
প্রশ্ন-১: ডার্ক চকলেট কীভাবে হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে?
উত্তর: ডার্ক চকলেটে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড রক্তনালিকে প্রসারিত করে এবং রক্তচাপ কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর।
প্রশ্ন-২: মিল্ক চকলেট ও ডার্ক চকলেটের মধ্যে কোনটিতে চিনি বেশি থাকে?
উত্তর: মিল্ক চকলেটে চিনি বেশি থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে ডায়াবেটিস ও দাঁতের সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন-৩: চকলেট কি শিশুদের জন্য প্রতিদিন খাওয়ানো উচিত?
উত্তর: না, প্রতিদিন নয়। সপ্তাহে ২-৩ বার অল্প পরিমাণে দিলে ভালো, বেশি খেলে দাঁতের ক্ষয় ও ওজন বাড়তে পারে।
প্রশ্ন-৪: চকলেট কি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়?
উত্তর: হ্যাঁ, ডার্ক চকলেটের কোকো উপাদান স্নায়ু উত্তেজক হিসেবে কাজ করে এবং মনোযোগ ও স্মৃতি বাড়াতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন-৫: রাতে চকলেট খেলে ঘুমে সমস্যা হয় কেন?
উত্তর: কিছু চকলেটে থাকা ক্যাফেইন স্নায়ুকে উত্তেজিত করে, যার ফলে ঘুম আসতে দেরি হয় বা ঘুম ভাঙে বারবার।
প্রশ্ন -৬: ওজন কমাতে চাইলে কি চকলেট খাওয়া উচিত?
উত্তর: যদি একদম অল্প পরিমাণে চিনি-কম ডার্ক চকলেট খান, তাহলে মাঝে মাঝে চলতে পারে। তবে ওজন কমানোর সময় চকলেট খাওয়া সীমিত রাখা উচিত।
প্রশ্ন-৭: কোন ধরনের চকলেট দাঁতের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর?
উত্তর: মিল্ক ও হোয়াইট চকলেট দাঁতের জন্য বেশি ক্ষতিকর কারণ এতে চিনি বেশি এবং চটচটে ধরনের, যা দাঁতে লেগে থাকে।
প্রশ্ন-৮: কি পরিমাণ চকলেট খাওয়া নিরাপদ ধরা যায়?
উত্তর: দিনে ২০-৩০ গ্রাম (১-২ টুকরো) ডার্ক চকলেট খাওয়া নিরাপদ, তবে চিনি ও ক্যালরি বিবেচনা করে পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত।
প্রশ্ন-৯: চকলেট খাওয়ার পর শরীরে গ্যাস বা অম্বল হতে পারে কি?
উত্তর: চকলেটে থাকা চর্বি ও কোকো কিছু মানুষের হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে, ফলে অম্বল বা গ্যাস হতে পারে।
প্রশ্ন-১০: নিয়মিত চকলেট খাওয়ার কোনো ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা যায় কি?
উত্তর: হ্যাঁ, চাইলে দুপুরের পরে একটি ডার্ক চকলেট টুকরো খাওয়া যেতে পারে, তবে ব্রাশ করা এবং ক্যালরি হিসাব রাখা জরুরি।
লেখকের শেষ কথা: চকলেটের উপকারিতা ও অপকারিতা
আজকের আর্টিকেলে আমরা জেনেছি চকলেটের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে যা জানা সকলের জন্য খুবই জরুরী। তার সাথে আমরা আলোচনা করেছি ছোট শিশু বাচ্চাদের জন্য চকলেট এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চকলেট নিরাপদ এবং কোন চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
আশা করি আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে চকলেট সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনাদের সামনে স্পষ্ট হয়েছে। তারপরেও এই বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে অবশ্যই আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন।
ফ্রিলার্নিং আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url